×

জাতীয়

আত্মসমর্পণের পর আবারও কারাগারে সম্রাট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ মে ২০২২, ০২:০৭ পিএম

যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বহিষ্কৃত সভাপতি ক্যাসিনো সম্রাট খ্যাত ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার (২৪ মে) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

এর আগে এদিন বেলা ১০টা ৫০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএসএমইউ) থেকে ঢাকা মহানগর আদালত এলাকায় এসে পৌঁছান সম্রাট।এসময় সম্রাটের হাজার হাজার নেতাকর্মীতে আদালত প্রাঙ্গণ ভরে যায়। সবাই স্লোগান দিতে থাকেন।

পরে ১২টা ৩৪ মিনিটে এজলাস কক্ষে উপস্থিত হন সম্রাট। এসময় সম্রাট তার আইনজীবীদের বলেন, 'আমি সিসিইউ থেকে বন্ড সই করে নিজ ব্যবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সে এসেছি। হাসপাতালে আমি অ্যাম্বুলেন্স চেয়েছিলাম। কিন্তু দেয়নি কর্তৃপক্ষ। যাওয়ার সময় আমাকে একটি অ্যাম্বুলেন্স যেন দেয়া হয় আবেদন কইরেন।'

১২টা ৩৯ মিনিটে বিচারক এজলাসে আসেন। শুনানির প্রথমে সম্রাটের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেন, আসামি সম্রাট অসুস্থ। হাসপাতাল থেকে এসেছেন। তাকে বসার জন্য অনুরোধ করছি। এরপর আইনজীবী সম্রাটের আত্মসমর্পণ আবেদন করা হয়। এরপর আইনজীবী সমাজী জামিন চেয়ে বলেন, আসামি সিসিইউ'তে চিকিৎসারত ছিলেন। এরআগে মানবিক কারণে চিকিৎসার জন্য তাকে জামিন দেয়া হয়। মহামান্য হাইকোর্ট জামিন বাতিল করে দিয়েছেন। তবে তার চিকিৎসার বিষয়টি দেখতে বলেছেন। এছাড়া তিনি এখনও সম্পূর্ণ সুস্থ হতে পারেননি। তাই আবারও মানবিক দিক বিবেচনা করে আসামির জামিন চেয়ে আবেদন করছি।

আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী আরও বলেন, আসামি সিসিইউ থেকে আদালতে আত্মসমর্পণ করে ইতিহাস গড়েছেন। কারণ এমন গুরুতর চিকিৎসা থেকে কেউ বাইরে বের হন না। আসামি হাসপাতাল থেকে আসার সময় চিকিৎসকরা নারাজ ছিলেন। কারণ বাইরে গেলে যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই তারা বন্ড সই করে আসতে বলেন। আসামি বন্ড সই করে আসেন। এসময় ডাক্তারি রিপোর্টে বলা হয়, আসামি হাই রিস্কে আছেন। তবে আসামি আদালতের প্রতি সম্মান রেখে আজ জীবন ঝুঁকি নিয়ে আত্মসমর্পণ করলেন। তাই আমরা সকল নিয়ম কানুন মেনে জামিন নিতে আবেদন করছি। তবে বিচারক যদি কোন কারণে জামিন আবেদনে সন্তুষ্ট না হন তাহলে, আসামি যে সিসিইউ রোগী সে বিষয় বিবেচনা করে তাকে একটি অ্যাম্বুলেন্স দিতে মর্জি হয়।

এদিকে, জামিনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, আসামির জামিন দেয়ায় আইনের ব্যতয় ঘটেছে বলে মহামান্য হাইকোর্ট বলেছেন। তাই আসামির জামিন বাতিল করে দিয়েছেন। এছাড়া আসামি যদি জামিন চান তাহলে নতুন করে জামিনের আবেদন করতে হবে। নতুন করে মেডিকেল রিপোর্ট করতে হবে। এটা দেখে জামিন দিতে হবে। তবে উচ্চ আদালত এ জামিন বাতিল করে দিয়ে যেহেতু ৩০ মে শুনানির দিন ধার্য করেছেন। তাই মহামান্য আদালতের কাছে আবেদন হাইকোর্টের আদেশ বজায় রেখে আসামিকে কারাগারে পাঠানো হোক। হাইকোর্টের আদেশের পর নতুন সিদ্ধান্ত নেন। তাই এমন আদেশ দেয়া হোক যেন উচ্চ আদালতের আদেশ বজায় থাকে।

একটা ২১ মিনিটে উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক ১৫ মিনিট পর আদেশ দিবেন বলে জানান। পরে আদেশে সম্রাটের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এর আগে গত ১১ মে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় সম্রাটের জামিন দেন একই আদালত। এটিসহ সবকটি মামলায় জামিন পাওয়ায় এদিনই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কারামুক্ত হন তিনি। তিন শর্তে তাকে জামিন দেয়া হয়, অসুস্থতা বিবেচনা করে, বিদেশে না যাওয়ার শর্তে এবং প্রতিটি ধার্য তারিখে আদালতে হাজিরা দেয়ার শর্তে। এছাড়া গত ১১ এপ্রিল রমনা থানার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় এবং গত ১০ এপ্রিল অস্ত্র ও অর্থপাচারের মামলাতে জামিন পান সম্রাট।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে সম্রাটকে গ্রেপ্তার করার পর কাকরাইলে তার কার্যালয়ে অভিযান চালায় র‌্যাব। এসময় সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ ও পিস্তল উদ্ধার করা হয়। পরদিন র‌্যাব-১ এর আব্দুল খালেক বাদী হয়ে রমনা থানায় মাদক ও অস্ত্র আইনে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করেন। এছাড়া পরে অর্থপাচার আইনে মামলায় হয়। পরে একই বছরের ১২ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে দুই কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৮৭ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, সম্রাট বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে দুই কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৮৭ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। অভিযোগ আছে তিনি মতিঝিল ও ফকিরাপুল এলাকায় ১৭টি ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং সেগুলোতে লোক বসিয়ে মোটা অঙ্কের কমিশন নিতেন। অনেক সময় ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনো ব্যবসা পরিচালনা করতেন। তিনি অবৈধভাবে উপার্জিত এসব অর্থ দিয়ে ঢাকার গুলশান, ধানমন্ডি ও উত্তরাসহ বিভিন্ন স্থানে একাধিক ফ্ল্যাট, প্লট কিনেছেন ও বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এছাড়া তার সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই ও যুক্তরাষ্ট্রে নামে-বেনামে এক হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। মামলাটির চার্জশিট গত ২২ মার্চ গ্রহণ করেন আদালত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App