×

জাতীয়

বরিশালের আলো রানী সরকারকে নিয়ে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ মে ২০২২, ০৯:৫৬ পিএম

বরিশালের আলো রানী সরকারকে নিয়ে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ

আলো রানি সরকার

বাংলাদেশের ভোটার তালিকায় নাম থাকায়, বনগাঁ দক্ষিণের তৃণমূল প্রার্থী আলোরানি সরকারের নির্বাচনী পিটিশন হাইকোর্টে খারিজের পর পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি উত্তাল হয়ে উঠছে। শুক্রবার সেই মামলা খারিজ করে দিয়ে বিচারপতি বিবেক চৌধুরী বলেছিলেন, বাংলাদেশের ভোটার লিস্টে নাম রয়েছে আলো রানি সরকারের। তাই নিজেকে ভারতীয় বলে দাবি করতে পারেন না তিনি। এই অবস্থায় তৃণমূল নেত্রীর নাগরিকত্বের বর্তমান অবস্থা খতিয়ে দেখে, জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে পদক্ষেপের নির্দেশ দেয় আদালত। তবে নিজেকে এদেশের নাগরিক দাবি করে, এ বিষয়ে ডিভিশন বেঞ্চে যাবেন বলে জানান আলোরানি সরকার। অপরদিকে, এই ঘটনায় তৃণমূলকে নিশানা করেছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কড়া ভাষায় তৃণমূলকে আক্রমণ করে বলেছেন, দেশের সার্বভৌমত্ব, ঐক্য ও সংহতি নষ্টের চেষ্টা করেছে তৃণমূল। তাতেই বিষয়টি নিয়ে সরগরম সেখানকার রাজনীতি।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, কয়েকদিন আগেই কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গ থেকে গ্রেফতার করা হয় বাংলাদেশভিত্তিক এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পিকে হালদারকে। বিরোধীরা প্রায়ই অভিযোগ করে থাকে যে বাংলাদেশ থেকে অপরাধ করে পশ্চিমবাংলায় ঢাকা দেয় তারা। এরই মধ্যে এক তৃণমূল নেত্রীর দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে শোরগোল পড়ে গেল রাজ্য রাজনীতিতে।

পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী দলনেতা ট্যুইটে লিখেছেন, তৃণমূল কংগ্রেস সংবিধানের ২৯-এ ধারার ৫ নম্বর উপ ধারা অনুসারে জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের বিধি লঙ্ঘন করেছে। একজন বিদেশি নাগরিককে নির্বাচিত করার চেষ্টা হয়েছে। ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী তারা দেশের সার্বভৌমত্ব, ঐক্য ও সংহতি নষ্টের চেষ্টা করেছে। এ ধরনের রাজনৈতিক দলের রেজিস্ট্রেশন কী বাতিল করা উচিত নয়? বনগাঁ দক্ষিণের তৃণমূল প্রার্থী আলোরানি সরকারের বাংলাদেশ-নাগরিকত্ব নিয়ে ট্যুইটে তৃণমূলকে খোঁচা দেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি প্রশ্ন তোলেন, শুধু তাই নয়, ওনাকে তৃণমূল কংগ্রেস দলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি নিয়োগ করা হয়। এর পরেও বলবে, যে দল জানত না? কোনো অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তিকে এই রকম গুরু দায়িত্ব দেয়া যায়? এই দলের নিবন্ধীকরণ কেনো বাতিল করা হবে না?

গত ২০২১ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের টিকিটে প্রার্থী হয়েছিলেন আলো রানী সরকার। বিজেপি প্রার্থী স্বপন মজুমদারের কাছে ২ হাজার ৪ ভোটে পরাজিত হন তিনি। এরপরই ওই নির্বাচনী ফলকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যেতেই বিপাকে পড়েন তিনি। এমনকি তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বপন মজুমদার এর বিরুদ্ধেও ইলেকশন পিটিশন দায়ের করেন।

ওই সংক্রান্ত মামলায় শুক্রবার কার্যত কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে পড়ে। আদালতের বিচারপতি বিবেক চৌধুরী আলো রানীর দায়ের করা ইলেকশন পিটিশন খারিজ করে দেন। এমনকি মামলাকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলে। আদালতের পর্যবেক্ষণ তৃণমূল প্রার্থীর দুই দেশের নাগরিকত্ব রয়েছে, তাই মামলাকারী নিজেকে ভারতীয় বলে দাবি করতে পারেন না। আদালতের প্রশ্ন বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয় পত্র নাগরিকত্ব থাকা সত্ত্বেও কিভাবে ভারতীয় প্যান কার্ড পাসপোর্ট আধার কার্ড পেলেন। এই সম্পর্কিত হাইকোর্টের রায়ের কপি জাতীয় নির্বাচন কমিশনে পাঠানোর কথা বলে আদালত। তার ভিত্তিতেই নির্বাচন কমিশন পদক্ষেপ নিতে পারে।

জানা গেছে ১৯৬৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের হুগলীর বৈদ্যবাটিতে তার জন্ম। মাত্র ১১ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়। ১৯৮০ সালে বাংলাদেশের ডাক্তার হরেন্দ্রনাথ সরকারের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। বিয়ের পর পাকাপাকিভাবে তিনি বাংলাদেশের বরিশালের উজিরপুরে থাকতেন। বাংলাদেশের ভোটার তালিকায় তার নাম ওঠে, এমনকি বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র পান আলো রানী। বর্তমানে অবশ্য পশ্চিমবঙ্গের কাঁচরাপাড়ায় বসবাস করেন এই নারী নেত্রী। একুশের নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরও তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পদে নির্বাচিত হন তিনি। কিন্তু চলতি বছরের গোড়ার দিকে পুরসাভার ভোটের রুপি নিয়ে দলের প্রার্থী করার অভিযোগ ওঠায় তাকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

এই বিষয়ে শুক্রবার রাতে আলোরানী সরকার সাংবাদিকদের জানান ১৯৬৯ সালে আমার এখানে জন্ম। আমার বাবা, কাকারা এখানেই থাকেন। তাই কেউ যদি আমাকে বাংলাদেশি বলে, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি এই রায়ের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে আমার প্রতিপক্ষ নির্বাচন কমিশনে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন, অষ্টম শ্রেণির ভুয়া সনদ দেখিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি আদতেও মন্ডলপাড়া স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণী পাশ করেননি। তার ভিত্তিতে আমি মামলা করেছিলাম। কিন্তু আদালত যে রায় দিয়েছে তার বিরুদ্ধে আমি ডিভিশন বেঞ্চে যাচ্ছি। আলো রানীর অভিযোগ, এটি একটি চক্রান্ত। আমরা মমতা ব্যানার্জির সৈনিক, এর শেষ দেখে ছাড়ব। রায় আমার পক্ষেই হবে এবং স্বপন মজুমদারকে ওই স্থান ছেড়ে চলে যেতে হবে। অন্যদিকে এ ব্যাপারে টেলিফোনে স্বপন মজুমদার জানান, ঘটনাটি সত্য। আদালতের তরফে নির্বাচন কমিশনকে বলা হয়েছে আলো রানী সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। আমরা সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App