×

সাহিত্য

মহিলা সমিতিতে মঞ্চায়িত হলো ‘হাসনজানের রাজা’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২২, ১২:৩৬ এএম

মহিলা সমিতিতে মঞ্চায়িত হলো ‘হাসনজানের রাজা’

প্রাঙ্গণেমোর নাট্যদল গতকাল ৬ মে দুই দশকে পদার্পন করেছে। এ উপলক্ষে গতকাল সন্ধ্যায় বেইলি রোডের মহিলা সমিতির ড. নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে ‘হাছনজানের রাজা’ নাটকটির মঞ্চায়ন করা হয়েছে।

নাটকটি রচনা করেছেন বিশিষ্ট লেখক শাকুর মজিদ আর নির্দেশনা দিয়েছেন অনন্ত হিরা। মঞ্চ পরিকল্পনা করেছেন ফয়েজ জহির। সংগীত পরিকল্পনা করেছেন রামিজ রাজু। আলোক পরামর্শক ঠাণ্ডু রায়হান। পোশাক পরিকল্পনা করেছেন নূনা আফরোজ। ‘হাসনজানের রাজা’ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন রামিজ রাজু, আউয়াল রেজা, মাইনুল তাওহীদ, সাগর রায়, শুভেচ্ছা রহমান, সবুক্তগীন শুভ, জুয়েল রানা, আশা, প্রকৃতি, প্রীতি, সুজয়, সুমন, বাঁধন ও রুমা। ‘হাছনজানের রাজা’ প্রাঙ্গণেমোরের ১৩তম প্রযোজনা।

সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, রামপাশা, লক্ষণ শ্রী আর সিলেটের একাংশ নিয়ে পাঁচ লাখ বিঘার বিশাল অঞ্চলের জমিদার ও মরমী কবি হাছন রাজার জীবনী অবলম্বনে নাটকটির কাহিনী আবর্তিত হয়েছে। হাছন রাজা (১৮৫৪-১৯২২) বর্তমান সুনামগঞ্জ জেলার একজন সামন্তপ্রভু ছিলেন। কিশোর বয়সে পিতা ও মাতা উভয়ের কাছ থেকে পাওয়া বিশাল জমিদারির মালিকানা চলে আসে। অর্থ, বেহিসাবী সম্পদ আর ক্ষমতার দাপটে বেপরোয়া জীবন-যাপনে অভ্যস্থ হয়ে পড়েন তিনি। জাগতিক লোভ-লালসা, ক্ষমতায়ন ও জবরদখল করেও তিনি তার প্রতিপত্তি বাড়ানোর কাজে প্রবৃত্ত ছিলেন। কিন্তু এক সময় তার ভেতরের ভ্রান্তি ঘুচে যায়। মধ্য পঞ্চাশে এসে তিনি ভিন্ন এক মানুষে পরিণত হয়ে যান। তার বোধ হয় যে এ জগত সংসারের সব অনাচারের মূলে আছে অতিরিক্ত সম্পদ। কিছুদিনের জন্য অতিথি হয়ে আসা মানুষেরা আসলে মহাশক্তির কাছে একেবারে নশ্বর।

তিনি তার সম্পদ জন কল্যাণের জন্য উইল করে দিয়ে কয়েকজন সঙ্গিনীকে নিয়ে হাওড়ে হাওড়ে ভাসতে থাকেন। আর এর মধ্যে খুঁজতে থাকেন সেই মহা পরাক্রমশীল স্রষ্টাকে। সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজতে খুঁজতে এক সময় আবিষ্কার করেন, তার নিজের মধ্যেই তার বাস। তার যে পিয়ারিকে সবাই হাছনজান বলে জানে, সেই আসলে হাছন রাজা। জগতের মানুষের কাছে যিনি রাজা বলে চিহ্নিত ছিলেন, হাছন রাজার কাছে সে কেউ নয়, বরং পিয়ারি হাছনজানের ভেতরেই প্রকৃত হাছন রাজা বিরাজমান ছিলেন। হাছন রাজার জীবনের এই দিকগুলো নাটকে তুলে ধরা হয়েছে।

তবে নাটকটিতে গতানুগতিক ধারায় হাসন রাজার জীবনী তুলে ধরা হয়নি; বরং হাসন রাজা এসেছেন এই প্রজন্মের তারুণ্যের আড্ডায়, ফেসবুকে। তরুণেরা নৌকায় ভ্রমণে বের হন ভরা পূর্ণিমা রাতে। একসময় তাদের সঙ্গে দেখা হয় হাসন রাজার। তরুণদের সেই আড্ডায় সঙ্গিনীদের নিয়ে মিশে যান হাসন রাজা। কখনো তার সঙ্গে সেলফি তোলেন, তাকে নিয়ে ফেসবুকে লিখছেনও তরুণেরা! কখনো বাস্তবে, কখনো কল্পনায়।

গানে আর সংলাপে এগিয়ে যায় গল্প। দর্শক দেখলেন যৌবনে জমিদার হাসনের বেপরোয়া জীবন এবং মায়ের মৃত্যুর পর জীবন সম্পর্কে তার উপলব্ধি, মরমি সাধক হয়ে ওঠার গল্প।

গান-সংলাপ-আলো-ছায়ায় বাংলাদেশের ভাটি অঞ্চল হয়ে ওঠে মঞ্চ। সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, লক্ষণছিড়ি আর রামপাশা মিলিয়ে যে বিশাল ভাটি বা হাওর অঞ্চল, সেখানকার পাঁচ লাখ বিঘায় জমিদারি ছিল যার, মঞ্চে দেখা যায় সেই দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরী জমিদারের বর্ণিল ও বৈচিত্র্যময় জীবন। সেই জীবনের এক প্রান্তে হাসন রাজা অত্যাচারী প্রেমিক, স্বেচ্ছাচারী, বেখেয়ালি। অন্য প্রান্তে হাসন ত্যাগী, মানবদরদি। বিশাল জমিদারি ভাগ-বাঁটোয়ারার মাধ্যমে জনহিতকর কাজের জন্য ওয়াক্ফ করে পিয়ারির সন্ধানে ভাওয়ালি নৌকায় উঠে বসা। যার যাত্রার অন্তিম উপলব্ধি পিয়ারির মাঝে নিজেকে এবং সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজে পাওয়ার মধ্য দিয়ে। নাটকের শেষে দেখা যায়, আলো নিভে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মিলিয়ে যেতে থাকেন হাসন রাজা। বাস্তবে ফিরে আসেন তরুণেরা।

শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় একই হলে ররীন্দ্রনাথের ১৬১তম জন্মদিন উপলক্ষে ‘আমি ও রবীন্দ্রনাথ’ নাটকটি মঞ্চায়ন হবে।

প্রাঙ্গণেমোর নাট্যদল গত দুই দশকের সোনালী অর্জনের মধ্যে প্রযোজনা করেছে ১৫টি, প্রদর্শনী করেছে ৪০১টি, নাট্য উৎসবের আয়োজন করেছে ১১টি, কর্মশালার আয়োজন করেছে ১৫টি, দেশে প্রদর্শনী করেছে ৩৬২টি, দেশের বাইরে প্রদর্শনী করেছে ৩৯টি, ঢাকার বাইরে প্রদর্শনী করেছে ৭৭টি, ঢাকায় প্রদর্শনী করেছে ২৮৫টি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App