×

খেলা

কেমন হচ্ছে সাগরিকার উইকেট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২২, ১১:২২ পিএম

কেমন হচ্ছে সাগরিকার উইকেট

শনিবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে গভীর মনোযোগ দিয়ে উইকেট দেখছেন লঙ্কান খেলোয়াড়রা

কেমন হচ্ছে সাগরিকার উইকেট

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচের জন্য শনিবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে গভীর মনোযোগ দিয়ে উইকেট দেখছেন সাকিব আল হাসান ও টাইগার অধিনায়ক মুমিনুল হক

চট্টগ্রামের সাগরিকায় লঙ্কানদের বিপক্ষে রবিবার থেকে শুরু হচ্ছে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচ। খেলা শুরুর আগে চার দিকে সাগরিকার উইকেট নিয়ে আলোচনা চলছে। উইকেট কি স্পিন নাকি পেস সহায়ক হবে। অধিকাংশ ক্রিকেট পণ্ডিতের মতে সাগরিকার উইকেট সবসময় স্পিনারদের সহায়ক হয়। সাকিব, তাইজুল এবং নাঈম হাসানরা বল হাতে চট্টগ্রামের উইকেট থেকে ফায়দা লুটেছেন। কেউ কেউ বলছেন সাগরিকায় স্পোটির্ং উইকেট হবে। সাগরিকার উইকেটকে রানপ্রসবা উইকেট বলে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে। প্রায় চার বছর পর আবারো সাগরিকায় টেস্ট খেলতে নামছে বাঘ-সিংহরা। এ ম্যাচেও রানবন্যা দেখছেন লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে। আগের দুই ম্যাচে দলে ছিলেন করুনারত্নে। এবার অধিনায়ক হিসেবেও রানপ্রসবা উইকেটের আশা করছেন তিনি। আর উইকেট ফ্ল্যাট হলে বোলারদের কাজ হবে কঠিন, সেটিও মাথায় আছে তার।

শনিবার (১৪ মে) ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে করুনারত্নে বলেছেন, ‘(২০ উইকেট নেয়া) সহজ হবে না। তবে আপনাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। এ উইকেটে বোলারদের জন্য কিছুই থাকবে না। তবে আমি মনে করি, আপনি যদি মাথা খাটিয়ে বোলিং করতে পারেন, তাহলে উইকেট পেতে পারেন।’ উইকেট সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, ‘দেখে মনে হচ্ছে পুরোপুরি ফ্ল্যাট উইকেট, বোলারদের জন্য কিছুই নেই। আমি যেমনটা বললাম, মাথা খাটিয়ে বোলিং করতে পারলে এখানে ২০ উইকেট নেয়া যাবে। যদি উইকেট নাও আসে, তবু মাথা খাটিয়ে ব্যতিক্রম কিছু চিন্তা করতে হবে। আমরা সেভাবেই পরিকল্পনা করছি।’ লঙ্কান অধিনায়কের মতো সাগরিকার ফ্ল্যাট উইকেটের ব্যাপারে ওয়াকিবহাল আছেন টাইগার অধিনায়ক মুমিনুল হকও।

আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অন্তর্ভুক্ত এই সিরিজের জন্য চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয় থাকা সত্ত্বেও গত ৮ মে ঢাকায় পা রেখেছে লঙ্কানরা। এরপর বিকেএসপিতে বিসিবি একাদশের বিপক্ষে দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার কথা থাকলেও বৃষ্টির বাধায় দুদিনে মাত্র ১৮ ওভার খেলেই প্রস্তুতি শেষ করতে হয়েছে তাদের। রবিবার থেকে শুরু হয়ে আগামী ১৯ মে পর্যন্ত হবে প্রথম টেস্ট। এরপর দুই দলই ফিরবে ঢাকায়। ২৩ মে থেকে ২৭ মে পর্যন্ত মিরপুরে হবে দ্বিতীয় টেস্ট। বাংলাদেশের জন্য এই সিরিজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইসিসি সুপার লিগে দাপটের সঙ্গে শীর্ষে অবস্থান করলেও টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে আছে টেবিলের তলানিতে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত ৬টি ম্যাচ খেলেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। যার মধ্যে মাত্র ১ ম্যাচে জয় পেয়েছে। ৫ ম্যাচে হারাতে হয়েছে মহমূল্যবান ৬০ পয়েন্ট। বর্তমানে ১২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের অষ্টম স্থানে আছে মুমিনুলরা। তবে স্বস্তির সংবাদ হলো টাইগারদেরও নিচে নবম স্থানে আছে ইংল্যান্ড। ১৩ ম্যাচ খেলে ১৮ পয়েন্ট অর্জন করলেও রানরেটের ভিত্তিতে বাংলাদেশের পেছনে আছে তারা। ১৩ ম্যাচের মধ্যে ৭ ম্যাচেই হেরেছে তারা। এছাড়া জয় পেয়েছে এক ম্যাচে ও ড্র করেছে চারটিতে। অপরদিকে, বাংলাদেশের থেকে এক ম্যাচ বেশি জয়ের সুবাদে পঞ্চম স্থানে আছে শ্রীলঙ্কা। ৪ ম্যাচের মধ্যে দুই জয়ে ২৪ পয়েন্ট অর্জন করেছে তারা। এছাড়া বাকি দুই ম্যাচে পূর্ণ পয়েন্টই হারিয়েছে। চলতি সিরিজে লঙ্কানদের বিপক্ষে দুই ম্যাচে জয় নিশ্চিত করতে পারলে টেবিলের অনেকটা উপরের উঠে আসবে টাইগাররা। এই লক্ষ্য পূরণের জন্য টাইগারদের একাদশের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

ঢাকায় প্রথমদিন লঙ্কানদের অনুশীলন শেষে বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সঙ্গে বিশ্বকাপ জয়ী কোচ নাভিদ নেওয়াজ জানিয়েছেন, এই সিরিজের মূল লড়াইটা হবে ব্যাটারদের সঙ্গে। যে দলের ব্যাটাররা উইকেট থিতু হতে পারবে দিন শেষে তারাই কাক্সিক্ষত ফলাফলের দিকে যাবে। কেননা, চট্টগ্রামে উইকেট অধিকাংশ সময়ই ব্যাটিং বান্ধব হয়ে থাকে। উইকেটে থিতু হতে পারলেই বড় ইনিংসের স্বপ্ন দেখতে পারবে ব্যাটাররা। অপরদিকে, চট্টগ্রামে লঙ্কানদের বিপক্ষে বাংলাদেশের রানের পাহাড় গড়ারও রেকর্ড আছে। ২০১৮ সালে প্রথম ইনিংসে ৫১৩ রান করেছিল টাইগাররা। এর জবাবে ৯ উইকেটের বিনিময়ে প্রথম ইনিংসেই ৭১৩ রানের পাহাড় গড়ে শ্রীলঙ্কা। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেটের বিনিময়ে বাংলাদেশ ৩০৭ রান করার সুবাদে ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে উভয় দল। এর আগে ২০১৪ সালে দুই দল মুখোমুখি হয়েও রানের বন্যা বয়েছিল। প্রথম ইনিংসে ৫৮৭ রান করেছিল লঙ্কানরা। জবাবে বাংলাদেশ থেমেছে ৪২৬ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে সফরকারিরা ৪ উইকেটে ৩০৫ রানে ইনিংস ঘোষণা করার পর বাংলাদেশ ৩ উইকেটে ২৭১ রান করলে ড্র দিয়েই শেষ করে ম্যাচ। ২০১৮ সালে রানবন্যার টেস্ট ম্যাচ হলেও দিন শেষে উইকেট পেয়েছে সেই স্পিনাররা। সেই ম্যাচে টাইগারদের হয়ে চার উইকেট পেয়েছে তাইজুল ইসলাম, ৩ উইকেট পেয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজ ও একটি পেয়েছে সানজামুল ইসলাম। লঙ্কানদের হয়ে প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেট পেয়েছে রঙ্গনা হেরাথ, ২ উইকেট পেয়েছেন সান্দাকান এবং এক উইকেট পেয়েছেন দিলরুয়ান পেরেরা। দ্বিতীয় ইনিংসেও লঙ্কান স্পিনারদেরই জয়জয়কার ছিল। রঙ্গনা হেরাথ পেয়েছিল ২টি। তবে টাইগারদের জন্য স্বস্তির বিষয় হলো সেই হেরাথই এখন সাকিব-তাইজুলদের হয়ে লংকাবধের তালিম দিচ্ছে। সর্বশেষ টেস্ট অনুসারে এই ম্যাচেও স্পিনারদের দিকেই মুমিনুলের তাকিয়ে থাকার সম্ভাবনা আছে।

[caption id="attachment_349121" align="alignnone" width="1280"] শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচের জন্য শনিবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে গভীর মনোযোগ দিয়ে উইকেট দেখছেন সাকিব আল হাসান ও টাইগার অধিনায়ক মুমিনুল হক[/caption]

স্পিন আক্রমণে মেহেদী হাসান মিরাজ আঙুলের চোঁটে দল থেকে ছিটকে গেলেও তার জায়গায় এসেছেন নাইম হাসান। তার সঙ্গে আছেন বিশ্বসেরা স্পিন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলাম। তিন অভিজ্ঞ স্পিনারের পাশাপাশি একাদশে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকেও রাখতে ইচ্ছুক হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। সৈকতকে দলে রাখার জন্য ইয়াসির আলীকে হয়তো বসে থাকতে হবে। কেননা, ইয়াসির আলী শুধু একজন ব্যাটারের ভূমিকা রাখে। অপরদিকে সৈকত ব্যাটিং ও বোলিং দুই বিভাগেই ভূমিকা পালনের সক্ষমতা রাখে। তাদের সঙ্গে পঞ্চম স্পিনার হিসেবে দলকে সাপোর্ট দিতে পারবেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। দলে যদি এক পেসার খেলান তাহলে একজন ব্যাটার হিসেবে শান্তকে খেলাতে পারবেন মুমিনুল। এছাড়া দুই পেসার রাখলে শান্তকে হয়তো সাইড বেঞ্চে বসেই চট্টগ্রাম টেস্ট উপভোগ করতে হবে। আবার সৈকতকে না রেখে টপ অর্ডারে শান্তকেও রাখতে পারেন মুমিনুল। কেননা, শান্তও সাকিব-তাইজুলদের সঙ্গে হাত ঘুরাতে পারবে। তাহলে রবিবার একাদশে দেখা যেতে পারে তামিম ইকবাল, মাহমুদুল হাসান জয়, সাকিব আল হাসান, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত/ মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত/ ইয়াসির আলী রাব্বি, তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসান, শরিফুল ইসলাম, এবাদত হোসেন/খালেদ আহমেদ/শহিদুল ইসলাম/ রেজাউর রহমান রাজা।

এই টেস্টে কয়েকটি মাইলফলক ছোঁয়ার অপেক্ষায় আছে টাইগার ব্যাটাররা। তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম তাদের টেস্ট ক্যারিয়ারের পাঁচ হাজার রানের মাইলফলকে পৌঁছানোর ক্ষণগণনা শুরু করেছে। ২০০৮ সালের ৪ জানুয়ারি ইউনিভার্সিটি ওভালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সাদা পোশাকে অভিষেক হয়েছিল অধিনায়ক তামিম ইকবালের। এরপর থেকে এখনো পর্যন্ত ৬৫ ম্যাচে ১২৫ ইনিংস খেলেছেন তিনি। ৩১টি অর্ধশতক, ৯টি শতক ও একটি ডাবল সেঞ্চুরির সাহায্যে ৩৯.৪১ গড়ে সর্বমোট ৪৮৪৮ রান করেছেন। পাঁচ হাজার রানের মাইলফলকে পৌঁছাতে তার প্রয়োজন মাত্র ১৫২ রান। অপরদিকে তামিম ইকবালের পরের বছর ২০০৫ সালের ২৬ মে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক হয়েছিল মুশফিকুর রহিমের। এরপর থেকে ৮০ ম্যাচে ১৪৮ ইনিংস খেলার সুযোগ পেয়েছেন। যেখানে ২৫টি অর্ধশতক, ৭টি শতক ও ৩টি ডাবল সেঞ্চুরির সাহায্যে ৩৬ গড়ে করেছেন ৪৯৩২ রান।

পাঁচ হাজার রানের মাইলফলক ছুতে তার প্রয়োজন মাত্র ৬৮ রান। আসন্ন শ্রীলঙ্কা সফরে দুই ম্যাচে চার ইনিংসে ব্যাটিং করার সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে এই দুজনের। সে সুযোগে তামিমের প্রয়োজনীয় ১৫২ রান ও মুশফিকের ৬৮ রান তুলে নিতে পারলেই কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে তারা। আসন্ন শ্রীলঙ্কা সফরে টাইগারদের এই দুই ব্যাটার তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারলে ক্রিকেট বিশ্বে ৯৯তম ও শততম ক্রিকেটার হিসেবে ৫০০০ রানের মাইলফলকে স্পর্শ করবেন তারা। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজেও তাদের দুজনেই এই সাফল্য অর্জনের সুযোগ ছিল। প্রথম টেস্টে একাদশে ছিলেন না তামিম ইকবাল। তবে মুশফিকুর রহমি থাকলেও দুই ইনিংসে করেছেন মাত্র ৭ রান। এরপর দ্বিতীয় টেস্টে তামিম একাদশে ফিরলেও দুই ইনিংস মিলিয়ে করেছেন ৬০ রান ও মুশফিকুর রহিম করেছেন ৫২ রান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App