×

জাতীয়

দেশের অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা: ফখরুল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২২, ০৬:০৪ পিএম

দেশের অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা: ফখরুল

বুধবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও নজরুল ইসলাম খান। ছবি: ভোরের কাগজ

দেশের অর্থনীতিতে এক ধরনের অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, গত ১৩-১৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে চাপে রয়েছে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এক ধরনের অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স আয়ে ঘাটতির কারণে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে। টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে অসহনীয় হয়ে উঠছে জিনিসপত্রের দাম। মনে হচ্ছে, আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও বেসামাল হয়ে উঠবে।

বুধবার (১৮ মে) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।

ফখরুল বলেন, রিজার্ভ নিয়ে আত্মতুষ্টির কিছু নেই। এটি দ্রুত কমে আসছে। গত ৮ মাসে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪২ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে। পরের ২ মাসে এটা আরও ৪ বিলিয়ন ডলার কমে যাবে। এভাবে যদি রপ্তানির তুলনায় আমদানি বাড়তে থাকে এবং সেটা যদি রেমিট্যান্স দিয়ে পূরণ করা না যায় তাহলে অতি দ্রুত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ শেষ হয়ে যাবে। রিজার্ভ শেষের কি ভয়াবহ পরিণতি শ্রীলংকার চলমান পরিস্থিতি তার নিকৃষ্টতম উদাহরণ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে এই মুহূর্তে যে রিজার্ভ রয়েছে, তা দিয়ে মাত্র পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। আমদানি ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। আমদানি যে হারে বেড়েছে, রপ্তানি সে হারে বাড়েনি। আবার প্রবাসী আয়ও কমে গেছে। ফলে প্রতি মাসে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। এ বছরই আমদানি প্রায় ৮২-৮৫ বিলিয়ন ডলারে চলে যাবে, কিন্তু রপ্তানি প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার। এই ৩২-৩৫ বিলিয়ন ডলারের যে বাণিজ্য ঘাটতি সেটা রেমিট্যান্স দিয়ে পূরণ করা সম্ভব হবে না। কাজেই এ বছরই ১০ বিলিয়ন ডলারের একটা ঘাটতি সৃষ্টি হচ্ছে।

এদিকে টাকার মান ধরে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার ছাড়ার সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এতে ডলারের বিপরীতে টাকার মান ৭-৮ টাকা কমে গেছে। ভবিষ্যতে টাকার মান আরও কমতে থাকবে। পত্রিকায় দেখলাম কার্ব মার্কেট প্রতি মার্কিন ডলার ১০৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে। সরকার ৬ দশমিক ২২ শতাংশ মূল্যস্ফীতির কথা বলছে। কিন্তু এটি বাস্তবতার সঙ্গে আদৌ সংগতিপূর্ণ নয়।

তাছাড়া শহরের চেয়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি বেশি। একই সঙ্গে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের চেয়ে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেশি। টিসিবির তথ্যে দেখা যায়, এক বছরে পাম অয়েলের দাম ৬১ শতাংশ বেড়েছে। আটা-ময়দার দাম বেড়েছে ৫৮ শতাংশ, সয়াবিন তেল ৫৬ শতাংশ, মসুর ডালের দাম ৪৭ শতাংশ, অ্যাঙ্কর ৩১ শতাংশ এবং ডিমের দাম বেড়েছে ২৯ শতাংশ। টিসিবির এই তথ্যই বলে দেয় সরকার ঘোষিত মূল্যস্ফীতির এ তথ্য সংগতিপূর্ণ নয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার ১২ শতাংশ। রিজার্ভ বিপজ্জনক লেভেলে চলে আসার কারণে টাকার দামও কমছে। সেক্ষেত্রে অর্থনীতিতেও সব কিছুর দাম বেড়ে যাচ্ছে। ক্রেতা সাধারণের ত্রাহি অবস্থা। তার উপর রয়েছে সরকার দলীয় সিন্ডিকেটের তান্ডব। ইতোমধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বিশেষ করে পাম ও সয়াবিন ওয়েলের দাম অনেক বেড়ে গেছে। বাংলাদেশে এর আগে এত দাম বাড়েনি। ভরা মওসুমে চালের দাম যেখানে সবসময় স্বাভাবিক নিয়মে কমে যায় গত কয়েকদিনে তা অনেক বেড়ে গেছে।

গত মার্চে রপ্তানি আয় হয় ৪৭৬ কোটি ডলার; আর প্রবাসী আয় আসে মাত্র ১৮৬ কোটি ডলার। রপ্তানি ও প্রবাসী আয় মিলিয়ে মার্চে ৬৬২ কোটি ডলারের আয়ের বিপরীতে আমদানি দায় শোধ করতে হয় ৭১৪ কোটি ডলার। তাতে ঘাটতি দাঁড়ায় ৫২ কোটি ডলার। আমদানি খরচ ও অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। এ কারণে সাম্প্রতিক সময়ে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি শুরু করেছে সরকার।

এখন পর্যন্ত বিক্রি করেছে ৫২০ কোটি ডলার, এতে রিজার্ভ কমে হয়েছে ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার। আমদানি খরচ এভাবে বাড়তে থাকলে রিজার্ভ আরও কমে যাবে। অনিয়ন্ত্রিত ও অস্বাভাবিক ব্যয়বহুল এ সব আমদানির সুযোগ নিয়ে ওভার ইনভয়েসিং এর মাধ্যমে বিপুল অর্থপাচার হচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের চাপ রয়েছে রিজার্ভের হিসাব সঠিক নিয়মে করার। এতে রিজার্ভ কমবে ৭০০ কোটি ডলারের বেশি। এখন রিজার্ভ রয়েছে ৪ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার।

ফখরুল বলেন, আইএমএফের সুপারিশ মোতাবেক সঠিক নিয়মে রিজার্ভ হিসাব করলে বর্তমানে বাংলাদেশের রিজার্ভ দাড়ায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার। তাই বাস্তবিকভাবে আই এম এফ প্রণীত নিয়মে রিজার্ভ হিসাব করা হলে বাংলাদেশের হাতে আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রা রয়েছে মাত্র সাড়ে তিন মাসের। যা একেবারেই এ্যালারমিং।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App