×

মুক্তচিন্তা

উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে হত্যাকাণ্ড

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ মে ২০২২, ০৪:২৪ এএম

দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে গেছে। কথায় কথায় ঘটছে খুনাখুনি। বাড়ছে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, পবিত্র ঈদুল ফিতরের ৪ দিনের ছুটিতে ১৮ জেলায় ২৭ জন খুন হয়েছে। এর বাইরেও হয়তো অনেক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যার খবর পত্রিকায় আসেনি। ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এর মধ্যে রাজনৈতিক কারণে খুনখারাবি যেমন আছে, তেমনি আছে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ, আধিপত্য বিস্তার, ব্যক্তিগত শত্রæতাসহ আরো অনেক কারণ। আবার কথা কাটাকাটির মতো তুচ্ছ কারণেও ঘটছে হত্যাকাণ্ড। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেভাবে দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে, তাতে বেশিরভাগ মানুষ নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, সমাজের সুস্থ ও স্বাভাবিক বিকাশ যখন ব্যাহত হয়, তখনই সমাজে অসুস্থ ধারা প্রবল হয়। মানুষের নৈতিক মূল্যবোধ হারিয়ে যেতে থাকে। মানবতা, পারস্পরিক সম্পর্ক, সৌহার্দ, সততা, পরোপকারিতা, আদর্শবাদিতা- এই গুণাবলি দ্রুত লোপ পেতে থাকে। মানুষ ক্রমে আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থান্বেষী হয়ে ওঠে, অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে। বাড়তে থাকে হানাহানি ও খুনখারাবির ঘটনা। সেই সঙ্গে যদি আইনের শাসনে ঘাটতি থাকে, অপরাধীরা অপরাধ করেও পার পেয়ে যায়, অপরাধীদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। সমাজে অপরাধ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। বিচারের দীর্ঘসূত্রতাও পরিস্থিতিকে খারাপের দিকে নিয়ে যায়। অধোগতির এসব উপসর্গই দেশে প্রবলভাবে বিদ্যমান। অতীতে ক্ষমতা বদলের সঙ্গে সঙ্গে আমরা দেখেছি লাখ লাখ অপরাধীকে রাজনৈতিক কারণে জেল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। হাজার হাজার মামলা তুলে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ছিল বহু খুনের মামলা এবং আসামিরা ছাড়া পেয়ে গেছে। দেশ এখন তারই পরিণতি ভোগ করছে। ঈদের আগের দিন রাজনৈতিক বিরোধে কুষ্টিয়ায় খুন হয়েছে চারজন, আহত হয়েছে নারীসহ কমপক্ষে ১০ জন। ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে খুন হয়েছে কৃষক লীগ নেতাসহ দুজন। বগুড়ায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক ব্যবসায়ী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় আরেক ব্যবসায়ীকে খুন করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি খুনের ঘটনা ঘটেছে জমিজমা বা সীমানা সংক্রান্ত বিরোধে। বগুড়ার ধুনট উপজেলায় এক পোশাককর্মী, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক বৃদ্ধ, ঢাকার ধামরাইয়ে আরেক বৃদ্ধ, খুলনার তেরখাদায় ভাইয়ের হাতে ভাই, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাতে একজন এবং নেত্রকোনায় পৃথক ঘটনায় দুই কৃষক খুন হন। তুচ্ছ ঘটনায় খুনের ঘটনার মধ্যে আছে ঝগড়ার কারণে টাঙ্গাইলে এক বৃদ্ধকে গলা টিপে হত্যা, টিকটকের গ্রুপ নিয়ে বিরোধে কুমিল্লায় এক তরুণকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে ভাড়া নিয়ে বিরোধের কারণে অটোচালকের আঘাতে যাত্রীর মৃত্যু এবং ল²ীপুরে নাতিকে বাঁচাতে গিয়ে ৭০ বছরের বৃদ্ধের মৃত্যু। আধিপত্য বিস্তার, অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও প্রভাব-প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে দ্ব›দ্ব-সংঘাতে তারা জড়িয়ে পড়ছে। এর জেরে প্রতিপক্ষকে খুন করতে দ্বিধা করছে না। ক্ষমতা ও প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে অপরাধ করেও অনেকে পার পেয়ে যাচ্ছে। মাঝে কিছুদিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এখন পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে হত্যাকাণ্ড ও সন্ত্রাস বেড়ে গেছে। এদিকে রবিবার মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোরা ইউনিয়নের আঙ্গুরপাড়া গ্রামে একটি ঘর থেকে মা ও দুই মেয়ের গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতরা হলেন ওই এলাকার দন্ত চিকিৎসক আছাদুজ্জামানের স্ত্রী লাবনী আক্তার (৩৫), মেয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছোঁয়া আক্তার (১৬) ও আরেক মেয়ে কথা আক্তার (১২)। অপরাধ বিশ্লেষকরা মনে করছেন- শুধু সামাজিক, পারিবারিক, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত বিরোধের জেরেই খুনখারাবি ঘটছে, তা ঢালাওভাবে বলা যাবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর গাফিলতিও এ ক্ষেত্রে কিছুটা দায়ী। আছে বিচারের দীর্ঘসূত্রতা ও আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ার ঘটনা। এ সংঘটিত হত্যাকাণ্ডগুলো প্রমাণ করে সমাজে অস্থিরতা ও অসহনশীলতা কোন পর্যায়ে গেছে। এর আগেও আমরা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় সহিংসতার অনিয়ন্ত্রিত বিস্তার দেখেছি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এখনই লাগাম টানা না হলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। আর কে চৌধুরী মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App