×

মুক্তচিন্তা

নিবন্ধিত শিক্ষকদের প্যানেল নিয়োগই সমস্যার সমাধান

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ মে ২০২২, ০১:০০ এএম

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন ব্যতীত কোনো ব্যক্তি কোনো পদে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের যোগ্য বিবেচিত হবে না। এরই বাস্তবায়নে প্রতি বছর অক্টোবর মাসে উপজেলা বা থানা শিক্ষা অফিসার সংশ্লিষ্ট থানাধীন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শূন্যপদ ও বিষয়ভিত্তিক পদ জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর দাখিল করবেন এবং জেলা শিক্ষা অফিসার উক্ত তালিকার সঠিকতা যাচাই করে নভেম্বর মাসের মধ্যে এনটিআরসিএর অনুকূলে পাঠাবেন। এনটিআরসিএ উক্ত তালিকার ভিত্তিতে পরীক্ষা গ্রহণ করবে। এভাবেই চলছিল এনটিআরসিএর বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণ। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সনদ পেলেও সনদের মেয়াদ ছিল পাঁচ বছর। ২০১৩ সালের ২০ মে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে হাইকোর্টের রায়ে ১-১২তমদের সনদের মেয়াদ ৫ বছর বাক্যটি বিলুপ্ত করে সনদের মেয়াদ আজীবন করা হয়। ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ে পাস হয় নতুন গেজেট। ২০০৬ সালে প্রকাশিত গেজেটের আলোকে পূর্ব নিবন্ধিত শিক্ষকদের নিয়োগের কোনো সুরাহা না করে এককভাবে প্রার্থী নির্বাচন করে শূন্য পদে নিয়োগ সুপারিশের উদ্দেশ্যে ১৩তমদের পরীক্ষা নেয় এনটিআরসিএ। সরকারি কোনো আইন বা প্রজ্ঞাপন দ্বারা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাকে পুনর্বাসন করা সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য। ক্ষতিগ্রস্ত ও নিয়োগ বঞ্চিত ১-১২তমদের কিছু অংশ আদালতের দ্বারস্ত হয়। এতে আটকে যায় ১৩তমদের নিয়োগ সুপারিশের কার্যক্রম। এনটিআরসিএ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাঝে সমন্বয়হীনতা আধুনিক সময়োপযোগী একটি শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতিকে জটিল থেকে জটিল করে তুলেছে। ১৩তম, ১৪তম, ১৫তমসহ নতুন ১৬তমদের ক্ষেত্রেও সৃষ্টি হতে যাচ্ছে একই জটিলতা। এদের ক্ষেত্রে আছে আবার বয়সের বেড়াজাল। হঠাৎ একদিন হয়তো শোনা যাবে আইনি জটিলতার কারণে এদের আর নিয়োগ সুপারিশ করা সম্ভব হচ্ছে না। সুতরাং যা হচ্ছে সবই পরিকল্পনাহীন ও সমন্বয়হীনতার বহিঃপ্রকাশ ছাড়া কিছুই নয়। এনটিআরসিএর দ্বিমুখী নীতির কারণে কেউ ৪০ নম্বর পেয়ে চাকরি করছে, কেউ ব্লক পোস্ট পেয়ে চাকরিতে যোগদান করছে, আবার অবৈধ সনদ দিয়েও চাকরি করছে। অথচ বৈধ সনদধারীরা অযোগ্য হচ্ছে। এক সময়ের টপলেভেল মার্কসধারীরা প্রেক্ষাপট বিবেচনা না করায় তলানিতে পড়ে যাচ্ছে। এনটিআরসিএ এদেরই একদিকে অযোগ্য বলছে আর অন্যদিকে নিয়োগ সুপারিশের প্রলোভন দেখিয়ে হাজার হাজার আবেদনের বিপরীতে সর্বস্বান্ত করে তুলছে। যেখানে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন মানের প্রশ্নপত্রে ভিন্ন ভিন্ন পাসের হারের নিবন্ধিতদের একত্রিত করা হচ্ছে, সেখানে কেউ কম মেধাবী, কেউ বেশি মেধাবী বলাটাও কতটা যৌক্তিক মহামান্য আদালতই ভালো জানেন। এনটিআরসিএ ইনডেক্সধারীদের এমপিও হওয়ার পর সনদ রহিতকরণের পরিবর্তে বারবার প্রতিষ্ঠান বদল করার সুযোগ দিচ্ছে। এতে তাদের গণবিজ্ঞপ্তি নামক ব্যবসা দিনকে দিন জমে উঠছে। একদিকে যেমন শিক্ষক সংকট তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে সদ্য উত্তীর্ণরা চাকরির আশায় গণবিজ্ঞপ্তির জন্য লাফাচ্ছে। এনটিআরসিএ এ সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ইনডেক্সধারীদেরসহ সবাইকে যুদ্ধক্ষেত্রে নামিয়ে দিচ্ছে। ইনডেক্সধারীদের সনদ রহিতকরণে হাইকোর্টে রায় থাকা সত্ত্বেও এনটিআরসিএ দায়িত্ব নিয়ে এদেরকেই গণবিজ্ঞপ্তির অন্তরালে বদলি ব্যবস্থার মহান কাজটি করে যাচ্ছে। যেখানে পদের সংখ্যা যাই হোক সব নিবন্ধনধারী আবেদন করবে যত খুশি তত, কিন্তু চাকরি নামক সোনার হরিণ ধরা দেবে ইনডেক্সধারীদের কাছে। তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে ১৫ হাজার পদে আবেদনকারীর তালিকা প্রকাশ না করে কার স্বার্থে, কী কারণে ওই ১৫ হাজার পদের বিপরীতে আবার বিশেষ বিজ্ঞপ্তি নামক লটারি আয়োজনের অনুমতি এনটিআরসিএ পায় কে জানে? কেন ১৫ হাজার পদের বিপরীতে কোনো যোগ্য শিক্ষক খুঁজে পাওয়া গেল না? এর মানে সবাই আবেদন যোগ্য হলেও নিয়োগ যোগ্য নয়, এমনটি নয় কী? তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে ৫৪ হাজার ৩০৭টি পদের বিপরীতে ১৪ হাজারেরও কম (ইনডেক্সধারী ব্যতীত) নিয়োগ সুপারিশ করতে যাচ্ছে এনটিআরসিএ। ১৬তম নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলো ১৮ হাজারেরও অধিক। বছরে ২০/৩০ হাজার যোগ হবে আর বারবার পূর্বের নিয়োগপ্রাপ্ত (প্রায় ৮৬ হাজার) ইনডেক্সধারীরা সুপারিশ পাবে। এভাবে চলতে থাকলে শুধু ১-১২তম নয়, ১৩তম, ১৪তম, ১৫তম ও ১৬তম একটি অংশেরও কোনো দিন চাকরি হবে না। কৃত্রিম শিক্ষক সংকট দূরীকরণে চাকরিপ্রত্যাশী নিবন্ধনধারীদের এক আবেদনে ইনডেক্সধারীদের অন্তর্ভুক্ত না করে কোটাবিহীন স্ব-স্ব নীতিমালায় নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত নিবন্ধন পরীক্ষা বন্ধ রেখে প্যানেলভিত্তিক নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সদিচ্ছা এবং সুনজরের অপেক্ষা মাত্র।

আমির আসহাব : ৯৪, কে পি ঘোষ স্ট্রিট, আরমানিটোলা, ঢাকা [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App