×

সম্পাদকীয়

ঈদে সড়কে ঝরল ৭৪ প্রাণ : মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২২, ০১:৩১ এএম

এমন কোনো দিন নেই যে, সংবাদমাধ্যমে কোনো সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের খবর না থাকে। সড়কে এ রকম প্রাণহানি মর্মান্তিক, অনাকাক্সিক্ষত। ঈদযাত্রা অনেকের আনন্দ বিষাদে রূপ নিয়েছে। ঈদের ছুটিতে ২-৫ মে পর্যন্ত ৪ দিনে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৭৪ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ময়মনসিংহে ৮ জন মারা যান। ঈদের ছুটিতে ৪ দিনে ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার ভোরে উত্তরায় ব্যক্তিগত গাড়ি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে ২ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। উত্তরা পশ্চিম থানার ১৩নং সেক্টরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঢাকা ছাড়াও কুমিল্লা, জয়পুরহাট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, যশোর, পঞ্চগড়, চট্টগ্রাম নগর, পটিয়া, কক্সবাজার চকরিয়া, বরিশাল, বাগেরহাট, শরণখোলা, ঝিনাইদহ, মহেশপুর, ঝালকাঠির নলছিটি, পাবনার ঈশ্বরদী, গোপালগঞ্জ, পাবনা, সাতক্ষীরা, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, শেরপুর, মেহেরপুর, হবিগঞ্জ, ধামরাই, মৌলভীবাজার, টাঙ্গাইল ও নাটোরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির খবর আসছে। এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। আগামী ২ দিন কর্মস্থলে ফিরবে মানুষ। সচেতন না হলে দুর্ঘটনার প্রাণহানির আশঙ্কা আরো বেড়ে যাবে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে সামাজিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া সংগঠন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’র (নিসচা) তথ্যানুযায়ী, সাম্প্রতিক কালে প্রতি বছরই গড়ে ২ হাজারের ওপরে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। এসব দুর্ঘটনায় বছরে গড়ে ৫ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন। সংখ্যা যাই হোক, সড়কে মৃত্যুর মিছিল যে থামানো যাচ্ছে না তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (এআরআই) গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৩ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহনের বেপরোয়া গতি। কিন্তু গতি নিয়ন্ত্রণ, মহাসড়কে ছোট যানবাহন বন্ধ ও বেপরোয়া যানবাহন চলাচল বন্ধে সাফল্য নেই। এখনো দেশের সড়ক-মহাসড়কে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে ১০ লাখ নছিমন-করিমন-ইজিবাইক। অবাধে আমদানি হচ্ছে অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক। দেশব্যাপী অন্তত ৫ লাখ ফিটনেসবিহীন বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, হিউম্যান হলার অবাধে চলছে। নিবন্ধনবিহীন কয়েক লাখ অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে সড়ক-মহাসড়কে। এসব যানবাহন সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান উৎস। দুর্ঘটনায় দায়ীদের শাস্তির নজিরও তেমন নেই। যার ফলে চালকরা ইচ্ছামতো গাড়ি চালান। হাইরিস্ক নিয়ে ওভারটেক করেন। এছাড়া চালকদের প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে, যা সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। ফুটপাত দিয়ে মানুষ চলাচলের অবস্থা নেই। কাজেই মানুষ বাধ্য হয়ে মূল রাস্তায় হাঁটছে এবং দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। বাসে সিট বেল্ট বাঁধার ব্যবস্থা, হেলমেটে ব্যবহার কম থাকায় ছোটখাটো দুর্ঘটনাতেও প্রাণহানি ঘটছে। ইদানীং মোবাইল ফোন কানে রেখে গাড়ি চালানো যেন ফ্যাশন অনেক চালকের কাছে। যদিও এ কাজ থেকে বিরত রাখতে আইন আছে। কিন্তু সে আইনের ব্যবহার হয় না। এ কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনার জন্য যা-ই দায়ী হোক না কেন, দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে হবে। সড়ক নিরাপত্তায় যুক্ত বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে সরকারের ইতোপূর্বে নেয়া পরিকল্পনাগুলো ছিল গতানুগতিক। এর মাধ্যমে কী অর্জিত হয়েছে আর কী অর্জিত হয়নি বা কী অর্জন করা প্রয়োজন তার সঠিক কোনো ব্যাখ্যা নেই। আমরা সড়ক নিরাপত্তায় সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার বাস্তবায়ন দেখতে চাই। সড়কে মৃত্যুর মিছিল আর যেন দীর্ঘ না হয়। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সব রকম ব্যবস্থা নিতে হবে। দায়ীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সড়ক পরিবহন নতুন আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি নিরাপদ চলাচলের বিষয়টি পরিবহন সংশ্লিষ্ট সবার উপলব্ধিতে আনতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App