চট্টগ্রাম টেস্টে বুধবার (১৮ মে) শ্রীলঙ্কার বোলারদের পাত্তাই দিল না মুশফিকুর রহিম। চতুর্থ দিন সাদা পোশাকে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে পাঁচ হাজার রানের ক্লাবে নিজের নাম তুলেছেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। এমনকি টেস্ট ক্যারিয়ারে অষ্টম সেঞ্চুরির স্বাদ পেয়েছেন তিনি। মুশফিক ২৭১ বলে ৪টি চারের সাহায্যে ১০২ রান করেন। ব্যাট হাতে নিন্দুকদের মোক্ষম জবাব দিল মুশফিক। সম্প্রতি তার ব্যাটিং নিয়ে ক্রিকেট পাড়ায় বেশ গুঞ্জন চলছিল। অনেকে বলেছে মিস্টার ডিপেন্ডেবল ব্যাটিং ভুলে গেছে। আবার অনেকে বলেছে তিনি ব্যাটিং ভুলে গেছে। যাইহোক গুরুত্বপূর্ন সময় নিজের জাত চেনাতে ভুল করেনি মুশফিক। তিনি সমালোচনাকারীদের জবাব আগেই দিতে পারতেন। কিন্তু তা না করে সঠিক সময়ের অপেক্ষায় ছিলেন। মুশফিকের এই অপেক্ষা দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ থেকেই। তবে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে দুই টেস্টের এক ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি করতে সক্ষম হন মুশফিক। এরপর বাকি তিন ইনিংসে কিছু করতে পারেননি মিস্টার ডিপেন্ডেবল।

অবশেষে চট্টগ্রাম টেস্টে প্রমাণ করে দিলেন মুশফিক ফুরিয়ে যায়নি। তাছাড়া এর আগে ২০১৩ সালে সাদা পোশাকে প্রথম ডাবল সঞ্চেুরির কৃতত্বিও গড়েছেন মুশফিক। সেসময় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গলে ২০০ রান করছেলিনে। এরপর ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুর ২১৯ রানে অপরাজতি ছিলেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। যা টেস্টে এখনও বাংলাদশেরে ব্যক্তিগত সবোর্চ্চ রান। এরপর ২০২০ সালে মিপুরে ২০৩ রানের অপরাজতি ইনংিস খেলেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে মুশফিকই এক মাত্র তিনটি ডাবল সেঞ্চুরির মালিক।

এদিকে চট্টগ্রাম টেস্টে তামিমের সুযোগ ছিল বাকি ১৯ রান করে ৫ হাজার ক্লাবের সদস্য হয়ে যাওয়ার। কিন্তু তিনি মাঠে নেমে এই রান করতে ব্যর্থ হন। ফলে আক্ষেপে পুড়ছেন তামিম। চতুর্থ দিন লাঞ্চ বিরতির পর প্রথম বলেই সাজঘরে ফিরেন লিটন। তিনি সেঞ্চুরি থেকে ১২ রান দূরে ছিলেন। ফলে টেস্ট ক্যারিয়ারে তৃতীয় সেঞ্চুরি মিস করেন লিটন। পরের বলেই বোল্ড হন তামিম।

এদিকে সাদা পোশাকে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে পাঁচ হাজার রানের মালিক এখন মুশফিক। মজার বিষয় হলো, তামিমই সুযোগটা করে দিলেন মুশফিককে। কারণ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্ট শুরুর আগে এই দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ৫ হাজার রানের মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তামিম ১৫২ রান দূরে থেকে ইনিংস শুরু করেন। কিন্ত তিনি রিটায়ার্ড হার্ট না হলে সবার আগে ৫ হাজার রান পূর্ণ করতে পারতেন। কিন্তু কব্জির চোটের জন্য তামিমই সুযোগটা করে দিলেন তার সতীর্থ মুশফিককে। ৬৮ রান দূরে থেকে চট্টগ্রাম টেস্ট শুরু করেছিলেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। তিনি বুধবার ৫৩ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামেন। ১৫ রান দূরে থাকা মুশফিক দেখে শুনে ঠান্ডা মাথায় ব্যাট চালিয়ে অভিজাত ৫ হাজারি ক্লাবের সদস্য হয়েছেন। এই রান পূর্ন হবার পর মুশফিককে ড্রেসিং রুম থেকে অভিন্দন জানান টাইগার ওপেনার তামিম।

এর আগে চট্টগ্রামে সকালে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। এরপর সূর্যের দেখা পায় টাইগাররা। তবে উইকেট ভেজা থাকায় নির্ধারিত সময় মাঠে নামতে পারেনি মুমিনুল বাহিনী। চতুর্থ দিন বাংলাদেশ সময় সাড়ে ১০টায় মাঠে নামেন মুশফিক-লিটন। ৭৯ রানে পিছিয়ে থেকে চতুর্থ দিন শুরু করেন তারা দুজন। এদিন তামিমের আগেই প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে পাঁচ হাজার রানের ক্লাবে নিজের নাম তুলেন মুশফিক। বুধবার ১৫ রান তুলেই এই কীর্তি গড়েন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। সাদা পোশাকে মুশফিক এখন ৫হাজার ২৩ রানের মালিক। আর তামিমের ৪৯৮১ রান।

এছাড়া চট্টগ্রামে বুধবার ব্যাট হাতে মাঠে নেমে লিটন চওড়া হন লঙ্কান বোলারদের উপর। তিনি চতুর্থ দিন শুরু করেন ৪ হাঁকিয়ে। এক কথায় বলা যায়, বৃষ্টির পর ব্যাট হাতে জ্বলে ওঠে লিটন। তাছাড়া কব্জিতে ইনজুরি আক্রান্ত তামিম মাঠে নেমে বুধবার কোনো রান তুলতে পারেনি। কিন্তু সুযোগ ছিল বাকি ১৯ রান করে ৫ হাজার ক্লাবের সদস্য হয়ে যাওয়ার।

এর আগে মঙ্গলবার (১৭ মে) দ্বিতীয় সেশনে ৫৮তম ওভারে রমেশ মেন্ডিসের একটি বল মুকাবিলা করতে গিয়ে তামিমের কব্জি ঘুরে যায়। নন-স্ট্রাইক প্রান্তে আসতে গিয়ে পড়ে যাচ্ছিলেন। সে সময় শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাররা এসে টাইগার ওপেনারকে সহায়তা করেন। সঙ্গে সঙ্গে হাত টেনে দিয়ে তামিমকে সারিয়ে তোলার কাজ করেন। পরে তাকে বিসিবির ফিজিও ফিট করার চেষ্টা চালান। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। এই ওপেনার ১৩৩ রান নিয়ে রিটার্ড হার্ট হন। তার দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ভর করেই বড় সংগ্রহের ভিত পায় বাংলাদেশ। তাছাড়া চট্টগ্রামের প্রচণ্ড গরমে ১৫০ ওভারের বেশি ফিল্ডিং করার পর ৫ ঘণ্টা ৯০ মিনিট ব্যাটিং করার প্রভাব পড়েছে তামিমের শরীরে।