×

জাতীয়

নর্থ সাউথে কেলেঙ্কারি: আসামিদের গ্রেপ্তারের নিষেধাজ্ঞার দাবি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২২, ১২:৪৫ পিএম

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক কেলেঙ্কারিতে দুদকের এজাহারভুক্ত আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার দাবিতে মানববন্ধন করেছে আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশন।

মঙ্গলবার (১৭ মে) বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমির সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি তোলা হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, গত ৫ মে ৩০৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই ছয়জন হচ্ছেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য এম এ কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান ও আশালয় হাউজিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন মো. হিলালী। মামলার চার্জশিটভুক্ত এই ছয়জনই ওয়ারেন্টযুক্ত আসামি। বিভিন্ন গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সত্ত্বেও আসামিদের কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন তোলা হয় মানববন্ধনে।

বক্তারা দাবি করেন, অভিযুক্তরা সবাই প্রভাবশালী ও ক্ষমতাশালী ব্যক্তি। তাই তাদের গ্রেপ্তারে এমন গড়িমসি চলছে। কিন্তু এদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় না আনলে এই সিন্ডিকেটের কবল থেকে নর্থ সাউথের মতো একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বাঁচানো সম্ভব হবে না।

মানববন্ধনে আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের উপদেষ্ঠা ড. সুফী সাগর সামস বলেন, মূলত আজিম কাসেম সিন্ডিকেটের কারণেই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় দুর্নীতি-অনিয়ম ও জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। তাই এদের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কিন্তু অভিযুক্তদের ঠিক কী কারণে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না, সেটা আমাদের বোধগম্য নয়।

দুদকের মামলার এজাহারে বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ অনুযায়ী বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ হলেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজ। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেমোরেন্ডাম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়টি অলাভজনক একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় অর্থাৎ সরকারের সুপারিশ কিংবা অনুমোদনকে পাশ কাটিয়ে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের কতিপয় সদস্যের অনুমোদন অথবা সম্মতির মাধ্যমে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ডেভেলপমেন্টের নামে ৯০৯৬ দশমিক ৮৮ ডেসিমেল জমির ক্রয়মূল্য বাবদ ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ ১৩ হাজার ৪৯৭ টাকা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের টাকা আত্মসাতের হীন উদ্দেশ্যে কম দামে জমি কেনা সত্ত্বেও বেশি দাম দেখিয়ে প্রথমে বিক্রেতার নামে টাকা দেন। পরবর্তীতে বিক্রেতার কাছ থেকে নিজেদের লোকের নামে নগদ চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে আবার নিজেদের নামে এফডিআর করে রাখেন এবং পরবর্তীতে আবার নিজেরা ওই এফডিআরের অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাত করেন। এ ধরনের বেআইনি কার্যকলাপ সংঘটিত করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে বিশ্ববিদ্যালয় তথা সরকারী অর্থ আত্মসাৎ করে নিজেরা অন্যায়ভাবে লাভবান হয়েছেন এবং ওই বেআইনি কার্যক্রম করার ক্ষেত্রে প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণপূর্বক কমিশন বা ঘুষের আদানপ্রদান করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেন।

লাগামহীন দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, সিন্ডিকেট আর জঙ্গিবাদে পর্যুদস্ত দেশের অন্যতম শীর্ষ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর জীবন। এত অনিয়মের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার মানও ক্রমেই নিম্নমুখী। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে জঙ্গি সম্পৃক্ততার পুরনো অভিযোগ তারা বারবারই অস্বীকার করে এসেছে। কিন্তু আদতে বিশ্ববিদ্যালয় এখনো জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতার খোলস থেকে বের হতেই পারেনি। ব্লগার ও লেখক রাজীব হায়দারকে ২০১৩ সালে জঙ্গিরা কুপিয়ে হত্যা করে। সেই মামলার সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গি নাফিস ইমতিয়াজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মদদে ১০ বছর পর আবারও ভর্তির সুযোগ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলেও মিডিয়া সরব হওয়ায় আবার তা বাতিল করা হয়। এমন হীন কাজের মাধ্যমে এ বিশ্ববিদ্যালয় কার্যত জঙ্গিবাদকে উৎসাহিত করছে । এদেরকে (অভিযুক্ত ট্রাস্টিদের) এখনই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে ভবিষ্যতে এ ধরণের কর্মকাণ্ড বাড়বে বলে মানববন্ধনে জানানো হয়।

মানববন্ধনে ড. সুফী সাগর সামস ছাড়াও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সংবাদপত্র (গণমাধ্যম) কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান তালুকদার, বাংলাদেশ পরিবেশ ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটির চেয়ারম্যান এম ইব্রাহিম পাটোয়ারি, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফেডারেশনের (বামসাফে) সভাপতি বিদ্যুৎ বিশ্বাস, সাংবাদিক নেতা কালিমুল্লা ইকবালসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবকরা ।

দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও জঙ্গি তৈরির কারখানায় পরিণত হওয়াসহ নানা অভিযোগে বিপর্যন্ত দেশের অন্যতম শীর্ষ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঁচানোর জন্য এই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি জরুরি বলে বক্তারা দাবি করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App