×

সাহিত্য

দ্বারে এসে দিল ডাক পঁচিশে বৈশাখ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২২, ১২:১৫ এএম

শান্তিনিকেতনের ছায়া সুনিবিড় প্রান্তরে সরবে নীরবে বহুবার বাঙালির প্রাণের কবি রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন পালিত হয়েছে। তবে ৬২তম জন্মজয়ন্তী উদযাপন ছিল অপূর্ব এক প্রাপ্তির। তখন ১৩২১ সন। শান্তিনিকেতনের বৃক্ষ ছায়ায় গ্রীষ্মের দিনগুলোর সঙ্গে নিমগ্ন কবি উপহার দিয়েছিলেন ‘পঁচিশে বৈশাখ’ কবিতাখানি। জন্মদিনে সেই কবিতায় লিখেছিলেন— রাত্রি হল ভোর/আজি মোর/জন্মের স্মরণ পূর্ণবানী, প্রভাতের রৌদ্রে—লেখা লিপিখানি/হাতে করে আমি/দ্বারে আসি দিল ডাক/পঁচিশে বৈশাখ।

আজ ১৪২৯ বঙ্গাব্দে ফের দ্বারে আসি দিল ডাক পঁচিশে বৈশাখ। ১৬২তম রবীন্দ্রজয়ন্তী আজ। বাঙালির যাপিত জীবনাচরণের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে থাকা বিশ্বকবির জন্মতিথি। যিনি অমর সৃষ্টি গল্প, কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প ও অসংখ্য গানে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে বিশ্বের দরবারে মর্যাদার আসনে তুলে ধরেছিলেন। বাঙালির অস্তিত্ব ও চেতনার সাথে মিশে আছেন। তার হাত ধরেই বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিশ্বসাহিত্যের এক অনন্য জায়গা দখল করে আছে। সকল গন্ডি ও নির্দিষ্ট সীমারেখা পেরিয়ে নিজের অমর সৃষ্টির সুবাদে হয়েছেন বিশ্বকবি। তার সাহিত্যকর্ম, সঙ্গীত, জীবনদর্শন, মানবতা, ভাবনা— সবকিছুই সত্যিকারের বাঙালি হতে অনুপ্রেরণা দেয়।

আশি বছরের জীবন সাধনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার জন্ম এবং মৃত্যুকে একাকার করে তুলেছেন অজস্র অমরতার শ্বাশত বার্তায়। তাই জন্মদিন নিয়ে তিনি লিখেছিলেন- ‘ওই মহামানব আসে/ দিকে দিকে রোমাঞ্চ/ মর্ত্যধুলির ঘাসে ঘাসে’। সেই তিনিই আবার জীবন সায়াহ্নে লিখলেন- ‘মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক আমি তোমাদেরই লোক।’ তিনি ছিলেন একাধারে কবি, নাট্যকার, কথাশিল্পী, চিত্রশিল্গী, গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক, ছোট গল্পকার ও ভাষাবিদ। জীবনের শেষ পর্যায়ে তিনি চিত্রকর হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেন।

গল্পে, উপন্যাসে, কবিতায়, সুরে ও বিচিত্র গানের বাণীতে, অসাধারণ সব দার্শনিক চিন্তাসমৃদ্ধ প্রবন্ধে, সমাজ ও রাষ্ট্রনীতিসংলগ্ন গভীর জীবনবাদী চিন্তাজাগানিয়া লেখায় এমনকি চিত্রকলায়ও সর্বত্রই রবীন্দ্রনাথ চির নবীন।

তার কাছ থেকেই আমাদের জাতীয় সঙ্গীত ও ‘বাংলাদেশ’ নামের বানানটি নেয়া হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান বাঙালি তথা বাংলাদেশীদের যাপিতজীবনের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে। সৃষ্টিই যে এই নশ্বর জীবনকে অবিনশ্বরতা দেয়, সে কথা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন বলেই তিনি অমন দৃঢ়তায় বলতে পেরেছেন ‘মৃত্যু দিয়ে যে প্রাণের/ মূল্য দিতে হয়/ সে প্রাণ অমৃতলোকে/ মৃত্যুকে করে জয়।’

প্রথম এশীয় হিসেবে ১৯১৩ সালে ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করে রবিঠাকুর বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের দরবারে বিশেষ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছেন।

বাংলা ১৩৪৮ সালের ২২ শ্রাবণের (ইংরেজি ১৯৪১ সালের ৬ আগষ্ট) বাদলঝরা দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে ইহলোকের মায়া ত্যাগ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কবিগুরুর মৃত্যুতে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে ওইদিনই শোকার্ত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন ‘দুপুরের রবি পড়িয়াছে ঢলে অস্তপারে কোলে/ বাংলার কবি শ্যাম বাংলার হৃদয়ের ছবি তুমি চলে যাবে বলে/ শ্রাবণের মেঘ ছুটে এলো দলে দলে।’

কর্মসূচি নানা বর্ণাঢ্য আয়োজনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী উদযাপন করবে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন। কবিকে নিয়ে আলোচনা, তার কবিতা, গান এবং গীতিনৃত্যনাট্যসহ ইত্যাদি নানা আয়োজনে সাজানো থাকবে জন্মদিনের অনুষ্ঠানমালা।

বিটিভিসহ বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেল ও বেতারেও সম্প্রচার করা হবে বিশ্বকবির জন্মজয়ন্তীর নানা অনুষ্ঠানমালা। জাতীয় সংবাদপত্রগুলোও বিশেষ সাময়িকী প্রকাশ করার কথা রয়েছে।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। ‘মানবতার সংকট ও রবীন্দ্রনাথ’ প্রতিপাদ্যে এবারের জন্মদিনের মূল অনুষ্ঠান হবে রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহের রবীন্দ্র কুঠিবাড়িতে। আজ রবিবার দুপুর আড়াইটায় আয়োজনের উদ্বোধন করবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন রিমি। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরিবেশনায় ৩০ মিনিটের সাংস্কৃতিক পর্ব। এছাড়া সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, নওগাঁর পতিসর ও খুলনার দক্ষিণডিহি এবং পিঠাভোগেও অনুষ্ঠিত হবে কবির জন্মদিনের অনুষ্ঠানমালা। বাংলা একাডেমিসহ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সকল দপ্তর ও সংস্থাসমূহ এ উপলক্ষে বিশেষ আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, রচনা ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহ যথাযথ কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে পালন করবে কবিগুরুর জন্মদিন। কবিগুরুর ১৬১তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জাতীয় পর্যায়ের মূল অনুষ্ঠানসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানসমূহে ব্যাপক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

অনুষ্ঠানস্থলের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। তাছাড়া কবির স্মৃতিবিজড়িত জেলাগুলোসহ সকল জেলায় বিশ্বকবির ছবি, কবিতা, পরিচিতি ও চিত্রকর্ম প্রদর্শন এবং বিভিন্ন সড়ক দ্বীপসমূহে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার ও ডিজিটাল ডিসপ্লে স্থাপন এবং আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করার কথা রয়েছে। এসব তথ্য জানিয়েছেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার ফয়সাল হাসান।

শিল্পকলা একাডেমি কবির জন্মদিন উপলক্ষে তিনদিনের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে শিল্পকলা একাডেমি। এছাড়া আরো থাকছে কবির কবির চিত্রশিল্প এবং কবির উপর নির্মিত ডকুমেন্টারির মাসব্যাপি প্রচারের আয়োজন।

ছায়ানট রবীন্দ্রজয়ন্তী উদযাপনে আজ রবিবার দুইদিনের রবীন্দ্র উৎসবের আয়োজন করেছে সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট। প্রতিদিন সন্ধ্যা সাতটায় ছায়ানট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে দুইদিনের এই উৎসব।

উৎসবে থাকছে একক ও সম্মেলক গান, নৃত্য, পাঠ—আবৃত্তি। ছায়ানটের শিল্পীরা ছাড়াও এতে আরো অংশ নেবেন আমন্ত্রিত শিল্পীরাও।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App