×

অর্থনীতি

সয়াবিন তেলের সংকট ‘কৃত্রিম’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২২, ০৮:৩০ এএম

এখনো বাজারে মিলছে না তেল > সরবরাহকারী-পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা- ত্রিমুখী সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি ভোক্তা

আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ার পর পরই কপাল খুলে যায় বাজারের অসাধু সিন্ডিকেটের। যার প্রমাণ মেলে ঈদের আগ থেকেই। পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও হুট করে বাজার থেকে ঊধাও হয়ে যায় সয়াবিন তেল। খুচরা থেকে পাইকারি, কোথাও মেলেনি সয়াবিন তেলের দেখা। কৃত্রিম এই সংকট তৈরি করে সরকারকে দাম বাড়াতে বাধ্য করে এই অসাধু সিন্ডিকেট। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈদের আগের সপ্তাহে হঠাৎ করে বাজারে সয়াবিন তেলের চরম সংকট দেখা দেয়। যদিও সংকটটি ছিল অসাধু সিন্ডিকেটের তৈরি। কারণ সরকার এর আগে মিল মালিকদের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। উল্টো প্রতি লিটার সয়াবিনের দাম বেঁধে দেয়। হঠাৎ করে প্রয়োজনীয় এই পণ্যের সংকট হওয়ায় বিপাকে পড়েন সাধারণ ভোক্তা। রাজধানী থেকে শুরু সারাদেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই সংকট তৈরি করা হয়।

কিন্তু মিলাররা বলছেন, বাজারে সয়াবিনের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। ডিলার ও পাইকারি বিক্রেতারা কারসাজির মাধ্যমে সংকট সৃষ্টি করেছেন। একে অপরের দোষারোপে পিষ্ট সাধারণ ভোক্তা। দাম বাড়ানোর পরও রাজধানীর বিভিন্ন বাজার থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার দোকানেও মিলছে না সয়াবিন তেল। কোথাও কোথাও পাওয়া গেলে সরকার নির্ধারিত বর্ধিত দামের চেয়ে আরো ২০ টাকা বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতারা।

তবে বাজারে পর্যাপ্ত তেল সরবরাহ করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা। তিনি বলেন, ঈদের আগ থেকে আমরা প্রতিনিয়ত বাজারে সয়াবিন সরবরাহ করেছি। বাজারে সরবরাহে কোনো ধরনের ঘাটতি তাদের পক্ষ থেকে ছিল না বলেও দাবি করেন তিনি।

সরেজমিনে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় সয়াবিন তেলের সংকট ছিল চরমে। মহল্লার কয়েক দোকান ঘুরে পাওয়া গেলেও সরকার নির্ধারিত বর্ধিত দামের চেয়েও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে সয়াবিন তেল।

এছাড়াও কিছু কিছু দোকানি বোতলের গায়ে দাম লেখা থাকার কারণে অতিরিক্ত মুনাফা করতে বিকল্প পথ বের করেছেন। পাঁচ লিটারের বোতল খুলে ড্রামে ভরে বেশি দামে বিক্রি করতেও দেখা গেছে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায়। অতিরিক্ত মুনাফার লোভে ঈদের আগে থেকেই ভোক্তার পকেট কাটছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। সরকার প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম ১৯৮ টাকা নির্ধারণ করার পরও ২০০ থেকে ২২০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, দোকানে সয়াবিন তেল নেই; কিন্তু ক্রেতা বাড়তি দামে কিনতে রাজি হলে দোকানিরা বলছে, পাঁচ লিটার তেল দেয়া যাবে, তবে একটু সময় লাগবে। পরে আশপাশের কোনো জায়গা থেকে এনে ক্রেতাকে দেয়া হয়। এমনি পকেট কাটা হচ্ছে ভোক্তার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান কনসার্স কনজুমার সোসাইটির (সিসিএস) নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ ভোরের কাগজকে বলেন, বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে দেশের বাজারে দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। তবে বাজার থেকে হুট করে সয়াবিন কেন ঊধাও হয়ে যাবে। তিনি বলেন, কোনো পণ্য আমদানি করলে কিছু প্রক্রিয়া থাকে। এলসি খোলা থেকে শুরু করে পরিশোধ করে সয়াবিন বাজারজাত করা হয়। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কয়েক মাস সময় লাগে।

ইন্দোনিশিয়া তেল রপ্তানি বন্ধের নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর হুট করে বাজার থেকে উধাও হয়ে গেল সয়াবিন। অর্থাৎ বাজারে একটা কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে, এটা খুবই পরিষ্কার। আর এই প্রক্রিয়ায় যখন ভোক্তার পকেট কাটা শুরু হয়েছে, তখন পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারাও এই সুযোগ নেয়। সয়াবিনের সরবরাহকারী থেকে খুচরা, পাইকারিসহ সব পর্যায়ের বিক্রেতারা এর সঙ্গে জড়িত। সাধারণ ভোক্তাকে জিম্মি করে মুনাফা লুটেছে এই অসাধু সিন্ডিকেট।

জানা গেছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে কয়েক দফা দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স ও বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন। এদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দাম বাড়ানো হয়। আর তেলের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে খুচরা পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেয় সরকার। পরবর্তীতে আমদানি পর্যায়ে ১০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করে দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। দু মাস পর অর্থাৎ গত ২৮ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়া সরকার পামওয়েল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর পরই অস্থিরতা শুরু হয় বাংলাদেশের বাজারে। মাথাচাড়া দেয় অসাধু সিন্ডিকেট।

আগের দামে কেনা তেলের সরবরাহ বন্ধ করে বাজার থেকে উধাও করে দেয় সয়াবিন। এতে বিপাকে পড়েন সাধারণ ভোক্তা। সর্বশেষ বাধ্য হয়ে সরকার দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার সংগঠনটি তেলের নতুন দামের একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। এতে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয় ১৯৮ টাকা। এক বছর আগেও যা ছিল ১৩৪ টাকা।

এর আগে গত ৬ ফেব্রুয়ারি তা নির্ধারণ করা হয় ১৬৮ টাকা। পরে গত ২০ মার্চ লিটারে ৮ টাকা কমিয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ঠিক করা হয় ১৬০ টাকা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App