দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা এমপিদের নামের আগে ‘সাংসদ’র পরিবর্তে ‘সংসদ সদস্য’ শব্দটি ব্যবহার করবে। বুধবার (১৮ মে) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়ার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে এ বিষয়ে দায়ের করা রিটের শুনানি হয়। শুনানিতে প্রথম আলোর পত্রিকার আইনজীবী ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান আদালতে বলেন, প্রথম আলো এরই মধ্যে সাংসদ শব্দের পরিবর্তে সংসদ শব্দ ব্যবহার শুরু করেছে। এখন থেকে সাংসদ শব্দের পরিবর্তে সংসদ সদস্য পদ ব্যবহার করবে।

শুনানির সময় আদালতে দীর্ঘ দিন ধরে প্রথম আলো কেন সাংসদ শব্দ ব্যবহার করছেন তার লিখিত ব্যাখ্যা দাখিল করতে বলেন। সেইসঙ্গে রিটের আদেশের জন্য আগামী রবিবার দিন ধার্য করেন আদালত। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব।

গত ২৭ এপ্রিল সংসদ সদস্যদের (এমপি) নামের আগে ‘সাংসদ’ শব্দ ব্যবহার না করে ‘সংসদ সদস্য’ ব্যবহারে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকাকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠায় ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টেও আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওছার এবং ব্যারিস্টার মো. মাজেদুল কাদের। সেইসঙ্গে নোটিশে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে পত্রিকাটির সম্পাদক ও প্রকাশকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। । প্রথম আলো পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক, তথ্য ও সম্প্রচার সচিব, আইন সচিব, সংসদ সচিবালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকসহ ১০ জনকে এ নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশ পাওয়ার ৩ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

তখন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব বলেছিলেন, অনুচ্ছেদ ৭ অনুযায়ী সংবিধান বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন। সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে ‘জনগণের অভিপ্রায়ের অভিব্যক্তি স্বরূপ এই সংবিধানের প্রাধান্য অক্ষুন্ন রাখা, ইহার সংরক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান আমাদের পবিত্র কর্তব্য’। অনুচ্ছেদ ২১ অনুযায়ী সংবিধান ও আইন মান্য করা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য।

সাংসদ শব্দটি ব্যবহার করা সংবিধানের চরম লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই শব্দটি ব্যবহার করা বাংলাদেশ সংবিধানের চরম লঙ্ঘন, অবমাননা এবং চরম ধৃষ্টতা ছাড়া কিছু নয়। এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকার কর্তৃক রুলিং জারি করে বলা হয়েছে। ‘সংসদ সদস্য’ একটি সাংবিধানিক পদ এবং ‘সাংসদ’ শব্দ ব্যবহারের সুযোগ নেই। অথচ প্রথম আলো সংবিধান মাননীয় স্পিকারের রুলিং উপেক্ষা করে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বহুদিন যাবত সংবিধান লঙ্ঘন করে আসছে, যা সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ক (১) (খ) অনুযায়ী রাষ্ট্রদ্রোহিতার সর্বোচ্চ দণ্ডনীয় অপরাধ।

এসব বিষয় উল্লেখ করে ‘সাংসদ’ শব্দ ব্যবহার না করে ‘সংসদ সদস্য’ শব্দ ব্যবহারের জন্য প্রথম আলোকে অনুরোধ করা হয়। একই সঙ্গে প্রথম আলোর সম্পাদক এবং প্রকাশককে অসাংবিধানিক শব্দের ব্যবহার এর জন্য জাতির কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনার এবং পাঠকদের উদ্দেশ্যে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।

পরে গত ১৬ মে সংসদ সদস্যদের (এমপি) নামের আগে ‘সাংসদ’ শব্দ ব্যবহার নিষিদ্ধ এবং সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে পত্রিকাটির সম্পাদক ও প্রকাশকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওছার ও ব্যারিস্টার মো. মাজেদুল কাদের রিট দায়ের করেন। প্রথম আলো পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক, তথ্য ও সম্প্রচার সচিব, আইন সচিব, সংসদ সচিবালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকসহ ১০ জনকে রিটে বিবাদী করা হয়।