×

রাজনীতি

ক্ষমতায় গেলে খালেদা জিয়াই হবেন প্রধানমন্ত্রী: সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২২, ০৮:৪৭ এএম

ক্ষমতায় গেলে খালেদা জিয়াই হবেন প্রধানমন্ত্রী: সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

  • সরকার পতনে আন্দোলনের বিকল্প নেই
  • প্ল্যাটফর্মটা নয়, রাজপথে সরব হওয়াটা বড় কথা
  • পরিবেশ সৃষ্টি হলেই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান

এই সরকারের উপরে আস্থা রাখা এবং তাদের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি যাবে না, এটি আমরা স্পষ্ট করে বলেছি। আন্দোলনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় এবং সরকারের পতন ছাড়া বিকল্প পথ নেই। প্ল্যাটফর্মটা বড় কথা নয়, সরকার পতনের আন্দোলনে রাজপথে সরব হওয়া বড় কথা। এজন্য সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের কথা ভাবছে বিএনপি। ক্ষমতায় গেলে আন্দোলনে যারা একাত্ম হবেন কেবল তাদের নিয়েই হবে গঠিত হবে জাতীয় সরকার। এবং খালেদা জিয়াই সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী হবেন বলে মন্তব্য করে তিনি। ফখরুল বলেন, এখানে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। গত সোমবার দলীয় চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে ভোরের কাগজকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। সাক্ষাৎকারে আগামী নির্বাচন, নির্বাচনী জোট, আন্দোলন, খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন, জামায়াত ইস্যু, জাতীয় সরকারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রুমানা জামান।

ভোরের কাগজ : দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

মির্জা ফখরুল : আওয়ামী লীগ জোর করে ক্ষমতা দখল করে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ক্ষমতায় টিকে আছে। সরকার এবং রাষ্ট্রকে তারা এক করে ফেলছে। সংবিধানের মূল চরিত্রই তারা বদলে দিয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। রাজনৈতিক কোনো স্পেস নেই; মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছে। দেশ পরিচালনায় সরকারের ব্যর্থতায় যে অর্থনেতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে তাতে সাধারণ মানুষের হতাশা বাড়ছে। এমন অবস্থায় আন্দোলনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় এবং সরকারের পতন ছাড়া বিকল্প পথ নেই।

ভোরের কাগজ : আপনার দলের চেয়ারপারসন অসুস্থ অবস্থায় গৃহবন্দি রয়েছেন এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে দেশের বাইরে। এমন অবস্থায় কেমন চলছে দল?

মির্জা ফখরুল : খুবই ভালো চলছে। দল এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সংগঠিত। পুনর্গঠনের মাধ্যমে নতুন নতুন ‘রিক্রুটমেন্ট’ হচ্ছে দলের ভেতরে। দলীয় কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বেড়েছে।

ভোরের কাগজ : সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপিকে আগামী দ্বাদশ নির্বাচনের অংশ নেয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। আপনাদের অবস্থান কী?

মির্জা ফখরুল : এই সরকারের ওপর আস্থা রাখা এবং তাদের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ ২০১৪ সালের নির্বাচনে তারা জনগণের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ একদলীয় ব্যবস্থায় নামিয়েছে। অথচ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তাদেরই ছিল। এ দাবিতে তারা ১৭৩ দিন হরতালও করেছিল। একইভাবে ২০১৮ সালে গণতন্ত্রের বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করে সব দলকে একত্রিত করে বিএনপি সেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তখন শেখ হাসিনা কথা দিয়েছিলেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে সব মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার, নির্যাতন বন্ধ করবেন- অথচ কিছুদিনের মধ্যেই বিএনপির ২৯ জন প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করা হলো, জেল দেয়া হলো। নির্বাচনের ৭ দিন আগে থেকে নতুন মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের নির্বাচনী মাঠ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, নির্বাচনের আগের রাতে সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে আগের রাতেই সিলছাপ্পর মেরে ভোটারদের ভোট দিতে আসতে দিল না। জনগণের সঙ্গে এই ভয়াবহ প্রতারণার অভিজ্ঞতা থেকে ফের তাদের ওপর আস্থা রাখা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষেই সম্ভব নয়। এ কারণেই আমরা খুব স্পষ্ট করে বলেছি- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি যাবে না।

ভোরের কাগজ : নির্বাচন ইস্যুতে আপনাদের সুনির্দিষ্ট দাবিগুলো কী?

মির্জা ফখরুল : আমাদের দাবি, প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে। কারণ সংসদ যদি থেকে যায় তবে- পরবর্তী সংসদ শপথ না নেয়া পর্যন্ত; তাহলে তারা যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে, নির্বাচনে হেরে গেলেও বলতে পারে- না, আমরা হারিনি। একইসঙ্গে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। পাশাপাশি সারাদেশে বিএনপির যে অসংখ্য নেতাকর্মীর নামে মামলা দেয়া হয়েছে তা প্রত্যাহার করতে হবে, সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক একটি পরিবেশে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, নির্বাচন

কমিশনকে সম্পূর্ণ নতুন করে গঠন করতে হবে। এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক চিন্তা করবে।

ভোরের কাগজ : সরকারের একতরফা নির্বাচনের দাবি প্রতিহত করতে কী কী ধরনের পদক্ষেপ নেবেন?

মির্জা ফখরুল : জনগণকে রাস্তায় নামিয়ে এনে তাদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করব। এবং সেই আন্দোলন যাতে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিতে পারে- আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। সব রাজনৈতিক দলকে আমরা একটি দাবিতে এক করছি, যাতে এই সরকারের চলে যাওয়া নিশ্চিত হয়।

ভোরের কাগজ : জনগণ কী রাস্তায় নামবে?

মির্জা ফখরুল : বিএনপির কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি বাড়ছে। রাজপথের আন্দোলনে জনমত তৈরি হয়েছে ইতোমধ্যেই। মানুষ প্রতিবাদ করছে। সাধারণ মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ, বিরক্ত। তাদের সাহস তৈরি হচ্ছে। জনগণকে রাস্তায় নামিয়ে আনার চেষ্টা করছি, নামিয়ে আনতে চাই, সেটাই লক্ষ্য।

ভোরের কাগজ : দাবি আদায়ে আন্দোলনই শেষ সিদ্ধান্ত কী না?

মির্জা ফখরুল : অবশ্যই কঠোর আন্দোলনের বিকল্প ভাবছি না। কারণ, আমরা নিজেদের দাবির কথা বারবারই বলছি; সরকার যদি না শোনে তবে আমরা দাবিগুলো আদায়ের জন্য রাজপথের আন্দোলনে নামব। এক্ষেত্রে রুটিন কর্মসূচির বাইরে ধাপে ধাপে সুনির্দিষ্ট এমন কর্মসূচি আসবে যেখানে জনগণের সম্পূর্ণ সম্পৃক্ততার মধ্যে দিয়ে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হবে।

ভোরের কাগজ : অভিযোগ রয়েছে, বিএনপি জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে মাঠে সক্রিয় থাকতে পারছে না। কী বলবেন?

মির্জা ফখরুল : জনগণের দাবি আদায়ে বিএনপির সবসময় মাঠে ছিল এবং আছে। তবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়া নিয়ে গণঅভ্যুত্থান হয় না। এমন কোনো নজিরও নেই। সবসময়ই বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে রাজনৈতিক ইস্যুতে। সরকার হটাও আন্দোলনের মাধ্যমে।

ভোরের কাগজ : আপনাদের আন্দোলনের ধরনটা কেমন হবে?

মির্জা ফখরুল : আন্দোলন কথাটার অর্থই তো নড়াচড়া করা। কিন্তু জনগণের বিরুদ্ধে যখন কোনো সরকার দাঁড়িয়ে যায় তখন কেবল নড়াচড়া না ভূমিকম্প হয়। সেটা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ফর্মে আসে। কখনো সেটা প্রতিবাদ সমাবেশ, সমাবেশ কিংবা ধর্মঘট অবরোধের মধ্যে দিয়ে আসে। সুতরাং বিএনপির সব প্রস্তুতিই রয়েছে। ভবিষ্যৎ পরিস্থিতিই বলে দেবে কোন ফর্মে সেই আন্দোলন আসবে।

ভোরের কাগজ : সরকারের পক্ষ থেকে প্রায়ই বিএনপির নেতৃত্ব সংকট নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়; আসলেই কি বিএনিপিতে নেতৃত্বের সংকট রয়েছে?

মির্জা ফখরুল : এটা একেবারেই সরকারের নিজস্ব বিশ্লেষণ। বিএনপিকে নিয়ে কথা না বললেও তো তাদের রাজনীতিই টিকবে না। আমরা কখনোই নেতৃত্বের কোনো সংকট অনুভব করিনি। দলীয় চেয়ারপারসন ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যাওয়ার পর থেকে তিনি দলের কার্যক্রমে নেই, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিদেশে। কই এখনো তো কোথাও কিছু আটকায়নি। বরং বিএনপি দিনে দিনে আরো শক্তিশালী হচ্ছে; তাহলে বিএনপির নেতৃত্বের অভাবটা কোথায়? আমাদের নেতা খালেদা জিয়া এবং তার অবর্তমানে এখন দায়িত্ব পালন করছেন তারেক রহমান। তারেক রহমান-জিয়া পরিবারের নেতৃত্বেই বিএনপি। এই ইস্যুতে পার্টিতে কোনো বিভেদ নেই। কেউ কোনো দ্বিধায়ও নেই।

ভোরের কাগজ : আপনারা অনেক দিন বৃহত্তর ঐক্যে ডাক দিয়ে আসছেন। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে এখানো কিছুই করেননি। কতদূর এগিয়েছে ঐক্য প্রক্রিয়া?

মির্জা ফখরুল : জাতীয় ঐক্যের আহ্বান আমাদের প্রথম থেকেই ছিল। আমরা বিশ্বাস করি, গণতন্ত্রকে ফিরে পাওয়ার জন্য সবসময়ই দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলো এক হয়। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই আমরা প্রায় সব দলের সঙ্গে আলোচনা করেছি। সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণাগুলো আসেনি বিভিন্ন কৌশলগত কারণে। তবে আলোচনা চলছে, ঐক্য হবেই। ছোট ছোট কিছু দল এক হতে শুরু করেছে, আমরা তাদের স্বাগত জানাই।

ভোরের কাগজ : ঐক্যের প্ল্যাটফর্মেই কী আন্দোলন?

মির্জা ফখরুল : না, এই বিষয়ে চূড়ান্ত কিছু এখনই বলা যাচ্ছে না। তাছাড়া প্ল্যাটফর্মটা বড় কথা নয়, সরকার পতনের আন্দোলনে রাজপথে সরব হওয়া বড় কথা। সেটার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো যুগপৎ আন্দোলনের কথা ভাবছে। আন্দোলনের জন্য নির্দিষ্ট ফ্রন্ট বা ঐক্য কিংবা ফরমেটটা কি হবে- একসঙ্গে সবাই বসে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে, শুরুটা সবাই যুগপৎভাবে করব বলেই আশা।

ভোরের কাগজ : আপনাদের ঐক্যের বেলায় নেতৃত্ব কে দেবে?

মির্জা ফখরুল : আমাদের আন্দোলনের নেতা তারেক রহমান। আর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে একক নেতৃত্বের সম্ভাবনা খুব কম। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কিংবা জোট আছে। তাদের আলাদা আলাদা নেতা আছে।

ভোরের কাগজ : বিএনপি জাতীয় সরকারের কথা বলছে; এই জাতীয় সরকারে ফমুর্লাটা আসলে কী?

মির্জা ফখরুল : আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনের পর একটি নিরপেক্ষ সরকারের হাতে রাষ্ট্রের ক্ষমতা যাবে। তারা একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। সেই কমিশনের পরিচালনায় নির্বাচন হলে তখন যে সংসদ গঠন হবে ; সেই সংসদে যারা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন তাদের সবাইকে নিয়ে, মতামতের ভিত্তিতে যে সরকার গঠিত হবে- সেটাই হবে জাতীয় সরকার।

ভোরের কাগজ : জাতীয় সরকার যদি নাম হয়; তবে তো আওয়ামী লীগসহ সব দলেরই সেখানে থাকার কথা, তাই কি?

মির্জা ফখরুল : ‘নো’। শুধুমাত্র যারা আন্দোলন কর্মসূচিতে একাত্ম হবেন তাদের নিয়েই হবে জাতীয় সরকার।

ভোরের কাগজ : প্রধানমন্ত্রী বলছেন দেশে শক্তিশালী বিরোধী দল নেই। তার এমন বক্তব্য কী বিএনপিকে ইঙ্গিত করে?

মির্জা ফখরুল : প্রধানমন্ত্রীর কোনো বক্তব্যকেই আমরা খুব বেশি একটা গুরুত্ব দেই না। তিনি যা বলেন তা করেন না; যা করেন সেটা জনগণের বিরুদ্ধে যায়। তাছাড়া বিরোধী দল আছে বলেই তো তিনি এত কথা বলছেন। দুঃস্বপ্নে, ঘুমে, জাগরণে সবসময়ই বিএনপি নিয়ে বলছেন।

ভোরের কাগজ : আগামী নির্বাচন ঘিরে আন্তর্জাতিক বিশ্বের ভূমিকা কী? আন্তর্জাতিক তোড়জোড় বিএনপির জন্য কোনো আশাব্যঞ্জক কিছু?

মির্জা ফখরুল : পশ্চিমা বিশ্ব সিরিয়াসলি কনসার্ন বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়ে। নিঃসন্দেহে গণতান্ত্রিক বিশ্ব চাইবে বাংলাদেশে স্বচ্ছ নির্বাচন হোক। নির্বাচন বিষয়ে এবার তাদের অভিমত একেবারেই স্পষ্ট। ২০১৪ নির্বাচনকে ঘিরে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত তারনকোর সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি সবার জানা আছে। আওয়ামী লীগ মধ্যবর্তী নির্বাচনের কথা দিয়েও তখন বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আর বিএনপি আন্তর্জাতিক বিশ্বের ওপর নয়; জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে। তাই জনগণের শক্তি নিয়েই বিএনপি এগিয়ে যাবে। এক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক বিশ্বের ভূমিকা বা কনসার্ন যদি পার্ট প্লে করে সেটা আমাদের জন্য পজেটিভ হবে।

ভোরের কাগজ : জামায়াতকে নিয়ে কি ভাবছেন? তাদের সঙ্গে গাঁটছড়া কি থাকছেই?

মির্জা ফখরুল : জামায়াত বিএনপির কোনো অংশ নয়। তাছাড়া জামায়াতে ইসলামীর এখন নিবন্ধন নেই। বিএনপির সঙ্গে আদর্শিক কোনো সম্পর্ক নেই। তারা ২০ দলীয় জোটে যেহেতু আছে বিএনপির সঙ্গে অফিসিয়িালি আছে কিন্তু বাস্তবে নেই। কারণ, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর তারা তেমনভাবে সক্রিয় নয়। তাই তাদের সিদ্ধান্ত তারা নেবে। তাছাড়া জামায়াত সবসময় রাজনীতিতে ছিল। ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৯০ এর আন্দোলন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আন্দোলন করেছে। সাইডলাইন থেকে আন্দোলনে ছিল। তাই নির্বাচন ও আন্দোলন কেন্দ্রিক সম্পর্ক- সেটা যে কোনো সময় যে কোনো দলের সঙ্গেই হতে পারে। বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এটা খুবই কমন বিষয়। একটু অপেক্ষা করুন। কিছুদিনের মধ্যেই সমস্ত মেরুকরণ আরো স্পষ্ট ও পরিষ্কার হবে।

ভোরের কাগজ : জামায়াতে ইসলামীকে কেন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করছে না, অনেকদিন কথাটা বিএনপির নেতারা বলেন না।

মির্জা ফখরুল : ওটা আমরা বলি যখন তারা আমাদের আক্রমণ করে বলে জামায়াতকে আমরা কেন পরিত্যাগ করছি না।

ভোরের কাগজ : বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কেমন আছেন? তাকে নিয়ে দল কী ভাবছে?

মির্জা ফখরুল : তিনি এখনো গুরুতর অসুস্থ। ডাক্তাররা বারবার বলছেন তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়া দরকার। সেটা তো হচ্ছে না। তাই এটা বলতে পারছি না তিনি পুরোপুরি সুস্থ আছেন। তিনি গণতন্ত্রের মাতা; তাই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের একটা অংশই খালেদা জিয়ার মুক্তি। তাই আমাদের লক্ষ্য, আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করা।

ভোরের কাগজ : বিএনপির প্রত্যাশা অনুযায়ী, যদি দেশে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয় এবং সেই নির্বাচনে বিএনপির প্রস্তুতি কেমন হবে? এবং জনগণের ভোটে জয়লাভ করে ক্ষমতায় গেলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন?

মির্জা ফখরুল : বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। তাই এই দলে আলাদা কোনো কিছুর প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না। সব পরিস্থিতি মোকাবিলায় নেতাকর্মীরা প্রস্তুত। বিএনপি ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠে মৃত গুহা থেকে। আর দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাইরে বিএনপি তো কিছুই ভাবে না। বিএনপির নির্বাচনের অংশ নেয়ার পরিবেশ তো আগে তৈরি হোক; যেদিন সেটা হবে, দেশনেত্রীও সেদিন নিশ্চয়ই গৃহবন্দি থাকবেন না। আর ক্ষমতায় গেলে তিনিই হবেন প্রধানমন্ত্রী। এখানে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।

ভোরের কাগজ : বার্ধক্য ও অসুস্থতা নিয়ে খালেদা জিয়া যদি দল ও ‘গণতন্ত্রের’ স্বার্থে জেলে যেতে পারেন, গৃহবন্দি থাকতে পারেন; তাহলে তার ছেলে কেন একই ঝুঁকি নিতে ভীত?

মির্জা ফখরুল : বিষয়টা ঝুঁকি নেয়ার নয়; যখন দেশে ফেরার পরিবেশ সৃষ্টি হবে তিনি (তারেক রহমান) নিশ্চয়ই ফিরবেন। সেই সময় খুব দূরে নয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App