×

জাতীয়

মুক্তির আনন্দে নগরবাসী ঈদ উদযাপন : চেনারূপে রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলো

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ মে ২০২২, ১২:৩৩ এএম

মুক্তির আনন্দে নগরবাসী ঈদ উদযাপন : চেনারূপে রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলো

রাজধানীতে বিনোদন কেন্দ্রগুলো করোনায় মৃত্যুহীন দিনে উদযাপিত এবারের ঈদে চেনারূপে ফিরেছে। ছবি: ভোরের কাগজ

করোনা মহামারির বিপত্তি কাটিয়ে দুই বছর পর দেশে চেনা রূপে ফিরল ঈদ উদযাপন। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর ছিল নানা বিধিনিষেধ। জনসমাগম না করা, দূরত্ব বজায় রাখা, করমর্দন- কোলাকুলি থেকে বিরত থাকা ও মাস্ক পরিধানসহ ছিল নানান স্বাস্থ্য নির্দেশনা। যার ফলে ঈদ উদযাপন ছিল অনেকটাই মলিন। এবার বিধিনিষেধের কঠোরতা না থাকায় দুই বছরের ঈদ উদযাপনের দুঃখ পুষিয়ে নিলেন রাজধানীবাসী। অনেকটা দুই বছর পর যেন মুক্তির আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ঈদুল ফিতর পালন করলেন রাজধানীবাসী। ঈদের দিন বিকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ছিল মানুষের বাঁধভাঙা উচ্ছ¡াস।

ঈদের দিন সকালের বৃষ্টিতে আনন্দ উদযাপনে কিছুটা ছন্দপতন ঘটলেও মধ্য দুপুরে সূর্যের হাসিতে তা ফিরে আসে দ্বিগুণ হয়ে। এর নজির নজরে হলো জাতীয় চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের বিপুল সমাগম। চিড়িয়াখানা যেন দর্শনার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। যেখানে মানুষের ঢল সামাল দিতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগও করে দেয় কর্তপক্ষ। চিড়িয়াখানায় ঢুকতে এবং বেরুতে গলদঘর্ম হয়েও দর্শনাথীরা খুব খুশি। তবে ভীড়ের কারণে ৬০টি শিশু হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে এ আনন্দ যজ্ঞে। অবশ্য কর্তপক্ষের সহায়তায় তাদের আবার খুজেও পাওয়া গেছে।

চিড়িয়াখানার কিউরেটর মো. মজিবুর রহমান বলেন, চিড়িয়াখানায় ঈদের দ্বিতীয় দিনে লক্ষাধিক দর্শনার্থীর সমাগম ঘটেছে। বলা যায়, স্মরণকালের স্মরণীয় সমাগম। এতো বিপুল পরিমান দর্শনার্থীর উপস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে আমাদের।

চিড়িয়াখানার দর্শনার্থী রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মহিবুল হাসান ভোরের কাগজকে বলেন, গত দুবছর করোনার কারণে নানারকম কড়াকড়ির কারণে ইচ্ছে থাকা সত্বেও ঈদ আনন্দ করতে পারিনি। এবার তো আর করোনার ভয় নেই। তাই বাচ্চাটাকে নিয়ে এলাম চিড়িয়াখানায়। সে বেশ এনজয় করেছে। একই কথা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী জিসান আহসানেরও। তিনি বলেন, গত দুই বছর বিধিনিষেধের ঘেরাটোপে বন্দী ছিলাম। কোথাও যাওয়া বা কাউকে বাসায় দাওয়াত দিতেই দ্বিধা ছিলো। কিন্তু এখন আর সেসব সমস্যা নেই। তাই চিড়িয়াখানায় এসে ভিন্নভাবে ঈদ উদযাপন করছি। বেশ কিছু অনিয়ম নজরে এলেও সবকিছু মিলে ভালোই লাগছে।

চিড়িয়াখানার পর সবচে বেশিসংখ্যক দর্শনার্থীর সমাগম দেখা গেছে হাতির ঝিলে: ঈদের নতুন পোশাকের রঙে হাতিরঝিল রূপ নিয়েছে যেন এক টুকরো রঙিন ক্যানভাসে। যেখানে বড়দের পাশাপাশি শিশুকিশোরদের আনন্দ ও উচ্ছ¡াস করতে দেখা গেছে বেশি। তাদের কোলাহলে গোটা হাতিরঝিল আনন্দ নগরীতে পরিণত হয়েছে। আর দর্শনার্থীদের আগমন উপলক্ষে হাতিরঝিলের ফুটপাতে ফুসকা-চটপটিসহ নানা রকম মুখরোচক খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। ঘোরাঘুরি শেষে এসব দোকানে বসে পছন্দমতো খাবার খেতেও দেখা গেছে। ঈদের

দিন গত মঙ্গলবার সরেজমিনে হাতিরঝিলের এ চিত্র দেখা গেছে।

ডিওএইচএস থেকে মা মাসুমা আজাদকে সঙ্গে নিয়ে হাতিরঝিলে ঘুরতে আসা ইউল্যাব শিক্ষার্থী রুচিরা আজাদ চৌধুরী বলেন, গত দ্ইু বছর গৃহবন্দী ঈদ কেটেছে অনেক কষ্টে। হাতির ঝিলের মুক্ত পরিবেশে এসে খুব ভালো লাগছে। যদিও ঈদ আনন্দ আসলে ছোটদেরই, তাদের উচ্ছাস আর আনন্দ দেখে ভালোই লাগছে। সকালের বৃষ্টিতে বিকেলের ঠাণ্ডা বাতাসটা পুরো পরিবেশটাকে মনোরম করে তুলেছে। ভেবেছিলাম এই গরমে ঈদ উদযাপন হবে ভয়াবহ অস্বস্তির। কিন্তু এক ধরণের ঠাণ্ডা আরাম আনন্দটা বাড়িয়ে দিল।

রাজধানীর মিরপুর থেকে পরিবার নিয়ে হাতিরঝিল ঘুরতে এসেছেন অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসী হেফাজুর রহমান। তিনি বলেন, তিন বছর পর দেশে এসেছি সবার সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে। কিন্তু সকালের বৃষ্টিতে মনটা বিষাদে ভরে গিয়েছিল। মনে হয়েছিল, সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেল। মধ্য দুপুরের পর রোদ যেন মনটাকে চনমন করে তুলল। বরং বৃষ্টি পরিবেশটাকে যেন মিষ্টি করে তুলেছে।

ঈদে যান চলাচল অনেক কমে যাওয়ায় ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল নিয়েও ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে অনেককে। আবার অনেককে দেখা গেছে, হাতিরঝিলের ওয়াটার ট্যাক্সিতে ঘুরে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে।

বিনোদন কেন্দ্রের পাশাপাশি এবারের ঈদে স্টার সিনেপ্লেক্সসহ রাজধানীর অন্যান্য সিনেমা হলগুলোতেও বিভিন্ন দেশি-বিদেশি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়েছে। ভিড়ও ছিল বেজায় রকম। এছাড়া আগারগাঁওস্থ বিমানবাহিনী জাদুঘর, বিজয় সরণির বঙ্গবন্ধু নভো থিয়েটার, লালবাগ কেল্লা, আহ্সান মঞ্জিল, জাতীয় জাদুঘর, শিশুমেলা, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর, বুড়িগঙ্গা ইকো পার্ক, যমুনা ফিউচার পার্ক, ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক, ৩০০ ফুটসংলগ্ন পূর্বাচল বাজারসহ যেখানেই সবুজের সমারোহ ছিল সেখানেই ভিড় জমিয়ে আনন্দ উদযাপন করতে দেখা গেছে দর্শনার্থীদের। অনেককে দেখা গেছে ফাঁকা ঢাকার পথে পথে দল বেঁধে আড্ডা আর ঘুরে বেড়াতে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App