×

জাতীয়

নজরুল জয়ন্তী আজ: সাহিত্যের আকাশ রাঙিয়েছিলেন তিনি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ মে ২০২২, ০৮:৫০ এএম

বাংলা কবিতায় কাজী নজরুল ইসলামের আবির্ভাব একেবারেই উল্কার মতো। বাংলা সাহিত্যে আর্বিভূত হয়ে সমস্ত আকাশকে কীভাবে রাঙিয়ে গেলেন অথবা উজ্জ্বল করে দিলেন তা নিয়ে এখনো গবেষণা হচ্ছে দেশ-বিদেশে। সংগীত বিশিষ্টজনদের মতে, রবীন্দ্রপরবর্তী নজরুলের গান অনেকটাই ভিন্ন ধরনের নির্মাণ। অধিকাংশ গান সুরপ্রধান। বৈচিত্র্যপূর্ণ সুরের লহরী কাব্যকথাকে তরঙ্গায়িত করে এগিয়ে নিয়ে যায়।

বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তার কবিতা, গান ও সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। তার কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস।

প্রেরণাদায়ী, দ্রোহ ও প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী আজ বুধবার। এবার জাতীয়ভাবে জাতীয় কবি এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অন্যতম এ প্রাণপুরুষের জন্মদিন উদযাপন করা হবে নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত শ্বশুরবাড়ি কুমিল্লার বীরগঞ্জে। উৎসবের উদ্বোধন করবেন প্রধান অতিথি তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের হিসাবে সেটা ছিল ১৮৯৯ সালের ২৪ মে। বাবার নাম কাজী ফকির আহমেদ, মা জাহেদা খাতুন। দরিদ্র পরিবারে জন্মের পর দুঃখ-দারিদ্র্য ছিল তার নিত্যসঙ্গী। তার ডাকনাম ছিল দুখু মিয়া।

অভাবী পরিবারে বেড়ে ওঠা এ প্রতিভা জীবিকার তাগিদে সম্পৃক্ত হয়েছেন নানা পেশায়। লেটো দলের বাদক, রেল গার্ডের খানসামা, রুটির দোকানের শ্রমিক- নানারকম পেশা বেছে নিয়েছিলেন শৈশব ও কৈশোরে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সৈনিক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে পথে নেমেছেন। শাসকের কোপানলে পড়েছেন, কারারুদ্ধ হয়েছেন। করেছেন সাংবাদিকতাও। এই সময়গুলোতেই কালি ও কলমে স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়েছেন তিনি।

১৯৪২ সালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে বাকশক্তি হারান কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে ১৯৭২ সালের ২৪ মে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলা সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নজরুলকে সম্মানসূচক ডি-লিট উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেয়। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারিতে কবিকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। ওই বছরই কবির স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে শুরু করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাঙালির চেতনার কবি কাজী নজরুল ইসলাম। কবি তার একটি গানে লিখেছেন, ‘মসজিদেরই পাশে আমায়, কবর দিও ভাই/যেন গোরের থেকে মুয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই’। কবির এই ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাধিস্থ করা হয়।

কর্মসূচি : রাষ্ট্রীয় আয়োজন ছাড়াও কবির সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা, আলোচনা, সংগীত, নৃত্য, নাটক ও আবৃত্তিসহ নানা আয়োজনে আজ বুধবার কবির জন্মজয়ন্তী উদযাপন করবে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

জন্মজয়ন্তী উদযাপনে বরাবরের মতো এবারও মনোজ্ঞ আয়োজন করবে নজরুল ইনস্টিটিউট, নজরুল একাডেমি, বাংলা একাডেমি ও শিল্পকলা একাডেমি। সরকারি-বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিওস্টেশনগুলো প্রচার করবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। আর জাতীয় দৈনিকগুলোও প্রকাশ করবে বিশেষ ক্রোড়পত্র।

ছায়ানট আজ বুধবার ও আগামীকাল বৃহস্পতিবার ছায়ানট মিলনায়তনে নজরুল-উৎসবের আয়োজন করেছে। প্রতি দিন অনুষ্ঠান আরম্ভ হবে সন্ধ্যা ৭টায়। দুদিনব্যাপী এই উৎসবে পরিবেশিত হবে একক ও সম্মেলক গান, নৃত্য, পাঠ-আবৃত্তি। অনুষ্ঠানে ছায়ানটের শিল্পী ছাড়াও আমন্ত্রিত শিল্পী ও দল অংশ নেবেন। উৎসবটি সবার জন্য উন্মুক্ত। একই সঙ্গে অনুষ্ঠানটি ছায়ানটের ফেসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি দেখা যাবে।

আন্তর্জাতিক নজরুল চর্চা কেন্দ্র বিকাল ৫টায় কাকরাইলের আইডিইবি ভবনের মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। ঐক্য.কম.বিডি চ্যানেল আই ‘নজরুল মেলা’ চ্যানেল আই প্রাঙ্গণ থেকে সরাসরি প্রচার করবে সকাল ১১টা ৫ মিনিটে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App