×

সাহিত্য

সুরের ঐশ্বর্যে দ্রোহী চেতনার প্রতি ভালোবাসা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ মে ২০২২, ০৮:৪৭ পিএম

সুরের ঐশ্বর্যে দ্রোহী চেতনার প্রতি ভালোবাসা

ছায়ানটের আয়োজনে দুইদিনব্যাপী নজরুল উৎসবের উদ্বোধন

বিদ্রোহের দাবানল হয়ে অগ্নিবীণা হাতে ধূমকেতুর মতো এ দিনটিতেই বাংলার সাহিত্যাকাশে আবির্ভাব ঘটেছিল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের। তার শব্দবারুদ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন আন্দোলন ও সংগ্রামে ভূমিকা রেখে চলেছে। তার ১২৩তম জন্মবার্ষিকীতে ‘বিদ্রোহী কবিতার শতবর্ষ’ শীর্ষক সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নেয়া তিনদিনব্যাপী কর্মসূচি শুরু হয়েছে বুধবার। প্রথম দিনে সকাল থেকে সুর—ঐশ্বর্যের সম্মোহন আর অসাম্প্রদায়িক সাম্যবাদী মানবতার বাণী উচ্চারণের মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সাম্য, প্রেম আর অবিনাশী দ্রোহী চেতনার ধারকের জন্মদিনটি শ্রদ্ধার ফুলে, কথামালায়, কবিতায়, গানে, নাটকের সংলাপে উদযাপন করা হয়েছে।

সকাল সাড়ে ৬টায় কবির সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা অর্পণের মধ্য দিয়ে দিনের আয়োজন শুরু হয়। সন্ধ্যায় নাট্যশালা মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ড. হাকিম আরিফ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে একক সংগীত, সমবেত সংগীত, সমবেত নৃত্য ও আবৃত্তিতে মুখরিত করে তোলেন শিল্পীরা। শুরুতে শারমীন সাথী ইসলামের পরিবেশনায় ‘আমার কালো মেয়ের পায়ের তলায়/ চেয়োনা সুনয়না/আমি গগন গহনে সন্ধ্যাতারা/সৃজন চন্দে আনন্দে’। ছন্দা চক্রবর্তীর ‘সন্ধ্যা গোধলি লগনে/আধো ধরণী আলো’। ঊর্বী সোমের ‘সখি বাদল বাদল ঝুলনিয়া।’ মো. ইয়াকুব আলী খানের ‘বধু তোমার আমার এই যে বিরহ’। শেখ জসীমের ‘আমি গানে গানে ঢাকবো আমার গভীর অভিমান/ মোর প্রিয়া হবে এসো রানী/ তোমারেই আমি চাহিয়াছি প্রিয়’। মো. মফিজুর রহমানের ‘খোল গো আঁখি খোল গো আঁখি/নীলাম্বরি শাড়ি পরি নীল যমুনায়/ ঝর ঝর বারি ঝরে অম্বর ব্যাপিয়া’। বিজন চন্দ্র মিস্ত্রীর ‘সাদা মন চাহে/আমার আপনার চেয়ে/শাওন আসিল ফিরে’। ‘সৃজন ছন্দে আনন্দে’ শিরোনামে একক সংগীত পরিবেশন করেন শোভন মজুমদার, ইয়াসমিন মুশতারী এবং ড. নাশিদ কামাল প্রমুখ।

সরকারি সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ের ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু/ ঝড় ঝঞ্জায়’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের ‘জাগো অমৃত পিয়াস’। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের ‘মোরা ঝঞ্জার মতো উদ্দাম’। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি শিশু সংগীত দলের মনের রং লেগেছে/শুকনো পাতার নুপূর পায়ে এবং বাংলাদেশ নজরুল সংগীত শিল্পী সংস্থার ‘এ কি অপরূপ রূপে মা’ শিরোনামে সমবেত সংগীত পরিবেশনা।

এ ছাড়া এম আর ওয়াসেকের পরিচালনায় ‘আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে’, ফারহানা চৌধুরী বেবী পরিচালনায় ‘বাগিচায় বুলবুলি তুই’, অনিক বোসের পরিচালনায় ‘রুমঝুম রুমাঝুম কে বাজায়’। সোহেল রহমানের পরিচালনায় ‘বেল ফুল এনে দাও চাইনা বকুল’, সালমা বেগম মুন্নির পরিচালনায় ‘আমি পূরবো দেশের পুরো নারী’, মুনমুন আহমেদের পরিচালনায় ‘ঘন মায়াময় স্বপনে’ এবং নৃত্যশিল্পীবৃন্দের পরিবেশনায় ‘বিদ্রোহী’ পরিবেশিত হয়। ‘আমার কৈফিয়ত’ আবৃত্তি পরিবেশন করেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। ‘নূরুলদীনের সারাজীবন’ পরিবেশন করেন শিমুল মুস্তাফা, ‘নারী’ পরিবেশন করেন ঝর্ণা সরকার এবং প্রজ্ঞা লাবনী। সঞ্চালনা করেন দিলরুবা সাথী ও আহসান উল্লাহ তমাল।

ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে কবি নজরুল ইনস্টিটিউট আয়োজনে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি ও উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি কামাল চৌধুরী। নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ জাকীর হোসেনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত সংস্কৃতি সচিব মনিরুল আলম। আলোচনা শেষে সংগীত পরিবেশন করেন নজরুল সংগীত শিল্পী ইয়াকুব আলী খান, ড. লীনা তাপসী খান, মইদুল ইসলাম, রওশন আরা ইসলাম সোমা ও সুমন দাশ। দলীয় সংগীত পরিবেশন করেন নজরুল ইনস্টিটিউটের শিল্পীরা। নৃত্য পরিবেশন করেন মন্দিরা চৌধুরী ও সহশিল্পীরা, মনিরুল ইসলাম ও সহশিল্পীরা। আবৃত্তি পরিবেশন করেন শিমুল মুস্তফা ও সাবিনা ইয়াসমীন সোমা।

সন্ধ্যায় ছায়ানটের আয়োজনে প্রতিষ্ঠানটির রমেশচন্দ্র স্মৃতি মিলন কেন্দ্রে দুইদিনের নজরুল জয়ন্তী উৎসবের উদ্বোধন করা হয়েছে। ছায়ানট শিল্পীদের অংশগ্রহণে ‘এসেছি তব দ্বারে’ সম্মেলক গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এরপর ‘অন্তরে তুমি আছ চিরদিন’ শীর্ষক শিরোনামে একক সংগীত পরিবেশন করেন প্রিয়ংকা গোপ, ইয়াকুব আলী পরিবেশন করেন ‘বহু পথে বৃথা ফিরিয়াছি প্রভু’, অনামিকা সরকার সোমা গেয়ে শোনান ‘শ্যামা নামের লাগল আগুন’, ‘নব কিশলয় রাঙা শয্যা পাতিয়া’ শোনান শুক্লা সরকার, সৈয়দা সানজিদা জোহরা বীথিকা শোনান ‘খোদার প্রেমে শরাব পিয়ে’, ফারহানা আক্তার শার্লি শোনান, ‘কোন কুসুমে তোমায় আমি’। সুরসপ্তকের শিল্পীরা গেয়ে শোনান ‘ও ভাই খাটি সোনার চেয়ে’। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন কৃষ্টি হেফাজ। বাদল বরিষনে শিরোনামে নজরুলের গান ও বষার্ বিষয়ক লেখা নিয়ে বিশেষ সংগীত ও নৃত্যালেখ্য পরিবেশন করা হয়। এতে সংগীত পরিবেশন করেন সাদিয়া আফরিন মল্লিক, ডালিয়া নওশিন, নাহিয়ান দুরদানা সূচি ও ছায়ানট। নৃত্য পরিবেশন করেন শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়, ইরাবালা, সুদেষ্ণা সয়ম্প্রভা ও ছায়ানট শিল্পীরা। এ ছাড়ার প্রকৃতি, লোক অঙ্গের গান, আধুনিক, স্বদেশ এবং উদ্দীপনামূলক গান পরিবেশন করেন বিশিষ্ট শিল্পীরা। আজ শেষ হবে দুইদিনব্যাপী উৎসবের। চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয়েছে ঐক্য.কম.বিডি চ্যানেল আই ‘নজরুল মেলা’। বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেছেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিল্পী সাহিত্যিক, নজরুল বিশেষজ্ঞ ও নজরুল সঙ্গীতশিল্পীবৃন্দ এবং চ্যানেল আইয়ের পরিচালকবৃন্দ। এ বছরের নজরুল মেলায় নজরুল গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য নজরুল ইন্সটিটিউটকে বিশেষ সম্মাননা জানানো হয়েছে। এছাড়া সারাদিন গান, কবিতা, নৃত্যের ঝংকারে কবিকে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হয় ‘নজরুল মেলা’য়। মেলায় অংশ নেয় বিভিন্ন বইয়ের স্টল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App