×

জাতীয়

ঝুঁকিমুক্ত নয় বাংলাদেশও!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ মে ২০২২, ০৭:৪৭ এএম

ঝুঁকিমুক্ত নয় বাংলাদেশও!

প্রতীকী ছবি

করোনার আবহের মধ্যে নতুন বিপত্তি ‘মাঙ্কিপক্স’ > সংক্রমণের শঙ্কার চেয়ে গুজব বেশি

কোভিড-১৯ এর দাপট অনেকটাই কমে এসেছে, তবে এরই মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে নতুন ভাইরাস ‘মাঙ্কিপক্স’। বিশ্বের ১৫টি দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এ বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। বিশ্বের এক প্রান্তে একটি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হলে তা ছড়াতে খুব বেশি সময় লাগে না। তাই বাংলাদেশও ঝুঁকিমুক্ত নয়। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন বন্দরকে মাঙ্কিপক্স নিয়ে সতর্ক করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এমন পরিস্থিতিতে সংক্রমণ ছড়ানোর আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে নানা গুজব।

মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়ে দুজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি হয়েছেন- এমন খবর ঘুরে বেরিয়েছে ফেসবুকে। শুধু তাই নয় বলা হচ্ছে, কোভিড টিকা নিলে মাঙ্কিপক্স হতে পারে। ভারতে প্রচলিত কোভিশিল্ড টিকা নিলেও মাঙ্কিপক্স হতে পারে। এমন সব গুজব ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঙ্কিপক্সকে ঘিরে যে বৈশ্বিক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তা অযৌক্তিক নয়। মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ আগেও ছিল। আফ্রিকা অঞ্চলে এটি স্থানীয় একটি ভাইরাস। যেহেতু বিশ্বের কয়েকটি দেশে একযোগে সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হচ্ছে, তাতেই শঙ্কাটা বেড়েছে। তবে করোনা বা অন্য ভাইরাসের তুলনায় এর ছড়িয়ে পড়ার গতি অত প্রবল নয়। মৃত্যুহারও অনেক কম। এ হার ১ শতাংশের কম। ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যেই রোগী সেরে ওঠে। তবে গুজব শুনে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিএসএমএমইউতে মাঙ্কিপক্স রোগী ভর্তির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ ভোরের কাগজকে জানান, এমন কোনো রোগী তার প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়নি। বিষয়টি পুরোপুরি গুজব। উদ্ভূত পরিস্থিতে আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন এবং শিগগিরই একটি সেমিনার করা হবে বলে জানান তিনি।

মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে আমাদের সক্ষমতা কতটা- এ প্রসঙ্গে রোগতত্ত্ব, রোগনির্ণয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, মাঙ্কিপক্স নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। বন্দরগুলোয় সতর্কতার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কারো গায়ে, হাতে, মুখে ফোস্কা পড়লে তা কিন্তু লুকিয়ে রাখা যাবে না। তাপমাত্রা পরীক্ষার ব্যবস্থা আমাদের বন্দরগুলোয় আগে থেকেই আছে। কেউ জ্বরে আক্রান্ত থাকলে তাকে দেখা হবে তিনি করোনায় সংক্রমিত কিনা। যদি না হয় তখন তাকে পরামর্শ দেয়া হবে, তিনি যাতে গায়ে ফোস্কা ওঠে কিনা সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখেন। ফোস্কা পড়লে রোগী নিজে থেকেই চিকিৎসকের কাছে যাবেন। চিকেন পক্সের ক্ষেত্রে যে চিকিৎসা ও সক্ষমতা আমাদের, এক্ষেত্রেও তাই।

আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর ভোরের কাগজকে বলেন, মাঙ্কিপক্স মূলত ইঁদুর বা কাঠবিড়ালিজাতীয় প্রাণীর মাধ্যমে ছড়ায়। এসব প্রাণী যদি আক্রান্ত থাকে, তাদের সংস্পর্শে এলে এবং আক্রান্ত কারোর সরাসরি সংস্পর্শে এলে ভাইরাসটি ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা তেমন হয় না। তাই হাঁচিকাশির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা কম। তাই এটি নিয়ে অনেক বেশি আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

তবে বিশ্বের এক প্রান্তে একটি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হলে তা ছড়াতে সময় লাগে না। তাই যে কোনো জায়গা থেকে যে কোনো সময় এটা চলে আসতে পারে। করোনার সংক্রমণের কারণে আমাদের প্রস্তুতি অনেকটা আছেই। আমরা আমাদের ল্যাবরেটরির জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছি। এর পাশাপাশি আমরা বিশ্বের অত্যাধুনিক যন্ত্রাংশ সংগ্রহের চেষ্টাও হচ্ছে। আমাদের মাস্ক ব্যবহার ও হাত ধোয়ার অভ্যাসটা বজায় রাখতে হবে।

এর আগে মাঙ্কিপক্স প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেছেন, দেশের সব বন্দর কর্তৃপক্ষকে আমরা সতর্ক থাকতে বলেছি। মাঙ্কিপক্স নিয়ে আমাদের এত প্যানিক (আতঙ্ক) হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা ভাইরাসটির সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা সারাবিশ্ব থেকেই তথ্য-উপাত্ত নেব এবং প্রয়োজন অনুযায়ী যা ব্যবস্থা নেয়ার, তা নেব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App