×

জাতীয়

৩ বান্ধবীর পেছনেই পি কে ঢেলেছেন ৭শ’ কোটি টাকা!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২২, ০৮:৩৮ এএম

৩ বান্ধবীর পেছনেই পি কে ঢেলেছেন ৭শ’ কোটি টাকা!

পি কে হালদারের তিন বান্ধবী নাহিদা রুনাই, অবন্তিকা বড়াল ও শুভ্রা রানী ঘোষ

দেশের আর্থিক কেলেঙ্কারির ইতিহাসে আলোচিত নাম প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার। ৪০টির বেশি নাম সর্বস্ব এবং অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন তিনি। একই সঙ্গে ঋণ পাইয়ে দেয়ার নাম করে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আরো প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটিসহ সব মিলিয়ে ১০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়েছেন অর্থ আত্মসাতে পটু এই ব্যক্তি। এসব টাকার বেশির ভাগ অংশই বিদেশে পাচার করেছেন বলে দুদকের কাছে তথ্য আছে। নারীদের ঘনিষ্ঠ হতে সিদ্ধহস্ত এই চিরকুমার শুধু তিন বান্ধবীর পেছনেই সাত থেকে আট’শ কোটি টাকা খরচ করেছেন। ঘনিষ্ঠ তিন প্রেমিকা ছাড়াও তার অন্তত আরো ১৫ প্রেমিকার সন্ধান পাওয়া গেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, পি কে হালদারের ঘনিষ্ঠ তিন প্রেমিকা হলেন- অবন্তিকা বড়াল, নাহিদা রুনাই ও শুভ্রা রানী ঘোষ। দুদকের মামলার পর পি কে হালদার দেশত্যাগে সচেষ্ট হলেও তার ঘনিষ্ঠ তিন বান্ধবী গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। দুদকের রিমান্ডে তিন বান্ধবীর জবানিতে মিলেছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই তিন নারীকে বিলাসী জীবনে আকৃষ্ট করে তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সময় কাটাতেন পি কে। বিনিময়ে তাদের কাউকে ফ্ল্যাট, গাড়ি, দামি উপহার ও অর্থ দিয়েছেন। অসংখ্যবার তাদের নিয়ে গেছেন বিদেশ ভ্রমণে। তার প্রতিষ্ঠানে দিয়েছেন বড় পদের চাকরি। দুদকের তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, যে প্রকারেই হোক, অর্থ লোপাট আর প্রেমিকাদের নিয়ে ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকাই ছিল পি কে হালদারের অন্যমত নেশা। নারীসঙ্গ ছাড়া তিনি বিদেশ যেতেন না।

দুদক সূত্রে জানা যায়- পি কে হালদারের ঘনিষ্ঠ তিন প্রেমিকা ছাড়াও তার আরো প্রেমিকার সন্ধান পাওয়া গেছে। তাদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে সর্বদা তার বিত্তবৈভবের প্রয়োজন ছিল। এর মধ্যে বান্ধবী নাহিদা রুনাইকে ১৫০ কোটি টাকা খরচ করে উপহার দিয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও ফাস ফাইন্যান্স কোম্পানি। অবন্তিকাকে উপহার দিয়েছেন পিপলস লিজিং। আর এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পাচার করেছেন ৩৬ কোটি টাকা। রুনাই চালাতেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও ফাস ফাইন্যান্স লিমিটেড। রুনাইর অসীম ক্ষমতার উৎস ছিল পি কে হালদার। তাই অল্প সময়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি। কয়েক বছরে তার বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৭২ কোটির টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। নাহিদা রুনাইকে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ভাইস প্রেসিডেন্টের পদ দিয়েছিলেন পি কে হালদার। তাকে নিয়ে ভারতে গেছেন ২২ বার। আর সিঙ্গাপুরে গেছেন ২৫ বার। তাকে ২০ কোটি টাকা দেয়ার তথ্যও পেয়েছেন দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তারা।

অন্যদিকে অবন্তিকার কর্তৃত্বে চলত পিপলস লিজিং। তাকে নিয়ে অসংখ্যবার সিঙ্গাপুর-থাইল্যান্ড গেছেন পি কে। অবন্তিকাকে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পাঁচ কোটি টাকায় ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে পি কে হালদারের অর্থপাচারের অভিযোগও রয়েছে। বান্ধবী অনন্দিতাকে রাজধানীর উত্তরায় ৯ তলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করে দিয়েছেন। সুস্মিতা সাহাকে দেয়া হয়েছে একশ কোটি টাকার বেনামি ঋণ। পাপিয়া ব্যানার্জিকে দেয়া হয়েছে তিনশ’ কোটি টাকার বেনামি ঋণ। মমতাজকে দেয়া হয়েছে তিনশ কোটি টাকার বেনামি ঋণ। আর দুর্নীতির আরেক সহযোগী ও বান্ধবী শুভ্রা রানী ঘোষকে অস্তিত্বহীন কোম্পানি ওয়াকামা ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান করেছেন পি কে। ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ৮৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

শিমু রয় নামে তার আরেক ঘনিষ্ঠ নারীর নামে ৬৫ কোটি টাকা সরানো হয়। অবশ্য এ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার জন্য রেপটাইলস ফার্ম নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নামে এ টাকা নেয়া হয়। পূর্ণিমা রানী নামের একজনকে এমটিবি মেরিন লিমিটেড নামক কাগুজে প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে প্রায় ১০০ কোটি টাকা তুলে দেন পিকে হালদার। হলি নামে একজনকে ৭০ কোটি টাকা তুলে দেয়া হয়। আরেক নারী অবনিতার নামে একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ঋণ দেখিয়ে ৮৪ কোটি টাকা তুলে দেন পিকে হালদার। তার বান্ধবী সুপ্তি চৌধুরীর নামেও বিপুল অর্থ সরানো হয়। ঋণের নাম করে শাহনাজ নামে এক নারীকে ৬০ কোটি টাকা, সামিয়া বেগমকেও প্রায় একই পরিমাণ অর্থ দেন পিকে হালদার। অনিন্দিতা মৃধা নামে এক নারীকে উইন্টেল ইন্টারন্যাশনাল নামক ঠিকানাবিহীন কাগুজে প্রতিষ্ঠানকে ৭০ কোটি টাকা কৌশলে তুলে দেন। তার ঘনিষ্ঠ অতশীকে দেন ৮০ কোটি টাকা। পাপিয়া নামক এক নারীকে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের পরিচালক দেখিয়ে আরেকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এফএস থেকে ১২০ কোটি টাকা তুলে দেন। লামিয়া নামে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের এক নারী সহকর্মীকে তিনি ঘুরতে নিয়ে যেতেন। পাঁচ তারকা হোটেলে তাকে নিয়ে আনন্দ-ফূর্তি করতেন পিকে হালদার। সুন্দরী ওই তরুণী দুদকের কাছে জবানবন্দিতে তা স্বীকারও করেছেন। একইভাবে সাজিয়া রহমান নামে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের আরেক সুন্দরী তরুণী সহকর্মীকে বিভিন্ন মদের পার্টিতে নিয়ে যেতেন বলে অনুসন্ধানে জানা যায়।

উল্লেখ্য, নাহিদা রুনাইকে গত বছরের ১৬ মার্চ রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর ১৩ জানুয়ারি নিজ ফ্ল্যাট থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন অবন্তিকা বড়াল। শুভ্রা রানী ঘোষকে গ্রেপ্তার করা হয় গত বছরের ২২ মার্চ। ওই দিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরেছিলেন তিনি। অন্যরা বিভিন্ন উপায়ে গা ঢাকা দেন। কেউ কেউ গোপনে দেশত্যাগ করেন। জানা যায়- ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি পিকে হালদারের মা লীলাবতী হালদারসহ ২৫ ব্যক্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। এছাড়া দুদক থেকে তার অন্যান্য বান্ধবী ও আত্মীয়স্বজনসহ ৮৩ জনের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও তাদের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করে রেখেছে দুদক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App