×

মুক্তচিন্তা

ক্রমবর্ধমান আয় বৈষম্যের সমাধান কোথায়?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ মে ২০২২, ০৪:১৩ এএম

বাংলাদেশ এখন আর খয়রাতনির্ভর দেশ নয়, একটি বাণিজ্যনির্ভর দেশে পরিণত হয়েছে। গত ৩৮ বছরে বৈদেশিক সাহায্যের ওপর এদেশের নির্ভরশীলতা কমে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জিডিপির এক শতাংশের নিচে নেমে গেছে। ফলে বৈদেশিক ঋণ অনুদানের ওপর বাংলাদেশের অর্থনীতির টিকে থাকা না থাকার আর কোনো প্রশ্নই উঠে না। আমদানি ব্যয় ও রপ্তানি আয়ের ব্যবধান হ্রাস যেন বাংলাদেশের অর্থনীতির আরেকটি সফলতা। বাংলাদেশ এখন তার আমদানি ব্যয় ও রপ্তানি আয়ের ব্যবধান ঘোচাতে সক্ষম হয়েছে। ফলে বাণিজ্য ভারসাম্যের ঘাটতি এখন আর সংকটজনক নয়। এক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রেরিত রেমিট্যান্সের চমকপ্রদ হার এবং রপ্তানি আয়ের চমৎকার প্রবৃদ্ধি দেশের লেনদেনের ভারসাম্য অর্জনে সহায়তা করে যাচ্ছে। এছাড়াও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, ক্ষুদ্রঋণ আন্দোলনে সফলতা, নারীর ক্ষমতায়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নারী-পুরুষের বৈষম্য নিরসন, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও শিশুমৃত্যু হ্রাসসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ টার্গেটে সফলতা অর্জন বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে সহায়তার হাত প্রসারিত করে যাচ্ছে। এমন কোনো বিষয় নেই যার ইতিবাচক দিকের পাশাপাশি নেতিবাচক দিক থাকে না। ইতিবাচক এবং নেতিবাচক শব্দ দুটি হলো একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। তেমনি বাংলাদেশের অর্থনীতি পর্যালোচনা করলে যেমন দেখতে পাওয়া যায় এর ইতিবাচক দিক তেমনি পরিলক্ষিত হয় এর নেতিবাচক দিক। বাংলাদেশের অর্থনীতির নেতিবাচক দিকের মধ্যে ক্রমবর্ধমান আয় বৈষম্য যেন প্রকট আকার ধারণ করে চলেছে। ২০১৬ সালে অর্থমন্ত্রী সংসদে ঘোষণা করেন দেশে এক কোটি টাকার বেশি আমানতের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজারেরও বেশি। এর মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল একটি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে পুঞ্জীভূত হয়ে যাওয়ার বিপদসংকেত পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশে আয় বৈষম্য পরিলক্ষিত হওয়ার পেছনে অনেক কারণ বিদ্যমান। যার মধ্যে অন্যতম হলো দুর্নীতি। বাংলাদেশে দ্রুত কোটিপতি হওয়ার একটি ন্যক্কারজনক পন্থা হলো দুর্নীতি নামক সামাজিক ব্যাধি। বর্তমানে দুর্নীতির করালগ্রাসে ছেয়ে গেছে গোটা দেশ। যা জাতীয় মহামারির রূপ ধারণ করতে চলেছে। দেশের প্রতিরক্ষা, আয়কর, ভ্যাট, কাস্টমসসহ সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত সব বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আদালতসমূহ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য বিভাগসহ এমন কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম বলা যাবে না যেখানে খানিকটা হলেও দুর্নীতিমুক্ত রয়েছে। এজন্যই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আফসোস করে বলেছিলেন, ‘আমি সারা দুনিয়া থেকে বাংলার দুঃখী মানুষের জন্য ভিক্ষা করে আনি, আর তা সাবাড় করে দেয় চাটার দল।’ এই চাটার দলের কারণে বাংলাদেশ দুর্নীতিমুক্ত হতে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আয়বৈষম্যের ফলে সম্পদের বৈষম্য লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে। কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে। কৃষিতে ভূমিহীনতা সমস্যা প্রবল হয়ে উঠেছে। ভূমি মালিকানায় মাঝারি ও ক্ষুদ্র কৃষক ভূমি মালিকদের প্রাধান্য ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে এবং অনুপস্থিত ভূস্বামীদের কাছে জমির মালিকানা পুঞ্জীভূত হচ্ছে। ফলে মালিক-কৃষক সম্পর্কের স্থলে বর্গাদার বা ইজারাদার সম্পর্ক স্থান করে নিচ্ছে। আয়বৈষম্যের কারণে শিক্ষা ব্যবস্থাও বিভাজিত। এখন সন্তানদের শিক্ষার মানদণ্ড নির্ভর করে পিতামাতার বিত্তের ওপর। মধ্যবিত্ত, উচ্চ-মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত পিতামাতারা সন্তানদের জন্য এখন আর বাংলা মাধ্যম প্রাথমিক বিদ্যালয়কে মানসম্পন্ন মনে করছেন না। কিন্ডারগার্টেনে পড়ানোটাই এখন নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে। আশির দশক থেকে বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যবস্থার বাজারীকরণ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। ব্যক্তি খাতের স্বাস্থ্যসেবার দৌরাত্ম্যের কারণে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমশ পঙ্গুত্ববরণ করে চলেছে। ক্রমবর্ধমান আয়বৈষম্য সমস্যা মোকাবিলা করা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। এ সমস্যা নিরসনে রাষ্ট্রের ভূমিকা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাকে একক মানসম্পন্ন, সর্বজনীন ও বাধ্যতামূলক করা হলে শিক্ষাক্ষেত্রের বৈষম্য কিছুটা হলেও লাঘব হবে বলে আশা করতে পারি। কৃষিঋণ সহায়তা প্রদান, কৃষিতে ভর্তুকি প্রদান ও কৃষি উপকরণ বিতরণের মাধ্যমে কৃষিতে বৈষম্যের মাত্রা হ্রাস করা সম্ভব। এছাড়াও জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থার সুষ্ঠু তদারকি এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। তৌহিদা আকতার শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App