×

জাতীয়

রেকর্ড উৎপাদনের পরও পেঁয়াজের বাজার অস্থির!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২২, ০৯:১১ এএম

  • তেলের পর সিন্ডিকেটের নজর এবার পেঁয়াজে

চলতি বছরে পেঁয়াজ উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ। এই শীর্ষ উৎপাদনকারী দেশে হুট করে চড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের বাজার। সম্প্রতি সারাদেশে তেল নিয়ে তুলকালাম কাণ্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই পেঁয়াজের দাম বাড়ায় ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। এবার পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ইমপোর্ট পারমিট (আইপি) না পাওয়াকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। খুচরা বাজারে দুদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, আড়তগুলোয় অর্থাৎ পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৪ টাকা। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। যা দু’ দিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ৫০ টাকা কেজিতেও বিক্রি করতে দেখা গেছে। অর্থাৎ খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০ টাকার বেশি, ক্ষেত্রবিশেষে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম ২০ টাকা বাড়িয়ে নেয়ারও অভিযোগ করছেন ভোক্তারা।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে পেঁয়াজের চাহিদা ছিল ৩৫ লাখ টন। আর চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ৩৫ লাখ টন। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে বছরে ২৫ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। গত অর্থবছরে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ২৯ লাখ ৫৫ হাজার টন। জমি থেকে তোলার সময় নষ্ট হওয়া, নিম্নমান ও পঁচে যাওয়ার কারণে প্রায় ২৫ শতাংশ পেঁয়াজ ফেলে দিতে হয়। এই কারণে প্রতি বছর সাত লাখ টনের মতো পেয়াজ আমদানি করতে হয়। আমদানি করা পেঁয়াজের ৮ থেকে ১০ শতাংশ প্রক্রিয়াজাতে নষ্ট হয়। দেশে আমদানিকৃত পেঁয়াজের ৮০ শতাংশই আসে ভারত থেকে।

তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, কৃষকের কথা চিন্তা করে নতুন করে আপাতত পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেয়া হচ্ছে না। ব্যাখ্যা হিসেবে তারা বলছেন, পেঁয়াজ উৎপাদনে একজন কৃষকের যে খরচ হয়, সেই খরচ মেটাতে নতুন করে পেঁয়াজ আমদানি না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

রেকর্ড উৎপাদনের পরও এই সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে কনসার্স কনজুমার সোসাইটির (সিসিএস) নির্বাহী পরিচালক ভোরের কাগজকে বলেন, দেশে রেকর্ড পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। তবুও সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে। এটা বন্ধ করতে হবে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এর আগে পেঁয়াজ নিয়ে যে কাণ্ড ঘটেছিল, তাতে কারো কোনো শাস্তি হয়নি। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে বেপরোয়া অসাধু সিন্ডিকেট। তাই এবার যারা সিন্ডিকেট করতে চাইবে, তাদের প্রচলিত আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এতে সিন্ডিকেটও ভাঙবে, ভোক্তাও সুলভ মূল্যে পণ্য পাবে। সেই সঙ্গে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের জনবল বাড়াতে হবে। যাতে সহজে ও কম সময়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলেও মনে করেন তিনি।

দাম বাড়ার কারণ না জানিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আড়ত থেকে আমরা বেশি দামে কিনেছি। তাই বেশি দামে বিক্রি করছি। আড়তদাররা বলছেন, স্থলবন্দরের আশপাশের ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ মজুত করে বেশি দামে বিক্রি করছেন, পাশাপাশি সরকার নতুন করে পেঁয়াজ ইমপোর্ট পারমিট (আইপি) না দেয়ায় দাম বাড়ছে। যাত্রাবাড়ীর খুচরা বিক্রেতা কাইয়ুম বলেন, ভালো দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৪৫ টাকায়। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৪০ টাকায়। দুদিন আগেও এ পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। সামনে পেঁয়াজের দাম আরো বাড়তে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

হুট করে পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী হাজী মাজেদ বলেন, সরকার পেঁয়াজ উৎপাদনে কৃষকদের উৎসাহিত করতে আইপি আপাতত বন্ধ রেখেছে। কৃষকদের ন্যায্যমূল্য দিতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে কৃষকরা তাদের মূল্য পাবেন। কারণ কৃষকদের পেঁয়াজ উৎপাদন করতে ২৭ টাকা খরচ হয়েছে। মৌসুমের সময় প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৭ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। এসব কারণে সরকার নতুন করে পেঁয়াজের আইপি দিচ্ছে না। নতুন করে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি স্থলবন্দরের কাছাকাছি যেসব পেঁয়াজ ব্যবসায়ী রয়েছেন, তারা পেঁয়াজ মজুত করে এখন পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছেন বলেও অভিযোগ এই ব্যবসায়ীর।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App