×

স্বাস্থ্য

নীরব ঘাতক প্রোস্টেট ক্যান্সার, পঞ্চাশোর্ধ্ব পুরুষদের ঝুঁকি বেশি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ মে ২০২২, ০৮:২৫ এএম

নীরব ঘাতক প্রোস্টেট ক্যান্সার, পঞ্চাশোর্ধ্ব পুরুষদের ঝুঁকি বেশি

প্রতীকী ছবি

বিশ্বজুড়ে পুরুষরা যেসব ক্যান্সারে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন তার মধ্যে শীর্ষে আছে ফুসফুসের ক্যান্সার। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে প্রোস্টেট ক্যান্সার। এমন তথ্যই দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বাংলাদেশে কত সংখ্যক মানুষ প্রোস্টেট ক্যান্সারে এমন কি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় এর কোনো সঠিক তথ্য নেই।

এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত ইউরো অনকোলজি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম এ সালাম ভোরের কাগজকে বলেন, এপিডেমিওলজিক্যাল সার্ভে হওয়া দরকার। এর জন্য রিসার্চ ফান্ড থাকা প্রয়োজন। সঠিক তথ্য না থাকায় প্রকৃত চিত্রটি জানা যাচ্ছে না। সঠিক তথ্যটি পেলে তবেই গুরুত্বটা তুলে ধরা সম্ভব। আমেরিকাতে ৫০ থেকে ৮০ ঊর্ধ্ব বয়সি প্রতি ছয়জন পুরুষের মধ্যে একজন প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। দীর্ঘ ২৫/৩০ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আমাদের দেশেও এই সংখ্যাটা খুব কাছাকাছি। সম্প্রতি ভারতের এক জরিপে দেখা গেছে, দিল্লি ও কলকাতায় ক্যান্সার আক্রান্তদের মধ্যে প্রোস্টেট ক্যান্সার দ্বিতীয়। আমার ধারণা, এ দেশেও ক্যান্সারে আক্রান্তদের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকবে প্রোস্টেট ক্যান্সার। আগে মনে করতাম এই ক্যান্সারের প্রকোপ আমাদের দেশে কম। কিন্তু এখন ইউরোলজিক্যাল সার্ভিস প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে যাওয়ায় দেখছি, আমাদের দেশেও প্রস্টেট ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব অনেক। দিনে দিনে রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই।

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইসিআরএইচ) এপিডেমিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার ভোরের কাগজকে বলেন, সঠিক কোনো তথ্য না থাকায় এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের তথ্য এবং বিদেশি সংস্থার তথ্যের ওপর আমাদের নির্ভর করতে হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা-২০২০ এর হিসাব অনুযায়ী, এই ক্যান্সারে ১৪ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৩০৪ জনের। বাংলাদেশে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ১ দশমিক ৬ শতাংশই প্রস্টেট ক্যান্সারের রোগী। বাংলাদেশে প্রতি বছর ২ হাজার ৪৪১ জন এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। আর মার যায় ১ হাজার ২৮৯ জন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যান্সারে মৃত্যু হার কমিয়ে আনার সবচেয়ে বড় উপায় হলো সতর্ক থাকা। আর প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে রোগীকে প্রাণে বাঁচানো সম্ভব। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, প্রোস্টেট ক্যান্সারের লক্ষণগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা যায় না। যখন শনাক্ত করা যায় তখন অনেকটাই দেরি হয়ে যায়। ফলে রোগীকে বাঁচানো প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। তাই এই ক্যান্সারকে বলা হয় নীরব ঘাতক।

অধ্যাপক ডা. এম এ সালাম বলেন, এখন পর্যন্ত এই ক্যান্সারের কারণ জানা যায়নি। মূলত কয়েকটি কারণে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এক্ষেত্রে বয়স, বংশগত একটি প্রভাব রয়েছে। অর্থাৎ পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সি পুরুষদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। এছাড়া পরিবারের কেউ যদি এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে পরবর্তী প্রজন্মের এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ১০ গুণের বেশি থাকে। এছাড়া অতিরিক্ত চর্বি ও আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়া, সিগারেট, তামাক সেবনও এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ।

বিজ্ঞানের ভাষায়, প্রোস্টেট হচ্ছে দেহের একটি ছোট গ্রন্থি। যা পুরুষের পেলভিক অংশে, মূত্রাশয়ের পাশে অবস্থিত। গ্রন্থিটি ছোট হলেও এটি নানা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চিকিৎসকরা বলছেন, মূলত পিএসএ টেস্ট বা প্রস্টেট স্পেসিফিক এন্টিজেন টেস্ট করে এই রোগ নির্ণয় করা যায়। ডিজিটাল রেক্টাম এক্সামিনেশনসহ আরো বেশ কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে এই ক্যান্সার নির্ণয় করা হয়। ট্রান্সরেক্টাল আল্ট্রাসনোগ্রাফি (টিআরইউএস) পরীক্ষার মাধ্যমে প্রোস্টেটের ভালো ছবি দেখা যায়। আর এই ছবিতে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া গেলে বায়োপ্সির মাধ্যমে ক্যান্সার আছে কি না কিংবা থাকলে তা কী ধরনের সেটি জানা যায়।

দেশে প্রোস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসা প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. এম এ সালাম বলেন, প্রোস্টেট ক্যান্সারের সব ধরনের চিকিৎসা আমাদের দেশে আছে। বিস্তৃত চিকিৎসার জন্য যে ধরনের ওষুধ প্রয়োজন সেগুলোও আমাদের দেশে উৎপাদন হচ্ছে। তবে এ রোগের চিকিৎসায় নতুন নতুন যে পদ্ধতিগুলো আসছে সেগুলো বেশ ব্যয় বহুল। তাই প্রত্যেক পরিবারের পঞ্চাশোর্ধ্ব পুরুষ সদস্যদের পরীক্ষা করিয়ে নেয়া দরকার। কেননা, অনেকে না জেনেই এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App