×

মুক্তচিন্তা

ঈশ্বরদী বিমানবন্দর যোগাযোগের নতুন দিগন্ত

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২২, ০১:০৬ এএম

‘ঈশ্বরদী বিমানবন্দর চালু করা হোক’ এটি আমার কথা নয় এটি এখন সবার দাবি। দেশের গুরুত্বপূর্ণ জনপদ ঈশ্বরদীতে অনেক প্রত্যাশা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বিমানবন্দর। এটি উত্তরাঞ্চল শুধু নয়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্যও জাগিয়েছিল বিরাট আশা। অথচ সেই সম্ভাবনাময় বিমানবন্দরটিতে নিয়মিত বিমান অবতরণ বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। কথায় বলে ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না। সুতরাং যাদের ভাবনা থেকে ঈশ্বরদী বিমানবন্দর করার উদ্যোগ গ্রহণ করা তারা নিশ্চয়ই ভাবনাহীন ছিলেন না। চুলচেরা বিশ্লেষণ করেই সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলেন। সুতরাং সেই সিদ্ধান্তকে এখন অকার্যকর করার অর্থই রাষ্ট্রের অর্থনীতিকে অপচয় করা। দীর্ঘদিন বিমানবন্দরটি চালু না হওয়ায় অকেজো হয়ে পড়ছে বিমানবন্দরের টার্মিনাল বিল্ডিং, রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে, এপ্রোন, নেভিগেশন ও সংযোগ সরঞ্জাম, অফিসারদের আবাসিক এলাকা এবং বিমানবন্দরে প্রবেশের রাস্তা। বিনিয়োগ তথা উন্নয়নের পূর্বশর্ত আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। এক্ষেত্রে অগ্রগামী বিমান যোগাযোগ। কিন্তু বাংলাদেশ এক্ষেত্রে পিছিয়ে। বিমানপথ থাকলেও উড়োজাহাজ চলাচলের জন্য উপযুক্ত বিমানবন্দরের সংখ্যা কম। বরিশাল, কুমিল্লা, ঠাকুরগাঁও ও খুলনায় বিমানবন্দর আছে; কিন্তু পুরোপুরি সচল নয়। কোনোটি পরিত্যক্ত, কোনোটি অব্যবহৃত। এগুলো সচল হলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ত। পাশাপাশি সহজ হতো মানুষের চলাচল ও পণ্য পরিবহন। সুতরাং ভৌগোলিক দিক থেকে যোগাযোগের স্বার্থে ঈশ্বরদীতে বিমানবন্দর যুক্তিসঙ্গতই। পাবনায় এখন মানুষের চলাচল বেড়েছে। কালের পরিক্রমায় আজ ঈশ্বরদী বিমানবন্দরটি শুধু চালুই নয়, এটিকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তর করা সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। ভৌগোলিক সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা এবং কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যসমৃদ্ধ এক জনপদের নাম ঈশ্বরদী। এখানে রয়েছে উন্নত সড়ক, নৌ ও রেলপথের দারুণ এক সমন্বয়। এ কারণে ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে এখানে গড়ে উঠেছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ হওয়ার পরও অনেক প্রতিষ্ঠান হয়েছে। বাংলাদেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রথম এই বিমানবন্দরটিতে নিয়মিত বিমান চলাচল শুরু হলে যাত্রী বাড়বে অনেকগুণ। ঈশ্বরদী বিমানবন্দর ফিরে পেতে চান পাবনা শহরের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও রয়েছে সিরাজগঞ্জ, পাবনা, সুজানগর, সাঁথিয়া, চাটমোহর, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, কুষ্টিয়া, ভেড়ামারা, দৌলতপুর, রাজশাহীর বাঘা, নাটোরের লাল্পুর, বাগাতিপাড়া, বড়াইগ্রামের আকাশপথে যাতায়াতকারী বিশিষ্ট নাগরিকরা। ঈশ্বরদীতে যেসব জাতীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের যখন তখন জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় যাতায়াতের প্রয়োজন হয়, তাদের মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি এবং মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের রাশিয়ান নাগরিক, বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়, ঈশ্বরদী ইপিজেড, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা মেডিকেল কলেজ, পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বাংলাদেশ ডাল গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএটিআই), বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বেনারসি শিল্প, রেশম বীজাগার, আবহাওয়া অধিদপ্তর, পাকশী পেপার মিল (বর্তমানে বন্ধ), ঈশ্বরদীতে অবস্থিত পাবনা সুগার মিলস লিমিটেড, দ্বিতীয় বৃহত্তম রেলওয়ে জংশন, পাবনা মানসিক হাসপাতাল, বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগীয় ম্যানেজার অফিসের (ডিআরএম অফিস) কর্মকর্তারা এই বিমানবন্দরটি চালু হলে সুবিধা পাবেন। তাছাড়া ঈশ্বরদী বিমানবন্দরটি চালু করা হলে অবশ্যই দেশি-বিদেশি শিল্পোদ্যোক্তারা এখানকার ইপিজেডে আরো বেশি করে বিনিয়োগ করবেন। দেশি ও বিদেশি শিল্পোদ্যোক্তারা আকাশপথে আসা-যাওয়ার বিষয়টি বারবার ইপিজেড কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন। অবকাঠামোগত উন্নয়নের জোয়ারে ঈশ্বরদী বিমানবন্দর বন্ধ থাকবে এটা মনে হয় বেশিদিন ভাবার সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চায় ঈশ্বরদীবাসী। মেগা প্রজেক্ট রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প আজ ঈশ্বরদীতে। এটা আমাদের গর্ব। সেই গর্বিত ঈশ্বরদীতে বিমানবন্দর থাকবে না এটা মনে হয় সমীচীন হতে পারে না। সবার প্রত্যাশা ঈশ্বরদী বিমানবন্দর চালুর শুভ বার্তা আমরা অচিরেই পাব। এগিয়ে যাবে ঈশ্বরদী, এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ- সেই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় রইলাম। প্রধানমন্ত্রী ঈশ্বরদী বিমানবন্দরে আপনার আগমন দিয়েই যোগাযোগের নবদিগন্তের সূচনা করতে চাই।

গোপাল অধিকারী : সাংবাদিক ও লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App