×

সারাদেশ

২২ বছরে বিলীন কর্ণফুলীর ৫০০ মিটার এলাকা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ মে ২০২২, ০৮:২৬ এএম

২২ বছরে বিলীন কর্ণফুলীর ৫০০ মিটার এলাকা

হুমকিতে শাহ আমানত সেতু

চট্টগ্রামের লাইফলাইন খ্যাত কর্ণফুলী নদীর প্রায় ৫০০ মিটার এলাকা গত ২২ বছরে বিলীন হয়ে গেছে। উজানের ঢলে শাহ আমানত সেতুর দুই পিলারের নিচ বরাবর কর্ণফুলী নদীর তলদেশ থেকে ক্রমাগত মাটি সরে গিয়ে গভীরতা স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়ছে। এর ফলে ভবিষ্যতে পিলারগুলো দেবে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে শাহ আমানত সেতুও।

‘কর্ণফুলী নদীর তলদেশের গভীরতা ও দখল জরিপ ২০২২’ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার পালিতের নেতৃত্বে এই জরিপ পরিচালিত হয়। সঙ্গে ছিলেন কর্ণফুলী বিশেষজ্ঞ বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলী, মেরিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নোমান আহমদ সিদ্দিকী ও পরিবেশ গবেষক ও সাংবাদিক আলীউর রহমান। ‘চট্টগ্রাম নদী ও খালরক্ষা আন্দোলন’ নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে কর্ণফুলী নদীর তলদেশের বাস্তব পরিস্থিতি ও দখল নিয়ে এই জরিপ চলতি বছরের ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত পরিচালনা করা হয়।

রবিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জরিপ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০০ সালে কর্ণফুলী নদীর প্রস্থ ছিল ৯৩০ দশমিক ৩১ মিটার। কিন্তু বর্তমানে এ নদীর প্রস্থ দাঁড়িয়েছে ৪১০ মিটার। গত ২২ বছরে বিলীন হয়ে গেছে নদীর প্রায় ৫০০ মিটার এলাকা। এছাড়া একপাশে চর ও অন্য পাশে ক্রমেই মাটি সরে যাওয়ায় শাহ আমানত ব্রিজের দক্ষিণ পাশ ধসে যেতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

ম্যানুয়াল ও ফ্যাদোমিটারের মাধ্যমে ভাটার সময় নদীর তলদেশের গভীরতা পরিমাপ করা হয়। এতে দেখা যায়, কর্ণফুলী নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ চর পাথরঘাটা ব্রিজঘাট এলাকায় ২৫ ফুট, মাঝ নদী বরাবর ৩৮ ফুট, উত্তর পাশে ফিরিঙ্গিবাজার ব্রিজঘাট এলাকায় ২৪ ফুট। এই এলাকাটি নিয়মিত ড্রেজিং করায় নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ রয়েছে। কিন্তু এর ঠিক ৫০০ মিটার উজানে চাক্তাই খালের মোহনায় উত্তর পাশে কর্ণফুলীর প্রকৃত সীমানা থেকে তিনশ ফুট নদীর অংশে গভীরতা মাত্র ২ ফুট, মাঝ নদী বরাবর ১৩ দশমিক ৬ ফুট এবং দক্ষিণ পাশে তীরের কাছাকাছি গভীরতা ৪৮ ফুট। তাছাড়া নদীর আরো ৫০০ ফুট উজানে উত্তর পাশে রাজাখালী খালের মোহনায় মাঝ নদীতে গভীরতা মাত্র ৪ ফুট। কিন্তু শাহ আমানত সেতুর তিন নম্বর পিলার বরাবর নদীর গভীরতা ৬০ দশমিক ৯ ফুট।

জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শাহ আমানত সেতুর উত্তরে এক ও দুই নম্বর পিলারের মাঝখানে নদীর গভীরতা মাত্র ৭ দশমিক ৭ ফুট, অথচ সেখানে ২৫ ফুট গভীরতা থাকার কথা। দুই ও তিন নম্বর পিলারের মাঝখানে গভীরতা থাকার কথা ৩৮ ফুট কিন্তু সেখানে চর জেগে উঠেছে। ৩টি পিলারের নিচে নদীর গভীরতা কমেছে। কিন্তু পরের পিলারগুলোর চিত্র ভিন্ন, সেখানে গভীরতা বেড়েছে। সেতুর তিন ও চার নম্বর পিলারের মাঝে গভীরতা ৩৮ ফুট থাকার কথা। কিন্তু সেখানে বর্তমানে গভীরতা রয়েছে ৬৪ দশমিক ৭ ফুট। সেতুর দক্ষিণ তীরে চার ও পাঁচ নম্বর পিলারের মাঝে গভীরতা থাকার কথা ২৮ ফুট। অথচ চার নম্বর পিলারের পাশে নদীর গভীরতা ৭৮ দশমিক ৬ ফুট। সেতুর আশপাশের এলাকা কর্ণফুলী নদীর ফিরিঙ্গিবাজার থেকে শিকলবাহা খালের মুখ পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটারে এটি সবচেয়ে গভীরতম স্থান। জরিপে চার ও পাঁচ নম্বর পিলারের মাঝে নদীর তলদেশে মাটিতে ছোট বড় ফাটল দেখা গেছে। এটি শাহ আমানত সেতুর জন্য উদ্বেগজনক বলে জানিয়েছেন জরিপকারীরা। সেতুর দক্ষিণ পাশে তীরের কাছাকাছি নদীর তলদেশে গভীরতা বেড়ে যাওয়ায় তীরের মাটি ধসে সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

চুয়েটের অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার পালিত বলেন, ‘শাহ আমানত সেতুর চার ও পাঁচ নম্বর পিলার ঝুঁকির মধ্যে আছে। মাটি সরে যাচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে, উত্তর দিক থেকে অর্থাৎ শহরের দিক থেকে নদী ভরাট হয়ে গেছে। চাক্তাই খাল ও রাজাখালী খাল দিয়ে আসা বর্জ্য ও পলি জমে নদী ভরাট হয়ে গেছে। ফলে অদূর ভবিষ্যতে চার ও পাঁচ নম্বর পিলারের ধারণশক্তি ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকবে। পিলার দুটি আস্তে আস্তে দেবে যেতে থাকবে। তিনি আরো বলেন, নদী দ্রুত ড্রেজিং করে পলিথিন ও পলি তুলে ফেলতে হবে। এতে নাব্য বাড়বে। ¯্রােত ডাইভার্ট হয়ে যাবে।

‘কর্ণফুলী নদী ও খালরক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান বলেন, নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রয়োজন। প্রথমত নদীর দুইপাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে গত ২০ বছরে যা ভরাট হয়েছে তা নদীকে ফিরিয়ে দিতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলী বলেন, নদীতে যে হারে পলি জমেছে এবং শহরের আবর্জনা পড়ছে তা রোধ করা না গেলে এক সময় কর্ণফুলী মরা নদীতে পরিণত হবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মেরিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নোমান সিদ্দিকী, অধ্যাপক প্রদীপ কুমার দাশ, অধ্যাপক জনার্দন বণিক, এডভোকেট সেলিম চৌধুরী, এস এম পেয়ার আলী, জাফর আহমদ প্রমুখ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App