×

সাহিত্য

বাজেটে সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ মে ২০২২, ০৫:৪২ পিএম

বাজেটে সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি

বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংস্কৃতি খাতে বাজেট বাড়ানোর দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। ছবি: ভোরের কাগজ

দেশের সংস্কৃতি খাতের উন্নয়নে আগামী অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের কমপক্ষে এক শতাংশ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।

আগামী অর্থবছরকে সামনে রেখে বুধবার (১১ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সংস্কৃতি খাতে বাজেট বাড়ানোর দাবিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় সংগঠনটি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস। সংবাদ সম্মেলনে এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জোটের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ। এ ছাড়া জোটের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্য ও শিল্পীরা উপস্থিত ছিলেন।

গোলাম কুদ্দুছ সংস্কৃতি খাতের উন্নয়নের জন্য সারাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ে অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রস্তাবনা তুলে ধরে বলেন, সংস্কৃতিকর্মীদেরও এ খাতে আর কোনো অনুদান নয়। বরং বাজেট দিতে হবে। অনুদানের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে সংস্কৃতি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে হবে।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, জ্ঞাননির্ভর ন্যায়ভিত্তিক সমাজ নির্মাণের আকাক্ষা মানুষের বহুদিনের। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সমাজের সর্বস্তরে একটি আদর্শিক লড়াই ও চিন্তার ঐক্যসূত্র অত্যাবশ্যক। নানা কারণে স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উত্থান, ধর্মকে অবলম্বন করে মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে সমাজের অগ্রগতিকে থামিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা, রাজনীতিতে দৃবৃর্ত্তায়ন এবং সাম্প্রদায়িকতার অনুপ্রবেশ, গণতান্ত্রিক চর্চার নামে সমাজে অস্থিরতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির এক গভীর প্রকাশ্য—অপ্রকাশ্য তৎপরতা আমরা প্রত্যক্ষ করছি।

অপরদিকে মাদক, সন্ত্রাস, অপসংস্কৃতির অবাধ প্রবাহে তরুণ সমাজের এক বড়ো অংশ কাক্সিক্ষত সমাজ নির্মাণের পথ থেকে ছিটকে পড়ছে।

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে আমরা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি সাধন করে মধ্যম আয়ের দেশের কাতারবন্দি হচ্ছি। তথ্যপ্রযুক্তি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ব্যবস্থা, নারীর ক্ষমতায়নসহ সমাজের বহুক্ষেত্রেই অভাবনীয় উন্নতি সাধিত হয়েছে। এতসব অগ্রগতি সত্ত্বেও মেধা—মননে চিন্তায় আমরা ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছি। মুক্তবুদ্ধির চর্চা, যুক্তির প্রাধান্য, মানবিকবোধ ও সম্প্রীতির বিপরীতে পশ্চাদপদ চিন্তা ও ধর্মীয় গোড়ামি আমাদেরকে গ্রাস করতে বসেছে। সমাজের স্তরে স্তরে এই অপশক্তি শক্ত ভিত্তি তৈরি করে মুক্তিযুদ্ধের মৌল আদর্শের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে।

এই চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করে সমাজ নির্মাণে আজ সবচাইতে বড়ো প্রয়োজন রাজনৈতিক শক্তি এবং সামাজিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস এবং মানুষের মনোজগতে সাম্য—সম্প্রীতির জাগরণ। এই জাগরণ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে সংস্কৃতি।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বেশকিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে উল্লেখরেযাগ্য- জাতীয় বাজেটের কমপক্ষে এক শতাংশ সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ দাবির পাশাপাশি প্রত্যেক উপজেলায় ৫০০ আসনের আধুনিক মিলনায়তন নির্মাণ, উপজেলা সদরে একটি উন্মুক্ত মঞ্চ নির্মাণ, একটি বিশেষ প্রকল্প নিয়ে প্রতি বছর অন্তত ১০০টি উপজেলায় এ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হলে আগামী ৫ বছরের মধ্যে দেশের সবকয়টি উপজেলায় সংস্কৃতি চর্চার নেটওয়ার্ক তৈরি হবে, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ স্মরণে রেখে প্রত্যেক জেলায় ‘বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষ স্মৃতিভবন’ নির্মাণ করা। এ ভবনে ৭০০ আসনের আধুনিক মিলনায়তন, মহড়া ও কর্মশালার কক্ষ, সেমিনার হল, পাঠাগার, ক্যান্টিন ও ৫ থেকে ১০ জন থাকার মতো কক্ষের ব্যবস্থা করা, যত দ্রুত সম্ভব এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা, অসচ্ছল শিল্পীদের মাসিক অনুদানের পরিমাণ বাস্তবতার নিরিখে ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা, দেশের বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় শিগগির সম্ভব ‘সম্প্রীতির জন্য সংস্কৃতি’ মূল প্রতিপাদ্য নিয়ে।

দেশব্যাপী ব্যাপক সাংস্কৃতিক জাগরণ গড়ে তুলতে হবে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য জাতীয়ভিত্তিক সাংস্কৃতিক ফেডারেশনগুলোকে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচির ভিত্তিতে বিশেষ আর্থিক বরাদ্দ দেয়া, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ জাতীয়ভিত্তিক সাংস্কৃতিক ফেডারেশনগুলোর স্থায়ী দপ্তর নির্মাণের জন্য মতিঝিলের ক্রীড়া পল্লির অনুরূপ জায়গা বরাদ্দ দেয়া, বহুমুখী শিক্ষার পরিবর্তে একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা এবং মুক্তিযুদ্ধ ও মানবসভ্যতার ইতিহাস, অসাম্প্রদায়িক বিজ্ঞানমনস্ক আধুনিক চিন্তা সম্বলিত লেখা পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

শিক্ষাকার্যক্রমে সংস্কৃতিকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রতি বছর সাংস্কৃতিক উৎসব ও প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা, সরকারের বড় বড় সাংস্কৃতিক আয়োজনে জাতীয়ভিত্তিক সাংস্কৃতিক ফেডারেশনগুলোকে সম্পৃক্ত করে শিল্পকলা একাডেমির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা, আমলাতন্ত্রের সংস্কৃতিচর্চা ও আয়োজন বন্ধ নিশ্চিত করা, সংস্কৃতিকর্মীদের আবাসনের জন্য ‘সংস্কৃতিপল্লি’ নির্মাণ করাসহ রাজধানীসহ প্রত্যেক জেলায় সরকারি উদ্যোগে একটি যাত্রাপালার স্থায়ী যাত্রাপালার প্যান্ডেল নিমার্ণ করার দাবি জানানো হয়েছে।

মুহাম্মদ সামাদ বলেন, সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দকৃত বাজেট তাৎপর্যপূর্ণ নয়, এই বাজেটে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চালানো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের সরকারের কাছে সংবাদ সম্মেলনের আজকের এ দাবি সকল সংস্কৃতি কমীর্রই দাবী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App