বৈধ ও অবৈধ ভেন্ডরদের মাধ্যমে স্ট্যাম্প বিক্রির হোতাসহ গ্রেপ্তার ৪
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১ মে ২০২২, ০২:৩৫ পিএম
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে জালিয়াত চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ছবি: ভোরের কাগজ
প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্র জব্দ করে র্যাব কার্যালয়ে রাখা হয়। ছবি: ভোরের কাগজ
শনিবার র্যাবের মিডিয়া কার্যালয়ে প্রতারক চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন র্যাব-৩ এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। ছবি: ভোরের কাগজ
রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ জাল জুডিশিয়াল ও নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প রেভেনিউ স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি তৈরি চক্রের হোতা ফরমান আলীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
অন্য গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ফরমান আলী সরকারের সহযোগী তুহিন খান (৩২), আশরাফুল ইসলাম (২৪) ও মো. রাসেল (৪০)।
র্যাব সূত্র জানিয়েছে, ঢাকার নিকটবর্তী ও অদূরে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের নজরদারি এড়িয়ে তৈরি হচ্ছে জাল জুডিশিয়াল ও নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প রেভেনিউ স্ট্যাম্প। যা বৈধ ও অবৈধ ভেন্ডরদের মাধ্যমে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে করে সরকার যেমন রাজস্ব হারিয়েছে কোটি টাকার রাজস্ব, তেমনই গত তিন বছরে কয়েক হাজার মানুষ এসব কিনে ভোগান্তিতে পড়ছেন। র্যাব-৩ ও জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) যৌথ অভিযানে রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করা হয়।
[caption id="attachment_350219" align="aligncenter" width="700"] প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্র জব্দ করে র্যাব কার্যালয়ে রাখা হয়। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]জাল জুডিশিয়াল ও নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প রেভেনিউ স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি তৈরি চক্রের হোতাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে শনিবার (২১ মে) রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে র্যাব-৩ এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, র্যাব-৩ ও জাতীয় গোয়েন্দা সস্থা (এনএসআই) গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, এক শ্রেণির অসাধু চক্র দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় অধিক লাভের আশায় জাল জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, রেভেনিউ স্ট্যাম্প, প্রতারণামূলকভাবে সাধারণ জনগণের নিকট বিক্রয় করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২০ মে যৌথভাবে রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
[caption id="attachment_350220" align="aligncenter" width="700"] শনিবার র্যাবের মিডিয়া কার্যালয়ে প্রতারক চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন র্যাব-৩ এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা দীর্ঘদিন ধরে জাল জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, রেভেনিউ স্ট্যাম্প সংগ্রহ করে প্রতারণামূলকভাবে বিক্রয় করে অন্যায়ভাবে লাভবান হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তাদের হেফাজত থেকে উদ্ধারকৃত সবগুলো স্ট্যাম্প সংক্রান্ত কাগজপত্রের বিষয়েও সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি।
তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া জালিয়াতি চক্রের হোতা ফরমান আলী সরকার। তিনি কুড়িগ্রাম সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাসের পর ১৯৯৩ সাল হতে স্ট্যাম্প ভেন্ডরের ব্যবসায় লিপ্ত হন। ফরমান আলীর বিরুদ্ধে আগেও একই অপরাধে ২০১৭ সালে পল্টন থানার মামলা করেছে সিআইডি। ওই মামলায় তিনি কারাভোগ করেছেন। জামিনে বেরিয়ে আবারও একই অপরাধে জড়িয়েছেন। গ্রেপ্তারের সময় তিনি নিজেকে ভেন্ডর হিসেবে পরিচয় দিলেও জব্দ সব স্ট্যাম্প সম্পর্কে সে তার রেজিস্টার পত্রে সঠিক হিসাব দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
গ্রেপ্তারকৃতদের পরিচয়
তুহিন খান শনির আখড়া মাদ্রাসা থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন। তিনি অবৈধ জাল স্ট্যাম্প ভ্রাম্যমান দোকানে মতিঝিলের বিভিন্ন স্থানে আর্থিক লাভের আশায় প্রতারণার মাধ্যমে বিক্রয়ে ফরমান আলী সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন। প্রায় তিন-চার বছর ধরে তারা এই প্রতারণা ও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত।
আশরাফুল ইসলাম লালমনিরহাটের পুটিকাটা সিন্দুরমতি কলেজ হতে এইচএসসি পাস করেন। ইতোমধ্যে তিনি গ্রামীনফোন কোম্পানিতে চাকরি করেছেন। বিগত দুই বছর ধরে ফরমান আলীর সহযোগী হিসেবে কাজ করছিলেন।
রাসেল নেত্রকোনার কোনাপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় হতে এসএসসি পাস করেন। তিনি অবৈধ জাল স্ট্যাম্প ভ্রাম্যমান দোকানে মতিঝিলের বিভিন্ন স্থানে আর্থিক লাভের আশায় প্রতারণার মাধ্যমে বিক্রয় করে আসছিলেন। তিনিও প্রায় তিন-চার বছর ধরে এই প্রতারণা ও জালিয়াতিতে জড়িত। রাসেলের নামে রাজধানীর পল্টন থানায় ২০১২ সালের একটি অস্ত্র আইন ও একটি অপহরণের মামলা রয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিষয়ে র্যাব-৩ এর সিও বলেন, সরকারিভাবে দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন বাংলাদেশ লিমিটেড গাজীপুর হতে সব স্ট্যাম্প সংগ্রহ করার বিধান প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু চক্রটি অবৈধভাবে সকল ধরণের জাল জুডিশিয়াল ও নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প রেভেনিউ স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি স্ট্যাম্প তৈরি, মজুদ ও বিক্রি করে আসছিলেন।
জব্দকৃত স্ট্যাম্পসমূহের কাগজ ও মুদ্রণ সঠিক নয় ও ছিদ্রবিহীন এবং পেছনে আঠালো প্রলেপের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। স্ট্যাম্পের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যযুক্ত নয়।
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব-৩ প্রধান বলেন, গত বৃহস্পতিবার সিআইডির একটি দল তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। আমরা তথ্য পেয়েছি বৈধ ভেন্ডরদের মধ্যে অনেকে বৈধতার সুযোগ নিয়ে আসল স্ট্যাম্পের সঙ্গে নকল বা জাল স্ট্যাম্প বিক্রি করছেন। আমরা গ্রেপ্তাদের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে একটি তালিকা প্রস্তুত করেছি।