×

সম্পাদকীয়

সিলেটে বন্যা : মোকাবিলায় সারাদেশে প্রস্তুতি দরকার

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২২, ১২:৩৮ এএম

সিলেটে বন্যা : মোকাবিলায় সারাদেশে প্রস্তুতি দরকার

বাংলাদেশে প্রায় প্রতিবছরই বন্যা হয়। এবারো বন্যার আশঙ্কা করছে পানি, নদী ও আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে এবার বড় আকারের বন্যা হওয়ার আশঙ্কা আছে। এর মধ্যে সিলেটের অন্তত ৫ উপজেলার নিম্নাঞ্চল কয়েক দিনের টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পানিতে ভেসে যাওয়ার খবর আসছে। এতে ফসলি জমির পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থারও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া দেশের উত্তর-পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলে পানি বাড়ছে প্রতি মুহূর্তে। এবার বন্যা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা জানানো হয়েছে বিভিন্ন আবহাওয়া পূর্বাভাসে। এটা আমাদের জন্য শঙ্কার ব্যাপার বৈকি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ও সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ জরুরি। জানা গেছে, গতকাল সিলেটের গোয়াইনঘাট ও কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় বেশিরভাগ এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। গোয়াইনঘাট উপজেলার অন্তত ১০টি ইউনিয়নের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। টানা পাহাড়ি ঢলে সারি-গোয়াইনঘাট রাস্তার বিভিন্ন অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে, ফলে সিলেটের সঙ্গে এক রকম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে গোয়াইনঘাট সদরের। অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে পিয়াইন নদী এবং সারি নদীর পানি উপচে ইতোমধ্যেই পূর্ব জাফলং, আলীরগাঁও, রুস্তমপুর, লেঙ্গুড়া, তোয়াকুল, নন্দীরগাঁও, পশ্চিম জাফলং ও গোয়াইনঘাট সদরের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। বন্ধ হয়ে পড়েছে বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ সড়ক। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে শতাধিক মাছের খামার। দেশের প্রায় সর্বত্র প্রতিদিন কম-বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এদিকে পানি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি শুরু হয়েছে নদীভাঙন। হঠাৎ নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় তা নদীর কূল উপচে চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করছে। এতে ফসলি জমি তলিয়ে যাচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নদী পাড়ের মানুষের মধ্যে শঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। চরাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। সেখানকার ঘরবাড়ি পানির নিচে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট। ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগের লক্ষণ এখনো দেখা না গেলেও অচিরেই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নদী খনন ও শুষ্ক মৌসুমে পরিকল্পিতভাবে সংস্কার কাজ না করাসহ ওয়াপদা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির জন্য তাদের এমন অনাকাক্সিক্ষত দুর্ভোগ বলে মনে করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। বছর বছর ভেঙে যাওয়া নদীতীর রক্ষা বাঁধগুলোর সংস্কার করা কিংবা স্থায়ীভাবে বাঁধের কাজ না করায় তাদের এই চরম খেসারত দিতে হচ্ছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নদ-নদীর পানি উপচে বন্যার পদধ্বনি কেবল নয়, এমন পরিস্থিতি আমাদের জন্য দুর্ভাবনার। সামনে ভয়াবহ বন্যার যে আশঙ্কা করা হচ্ছে তা আমলে নিয়েই সরকারের এখন থেকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যবস্থা নেয়া উচিত। বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এড়ানো আমাদের সাধ্যাধীন নয়। তবে যথাযথ প্রস্তুতি নিলে মানুষের দুর্ভোগ, ক্ষয়ক্ষতি নিশ্চয় নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। নদী ভরাট হওয়ার কারণে যেমন বেড়েছে ভাঙন, তেমনি সামান্য ঢলে দুকূল উপচে আকস্মিক বন্যা ঘটায়। নদ-নদীর নাব্য রক্ষা করে একদিকে যেমন বন্যার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, তেমনি সম্ভব ভাঙন ঠেকানো। আশা করছি, বন্যার্তদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা দেয়ার সংস্থান করবে সরকার। বিশুদ্ধ পানি, ওষুধপত্র এবং চিকিৎসাসেবাও প্রস্তুত রাখা দরকার। সরকার ও প্রশাসন এ বিষয়ে সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে- এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App