×

জাতীয়

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ‘ইভিএম’ বিতর্ক!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ মে ২০২২, ০৮:৩৮ এএম

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ‘ইভিএম’ বিতর্ক!

ফাইল ছবি

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) করা সম্ভব কিনা তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। আর এ বিতর্কের সূত্রপাত্র ঘটেছে গত শনিবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে। বৈঠকে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা জানান, ইভিএমের মাধ্যমেই সবগুলো আসনে নির্বাচন চায় আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ সব দলই অংশ নেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

তবে প্রধানমন্ত্রীর ইভিএমে জাতীয় নির্বাচন করার প্রত্যাশার বিরোধিতা করেছে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি ছাড়াও বরাবরই ইভিএমের বিরোধিতা করে আসছে দলটি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এখন থেকেই নানা ‘কলাকৌশল’ ও ‘ফন্দিফিকির’ শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ইভিএমে সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে। ওই নির্বাচনটি খুবই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয় বলে সব দল, প্রার্থী ও পর্যবেক্ষকরা মেনেও নেন। এছাড়া জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম তেমন ব্যবহার না হলেও স্থানীয় সরকারের সব সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এসব নির্বাচন নিয়ে দেশীয়-বিদেশি পর্যবেক্ষকরাও সন্তোষ প্রকাশ করেন। যদিও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারাদেশের মাত্র ছয়টি আসনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট হয়।

গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ভোটগ্রহণ ইভিএমে, না ব্যালটে হবে, কিংবা কতটা ইভিএমে হবে, কতটা ব্যালটে হবে? এসব ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি ইসি। বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। সময় হলে সিদ্ধান্ত হবে। ভোট পরিচালনা করব আমরা, পদ্ধতির বিষয়েও আমরাই সিদ্ধান্ত নেব। তবে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল তাদের ইচ্ছে ব্যক্ত করতে পারেন।

তিনি জানান, এখন পর্যন্ত একশর মতো আসনে ইভিএমে ভোট করার সক্ষমতা ইসির আছে। ৩০০ আসনে ইভিএমে ভোট নেয়ার সামর্থ্য এখনো নেই। ৩০০ আসনের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো ইসি নেয়নি।

এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ জানান, ৩০০ আসনে ইভিএমে ভোট করার মতো মেশিন ইসির হাতে নেই। তাছাড়া ইভিএমের সঙ্গে আরো একটি মেশিন লাগে সেটিও প্রস্তুত করতে হবে। প্রশিক্ষিত লোকবলও দরকার। এত দ্রুত লোককে প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব হবে না। ইভিএমে অনেক সময় আঙুলের ছাপ মেলে না। এটির জন্য অত্যাধুনিক মেশিন দরকার। তাছাড়া দলগুলো কি চাইছে তাও আমলে নিতে হবে।

আরেক সাবেক ইসি ছহুল হুসাইন মনে করেন, ৩০০ আসনে ভোট করার মতো মেশিন ইসির হাতে নেই। নতুন ইভিএম কিনলেও লোকবলকে প্রশিক্ষণ দিয়ে চালানোর মতো দক্ষ করে তুলতে হবে। তাছাড়া সব দল বিশেষ করে, বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো ইভিএমে একমত হবে কিনা- সেটাও দেখার বিষয়।

এ বিষয়ে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ জি এম) কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সভায় প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে দলীয় সভায় সেই আলোচনার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে মতভেদ আছে। নির্বাচনের পদ্ধতি নির্ধারণের দায়িত্ব মূলত ইসির। তাছাড়া, নিরক্ষরতার জন্য আমাদের দেশে এখনো প্রার্থীর নামের পাশে প্রতীক ব্যবহার করতে হয়। এমন বাস্তবতায় ইভিএমের ভোট নেয়া কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে।

এদিকে নতুন কমিশনের আহূত সংলাপে বিশিষ্টজনরাও ইভিএমের পক্ষে-বিপক্ষে মত দিয়েছেন। সংলাপের সময় অনেকেই দাবি করেন ইভিএম দিয়ে কারচুপি করা যাবে না- এটি নিশ্চিত না করা পর্যন্ত ব্যবহার করা ঠিক হবে না।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান বলেন, দেশের তিনশ সংসদীয় আসনে নির্বাচন করতে হলে প্রায় চার লাখ ইভিএম লাগবে। সঙ্গে লাগবে ফিঙ্গার প্রিন্ট মেলানোর মেশিন। কিন্তু এখন ইসির কাছে মাত্র এক লাখ ৫২ হাজার ৫৩৫টি ইভিএম রয়েছে। এসবের অনেকগুলোই নষ্ট। এই ইভিএম দিয়ে সর্বোচ্চ একশ আসনে ভোট নেয়া যাবে। সব আসনে ভোট নিতে হলে আরও দুই লাখ নতুন ইভিএম কিনতে হবে। বর্তমানে এ বিষয়ে প্রশিক্ষিত জনবল প্রায় ১৩ হাজার। আরো বিপুলসংখ্যক জনবলকে প্রশিক্ষণও দিতে হবে। আগামী নির্বাচনের আগে প্রচুরসংখ্যক জনবলকে ইভিএম বিষয়ে প্রশিক্ষণ শেষ করতে হলে তা হবে ইসির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে, নাকি আওয়ামী লীগের দলীয়প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে সব আসনে ইভিএম চেয়েছেন তা বোধগম্য না। তবে এটা বলে তিনি ইসির ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছেন। যা ইসির কাছে বেশ চ্যালেঞ্জিং। তবে এক্ষুনি ইভিএম চাইলেও তো ইভিএমে ভোট করা সম্ভব হয় না। তার জন্য মেশিন এবং দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন হয়। আর যদি ইসি এটা বাস্তবায়নও করে তবে বিএনপিসহ অন্যান্য দলগুলো বলবে- এ নির্বাচন কমিশন সরকারের অঙ্গুলি হেলনে চলে। যা ইসির জন্য বিব্রতকর হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App