×

মুক্তচিন্তা

ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণ এবং প্রতিকারে করণীয়

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২২, ১২:৪৬ এএম

আমাদের খাদ্যাভ্যাস এবং রন্ধনশৈলীতে রান্নার তেল খুবই অত্যাবশ্যকীয় একটা উপাদান। রান্নার জন্য মূলত পাম, সয়াবিন এবং সূর্যমুখী, জলপাই তেল থাকলেও বাংলাদেশে সর্বশ্রেণির মানুষ রান্নার জন্য সর্বাধিকভাবে সয়াবিন তেল ব্যবহার করে থাকেন। ভোজ্যতেলের বৃহৎ এই চাহিদা মেটাতে আমরা পুরোপুরি আমদানিনির্ভর। সাধারণত আমাদের দেশ তেল আমদানির জন্য নির্ভর করে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার ওপর। কিন্ত সম্প্রতি উক্ত দেশ দুটিতে অতি খরায় ভোজ্যতেল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে আমাদের। এর মধ্যে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এতদিন বিশ্বব্যাপী উন্নত দেশগুলোর খাদ্যাভ্যাসে সূর্যমুখী, জলপাই তেলের ব্যবহার সর্বাধিক ছিল, যার ৮০ শতাংশ সূর্যমুখী তেল রাশিয়া-ইউক্রেন থেকেই সরবরাহ হতো। সম্প্রতি দেশ দুটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় সেই সূর্যমুখী তেল সরবরাহে ব্যাপকভাবে ব্যাহত হওয়ার ফলে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো বর্তমানে বিকল্প ভোজ্যতেল হিসেবে সয়াবিন তেল ব্যবহার করে চলেছে। যার ফলে বিশ্বব্যাপী সয়াবিন তেলের হঠাৎ এই বাড়তি চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে উৎপাদক দেশগুলো। ভোজ্যতেলের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারেও অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে শুরু করায় চার বছর ধরে দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে। ২০১৯ সালে দেশের বাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম ছিল ১০৪ টাকা। ২০২০ সালে সেটি বেড়ে হয় ১১৩ টাকা, ২০২১ সালে ১৩০ টাকা এবং ২০২২ সালের শুরুতে মাত্রাতিরিক্ত তেলের দাম সাধারণ মানুষের অনুকূলে রাখতে সরকার তেলের ওপর শতকরা ১৫ ভাগ শুল্ক প্রত্যাহার করে দাম নির্ধারণ করে ১৬৮-১৭০ টাকা। বর্তমানে সেই তেল লিটার প্রতি ১৯৮ টাকা ধরে বিক্রি হয়ে থাকলেও বাজারে রয়েছে তেলের সংকট। তেল সংকটের এই সময়ে আমাদের ভোজ্যতেল ভোগের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে, এতে যেমন তেলের মাত্রাতিরিক্ত চাহিদা কমে তেলের বাজার কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পাশাপাশি আমাদের শারীরিক সুস্থতাতেও ভূমিকা রাখবে। কেননা মাত্রাতিরিক্ত সয়াবিন তেল হার্টের জন্য খুব বেশি স্বাস্থ্যকর না। অন্যদিকে সরকারি মনিটরিং ব্যবস্থা আরো জোরদার করতে হবে অন্ততপক্ষে সর্বশেষ যেই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে মানুষ যেন সেই দাম দিয়ে বাজারে স্বাভাবিকভাবে তেল কিনতে পারে। সরকারি নজরদারি বাড়িয়ে আসাধু ব্যবসায়ী কর্তৃক তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরির পরিস্থিতিও মোকাবিলা করতে হবে এবং বর্তমান আমদানিকারকদের পাশাপাশি অন্য ছোট-বড় প্রতিষ্ঠানকেও ভোজ্যতেল আমদানির সুজোগ করে দেয়া যেতে পারে। এর ফলে ভোজ্যতেলের বাজারের শক্ত সিন্ডিকেট দুর্বল হয়ে পড়ে, এতে ভোজ্যতেলের বাজার স্বাভাবিক হতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তেল সংকটের স্থায়ী সমাধানের পূর্ব পর্যন্ত সাময়িক সময়ের জন্য ভোজ্যতেল আমদানিতে পূর্ণাঙ্গ শুল্কমুক্ত আমদানির সুযোগ দেয়া যেতে পারে, যেন ভোজ্যতেলের দাম নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার তুলনামূলক হাতের নাগালে থাকে। অপরদিকে দেশের ধনী শ্রেণির মানুষদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভোজ্যতেল কিনে মজুত করার অনৈতিক চর্চা থেকে বিরত থাকতে হবে। এই ক্রান্তিলগ্নে সর্বশ্রেণির মানুষের ভোজ্যতেল প্রাপ্তির মানবিক দিক বিবেচনা করতে হবে তাদের। সর্বোপরি বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষের সক্রিয় ভূমিকা ও দেশের সর্বশ্রেণির মানুষের কথা বিবেচনা করে সরকারের আমদানিনির্ভর তেল জোগানের অতিদ্রুত বিকল্প চিন্তা করতে হবে, অন্যথায় অধুনা ভবিষ্যতে আরো দুর্ভোগ পোহাতে হবে আমাদের। কোনো জিনিস পুরোপুরি আমদানিনির্ভর হওয়া যে কোনো দেশের জন্যই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। সাধারণ মানুষদেরও তেল ব্যবহারে আরো সতর্ক ও মিতব্যয়িতা অবলম্বন করে আমাদের সবার এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।

অপু দেব নাথ : শিক্ষার্থী, খিলগাঁও মডেল ইউনিভার্সিটি কলেজ। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App