×

সম্পাদকীয়

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় : ট্রাস্টি ট্রাস্ট ভঙ্গ করা দুঃখজনক

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ মে ২০২২, ০২:২০ এএম

আইন অনুযায়ী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু দেশের অন্যতম শীর্ষ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা এটা মনে করেন না। পদে পদে নিজেরা লাভবান হয়েছেন। কৌশলে লুটতরাজ করেছেন। ডাকাতি করেছেন। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জমি কেনা বাবদ অতিরিক্ত ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে ৪ ট্রাস্টির বিরুদ্ধে। ট্রাস্টি হলেন যাকে ট্রাস্ট করা হয়। একজন ট্রাস্টি হিসেবে যদি সেই ট্রাস্ট ভঙ্গ করেন, তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এই চার আসামি ট্রাস্টের টাকার সদ্ব্যবহার করেননি। তারা নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত ছিলেন। অর্থ আত্মসাতের মামলায় চার ট্রাস্টিকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন হাইকোর্ট। গত রবিবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চ এই আদেশ দেন। এর আগে এই চার ট্রাস্টি আগাম জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করেন। চার ট্রাস্টি হলেন রেহানা রহমান, এম এ কাশেম, মোহাম্মদ শাহজাহান ও বেনজীর আহমেদ। কোনোভাবেই যেন আইনের ফাঁকফোকরে এরা ছাড় না পায়। এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। এর আগে গত ৫ মে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জমি কেনা বাবদ অতিরিক্ত ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। অভিযোগে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য আজিম উদ্দিন ও এম এ কাশেম সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটি লুটেপুটে খাচ্ছে। মূলত এ সিন্ডিকেটের কারণে নর্থ সাউথে অনিয়ম পরিণত হয়েছে নিয়মে। কম মূল্যের জমি বেশি দামে ক্রয়, ডেভেলপার কোম্পানির কাছ থেকে কমিশন নেয়া, শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি থেকে অবৈধভাবে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যের জন্য বিলাসবহুল গাড়ি ক্রয়, লাখ টাকা করে সিটিং অ্যালাউন্স গ্রহণ, অনলাইনে মিটিং করেও সমপরিমাণ অ্যালাউন্স গ্রহণ, নিয়ম ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয় ফান্ডের ৪০৮ কোটি টাকা নিজেদের মালিকানাধীন ব্যাংকে এফডিআর, মঞ্জুরি কমিশনের নির্দেশনা অমান্য করে কয়েকগুণ শিক্ষার্থী ভর্তি ইত্যাদি অভিযোগ রয়েছে। দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আত্মসাতের অর্থ হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধও সংঘটন করেছেন। আইন অনুযায়ী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হবে অবাণিজ্যিকভাবে। আর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় যে ট্রাস্টের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত তার চুক্তিপত্রেও বলা হয়েছে, এ ট্রাস্ট মানবহিতৈষী, দানশীল, জনহিতকর, অরাজনৈতিক, অলাভজনক ও অবাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত হবে। যদিও অভিযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীদের ওপর প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণ টিউশন ফি আরোপ করে বড় অঙ্কের অর্থ লাভ করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। তবে ইউজিসি বলছে, শিক্ষার্থীদের ওপর মোটা অঙ্কের টিউশন ফি আরোপ করে বড় অঙ্কের তহবিল গঠন সম্পূর্ণভাবে অযৌক্তিক। লাগামহীন দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, সিন্ডিকেট ও জঙ্গিবাদে পর্যুদস্ত দেশের অন্যতম শীর্ষ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির হাজার হাজার শিক্ষার্থীর জীবন। অভিযুক্ত প্রত্যেকেই সমাজের প্রভাবশালী এবং ক্ষমতাশালী। তারা যেন বিচারিক প্রক্রিয়ায় কোনো প্রভাব বিস্তার করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি সিন্ডিকেটের বৃত্তে বন্দি হয়ে রয়েছে। কবল থেকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়কে রক্ষার দাবিও আমলে নিতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App