×

সারাদেশ

ছাতকে বন্যার চরম অবনতি, সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২২, ০৪:৪৭ পিএম

ছাতকে বন্যার চরম অবনতি, সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

ছাতকে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে প্রতিষ্ঠানটি। ছবি: ভোরের কাগজ

ছাতকে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের ছাতকের সবত্রই বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে উঁচু জমির শত শত একর বরো ক্ষেত, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,মসজিদ, মন্দির, বীজতলা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সবজি বাগান, মৎস্য খামার ও গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট।

উপজেলার সর্বত্রই বন্যার পানিতে থৈ-থৈ করছে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত এখানে সুরমা, পিয়াইন, চেলা নদী সহ সকল নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ও নদ- নদীর পানি প্রবল বেগে প্রবাহিত হচ্ছে। সাধারণ মানুষের ধারণা এখানে আরো বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। ইতিমধ্যে উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। উপজেলা সদরের সাথে ১৩ টি ইউনিয়নের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শহরের অদুরে ছাতক-সিলেট সড়কের রহমতবাগ এলাকায় তলিয়ে গেছে সড়ক। রাত থেকে সিলেট সহ সারা দেশের সাথে ছাতকের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শহরের অলি-গলিতে বন্যার পানি উঠে গেছে।

ইসলামপুর-দোয়ারাআমবাড়ি, বালিউরা, নরশিংপুর,হায়দরপুর,লামারসুলগঞ্জ,জাউয়া, বড়কাপন, হাদা সড়কসহ অনেক গ্রামের সব সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়ে উপজেলা সদরের সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গ্রামীণ হাট বাজার ছাড়াও ছাতক শহর, নোয়ারাই বাজার, ফকির টিলা, পেপার মিল এলাকার বেশ কয়েকটি বাসা-অফিস ও দোকানে বন্যার পানি ঢুকেছে। বন্যায় প্লাবিত হয়েছে গোবিন্দগঞ্জ নতুন বাজার, দোলারবাজার, ধারণ বাজার, জাউয়াবাজার, আলীগঞ্জ বাজার,পীরপুর বাজার,কপলা বাজার, বুরাইয়া বাজার, জাহিদপুর বাজার, কামারগাঁও বাজার, লাকেশ্বর বাজার, চৌমোহনী বাজার, হাজীর বাজার, ইসলাম বাজার,মাদ্রাসা বাজার ও নিম্নাঞ্চল এলাকার ঘর-বাড়ি। অনেকই দোকান ও বাসাবাড়ির মালামাল সরিয়ে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন। উজানের প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে এখানে সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীতে ব্যাপক হারে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ শহরের সকল চুনশিল্প কারখানা, ক্রাশার মিল বন্ধ। সুরমা নদীতে নৌকা-কার্গো লোডিং আন লোডিং ও বন্ধ হয়ে পড়েছে।

এক সপ্তাহ ধরে শত-শত শ্রমিক এখানে বেকার। একাধারে ভারী বর্ষণের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সুরমা-মেঘনা স্টেশন ২৬৮, সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৮ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত। ফলে নদ-নদীতে সকল নৌ-যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। রাত থেকে খেয়া পারাপার ও বন্ধ হয়ে গেছে। পানি বন্দী হয়ে পড়া মানুষের জন্য ত্রাণ ও ইউনিয়নে-ইউনিয়নে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র খুলে দেয়া হয়েছে।

উপজেলার পৌরসভা সহ উত্তর খুরমা, দক্ষিণখুরমা, সিংচাপইড়, ভাতগাঁও, চরমহল্লা, দোলারবাজার, নোয়ারাই, ইসলামপুর, কালারুকা, গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও, ছাতক সদর ও ছৈলা আফজালাবাদ ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

নোয়ারাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেওয়ান পীর আব্দুল খালিক রাজা জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নে সবজি বাগান, মৎস্য খামার, ঘরবাড়ি ও উঁচু জমির বোরো ফসল বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। শত-শত বসত ঘরে বন্যার পানি ঢুকেছে।

ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুফি আলম সুহেল জানান, বন্যার পানিতে ভেসে গেছে ইউনিয়নের নীচু এলাকার অনেক কাঁচা ঘরবাড়ি। আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন অনেক মানুষ।

পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিল জসিম উদ্দিন সুমেন মঙ্গলবার ওয়ার্ড এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি জানান,বন্যার পানি ঢুকেছে বাসাবাড়িতে। অনেক লোকজন পানিবন্দী হয়ে আশ্রয় খোজাখুজি করছেন। তিনি রেলওয়ের খালি থাকা ৩ বিল্ডিংয়ে মানুষদের আশ্রয় নিতে বলেছেন।

ছাতক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মামুনুর রহমান জানান,দুর্যোগ মোকাবেলায় উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। উপজেলা পরিষদ চত্ত্বর এলাকায় ও অফিসে বন্যার পানি। পরিষদের অধিকাংশ বাসায়ও পানি ঢুকে গেছে। ছাতক সরকারি হাইস্কুলে সাময়িক বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে আরো আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App