×

মুক্তচিন্তা

পদ্মা সেতু এবং শেখ হাসিনা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২২, ১২:৪৫ এএম

বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন ভিশনারি নেতা যিনি স্বপ্ন দেখতে জানতেন এবং সেই স্বপ্ন পূরণের কলাকৌশল ও সাহস তাঁর ছিল। স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু রাজনীতির মহাকবিতে পরিণত হয়েছিলেন। আর রাজনীতির সেই মহাকবির বড় কন্যা উন্নয়নের রূপকার, অদম্য সাহসী শেখ হাসিনা তার বাবার মতই আত্মবিশ্বাসী আর দূরদর্শিতার পরিচয় দিলেন পদ্মা সেতুর মতো একটি বিশ্ব নজির সৃষ্টি করে। পরতে পরতে শ্বাপদ-সংকুল পথে হাঁটতে হয়েছে তাকে। সেতুর জন্মলগ্নে ষড়যন্ত্রের যে বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল সেটাকে দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করলেন। শেখ হাসিনা প্রমাণ করলেন সদিচ্ছা আর সৎ নিয়ত থাকলে হিমালয়ও জয় করা যায়। হাসিনা যুগে বাংলাদেশের সক্ষমতা কতটুকু তা বিশ্ববাসী আরেকবার জানার সুযোগ পেল। বাংলাদেশ এমন একটি রাষ্ট্র যেটা বারবার তার সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। ১৯৫২, ১৯৫৪, ১৯৬৬, ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৭১ এবং সবশেষ ২০২২ সালে বাংলাদেশ এবং বাঙালির সক্ষমতার প্রমাণ বিশ্ব দেখল। দুর্নীতির কলঙ্ক টিকা লেপন করে সেতুর অগ্রযাত্রাকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করার অপচেষ্টা চলেছিল। প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল পদ্মা সেতুর কাজ। দুর্নীতির মিথ্যা দায়ে বিশ্বব্যাংক তার প্রতিশ্রæতি প্রত্যাহার করে নেয় এবং অন্যন্য দাতাও বিশ্বব্যাংকের পথেই হাঁটতে থাকে। পদ্মা সেতুর ভবিষ্যৎ নিয়ে সৃষ্টি হলো কালো মেঘের ঘনঘটা এবং অনিশ্চিত হয়ে পড়ল পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ। বিশ্বব্যাংক এবং দাতারা মুখ ঘুরিয়ে নিলেও বঙ্গবন্ধুকন্যা তো তা পারেন না। তিনি বাংলাদেশের নেতা, কোটি কোটি মানুষের স্বপ্নসারথী। তাই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার ঘোষণা দিলেন তিনি। সমালোচকরা তখন মুখ ভেংচি টেনে হেসেছিলেন, নানা নেতিবাচক মন্তব্যের ফুলঝুরি তৈরি করেছিলেন। পদ্মা সেতু করা হাসিনার পক্ষে সম্ভব হবে না এমন ঢেঁকুর বিজ্ঞজনের মুখে দেখেছি। বিরোধী জোটতো বরাবরই নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। বিরোধী দল বিরোধিতা করবে এটা না হয় মেনে নিলাম। কিন্তু অনেক বিশেষজ্ঞকে দেখেছি গণমাধ্যমে হতাশার বাণী শোনাতে। যাহোক শেখ হাসিনা সেগুলো শুনেছেন, দেখেছেন তবে কানে তোলেননি। তিনি তার সিদ্ধান্তে অনড় থেকেছেন। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। পদ্মা সেতু দেশকে আরো দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাবে। বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যেতে এই সেতু অনন্য ভূমিকা রাখবে। এই সেতুর সবচেয়ে বড় সুফলভোগী হবে সাধারণ জনগণ। তবে পদ্মা সেতুর টোল নিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যাচ্ছে। অনেকে বলছেন টোলের হার বেশি হওয়ার কারণে যোগাযোগ ব্যয় বেড়ে যাবে আর সেটা বহন করতে হবে জনগণকেই। ইতোমধ্যে টোলের হারের গেজেট দেয়া হয়েছে। অধিক টোলের কারণে পণ্য পরিবহন ব্যয় বেড়ে যেতে পারে। আপাতত এই হার চললেও পরবর্তীতে এটাকে কমিয়ে কিছুটা সমন্বয় করা যেতে পারে। পদ্মা সেতু আমাদের জাতীয় সম্পদ। এটি শুধু দেশেই নয়, সমগ্র বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে পরিণত হবে। এই সেতুকে ঘিরে অপরাজনীতির কোনো সুযোগ আছে বলে মনে করি না। দেশের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত এই সেতুর সঙ্গে প্রতিটি মানুষের অর্থযোগ আছে। মনে রাখতে হবে শেখ হাসিনার মতো নেতৃত্ব না থাকলে হয়তো সেতুটির মুখ আমরা দেখতে পেতাম না। এতবড় একটি অবকাঠামোর জন্য সাহস আর মাস্টার প্ল্যানের প্রয়োজন হয়। আর এই দুটো কাজই শেখ হাসিনা করেছেন সুনিপুণভাবে দক্ষতার সঙ্গে। সমগ্র জাতি আজ সেতুটি খুলে দেয়ার অপেক্ষায় আছে। আমাদের এই জাতীয় সম্পদের নিরাপত্তার বিষয়টিও ভাবতে হবে। সেতুর পিলারে একাধিকবার ফেরি ধাক্কা খেয়েছে, যা মোটেও কাম্য নয়। সেতুর নিচ দিয়ে কোনো জাহাজ চলাচলে অবশ্যই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিশ্বব্যাংক ও দাতা সংস্থার কাছে আমরা মাথা নত করিনি। নিজেদের শির উঁচু রেখেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ বাস্তব এবং মূর্ত। পদ্মা সেতু আমাদের অহংকার, আমাদের অলংকার, আমাদের গর্ব।

মাজহার মান্নান : কবি ও প্রাবন্ধিক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App