×

সারাদেশ

টানা বর্ষণে প্লাবিত সিলেট নগরী, লাখো মানুষ পানিবন্দী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২২, ০৪:৪০ পিএম

টানা বর্ষণে প্লাবিত সিলেট নগরী, লাখো মানুষ পানিবন্দী

ফাইল ছবি

টানা বর্ষণে প্লাবিত সিলেট নগরী, লাখো মানুষ পানিবন্দী

কয়েকদিনের টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বিপদসীমার ওপর দিয়েই বইছে সিলেটের প্রধান নদীগুলো। সিলেট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমা ছাড়িয়ে মহানগরীর বেশ কিছু এলাকা এখন হাটু পানি। সোমবার (১৬ মে) রাত থেকে টানা বর্ষণের কারণে পানি নামার পরিবর্তে বেড়েছে। একই সঙ্গে থেমে থেমে ঝড় অব্যাহত থাকায় বিঘ্নিত হচ্ছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। রাস্তায় হাটু পানির কারণে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। একবাক্যে সিলেট নগরী এখন এক দুর্ভোগের নগরীতে রুপ নিয়েছে। প্রবীনদের ভাষ্য ১৯৮৮ সালের বন্যার পর এমন অবস্তা হয় নি আর।

মঙ্গলবার (১৭ মে)সকাল ৯ টায় সিলেট পাউবোর সূত্রে জানা যায়- সুরমা নদী সিলেট পয়েন্টে বিপদসীমার দেড় সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর তাই নগরীর ছড়াগুলো থেকে পানি নেমে যাবার পরিবর্তে উল্টে নদীর পানি ছড়া হয়ে ঢুকছে শহরে। আর এতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে নগরীর উপশহর, তেররতন, মেন্দিবাগ, ছড়ার পাড়, সোবহানিঘাট, মাছিমপুর, তালতলা, কালিঘাট, কাজিরবাজার, শেখঘাট, লালাদীঘির পাড়, জামতলাসহ বেশ কিছু এলাকায়। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত গলি ছাড়িয়ে রাজপথে উঠেছে পানি। তলিয়ে গেছে প্রধান প্রধান কয়েকটি সড়ক।

নগরীর লালাদিঘীর পাড় এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ১৯৮৮ সালের পর এমন পানি দেখি নাই। ইবার মনে অয় ছিয়াশির বন্যারেও ছাড়িয়ে যাবে’। কাইয়ুম জানান, ভোর রাত থেকে ঘরের আসবাব পত্র সরিয়ে বাসার ছাদে নিয়ে যেতে হয়েছে। ঘরে হাঁটু পানি, রাস্তায় কোমর পানি তাই বেরিয়ে যাবারও উপায় নেই।শুধু কাইয়ুম নন তার মতো নগরীর অন্তত এক লাখ মানুষ এখন পানিবন্দী।

সকালে নগরীর উপশহর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অভিজাত এই এলাকার প্রধান সড়কেও হাঁটু পানি। পানি ঢুকে পড়েছে আশপাশের দোকানপাট ও এলাকার বাসাবাড়িতেও। পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। উপশহরের বি ব্লকের ব্যবসায়ী আজমল আলী বলেন, ‘দোকানের ভেতরে হাঁটুর ওপরে পানি। কাল রাতেও পানি ছিল না। সকালে এসে দেখি দোকানে পানি ঢুকে সব মালপত্র ভিজে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘প্রতি মিনিটে পানি বাড়ছে। এত দ্রুত পানি বাড়তে আগে দেখিনি। আমাদের বাসার নিচতলা তলিয়ে গেছে। আমরা দোতলায় আশ্রয় নিয়েছি।’

[caption id="attachment_349540" align="alignnone" width="1280"] নগরীর অন্তত এক লাখ মানুষ এখন পানিবন্দী। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

তবে শুধু বাসা বাড়িতে পানি ঢোকাই নয়, এই ভোগান্তির সঙ্গে আছে বিদ্যুত বিভ্রাট ও নজিরবিহিন যানজট। মঙ্গলবার সকাল থেকেই নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড বলছে সোমবার রাতে ঝড়ের কারণে বেশ কিছু জায়গায় সঞ্চালন লাইনের ওপর গাছে ভেঙে পড়ায় কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুত সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। একইসাথে এছাড়াও বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ-২ এর আওতাধীন উপশহর বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে বন্যার পানি প্রবেশ করায় ঐ উপকেন্দ্র হতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকরা দীর্ঘসময় থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছেন না। তবে কখন বিদ্যুত ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে তা বলতে পারছেন না কেউ।

এদিকে প্রধান প্রধান সড়কে পানি উঠায় সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক যানজটের। মঙ্গলবার সকাল থেকেই নগরীর বন্দরবাজার থেকে ধোপাদিঘিরপাড়, নাইওরপুল, সোবানীঘাট, তালতলাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় দীর্ঘসময় ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে যানবাহন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। যানজটে আটকা পড়েছে অনকে রোগীবাহী গাড়িও। এছাড়া জরুরি কাজে বের হওয়া মানুষজন পড়েছেন চরম বেকায়দায়। আর যানজট নিয়ন্ত্রণে হিমসিম খাচ্ছেন ট্রাফিক সদস্যরা।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান জনভোগান্তির কাথা স্বীকার করে বলেন, সিলেট নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নত। দ্রুততম সময়ে পানি নেমে যাবার জন্য সিলেট শহরের সবকটি ছড়া-খাল উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু সুরমার পানি এতটাই বেড়েছে যে ছড়া দিয়ে পানি নামার পরিবর্তে উল্টো ঢুকছে। এমন বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে অবস্থার উন্নতি হবার কোনো সম্ভাবনা দেখছিনা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App