×

মুক্তচিন্তা

তীব্র দাবদাহে বিপর্যস্ত জনজীবন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ মে ২০২২, ০১:১৯ এএম

তীব্র দাবদাহে বিপর্যস্ত জনজীবন
ঋতুরাজ বসন্তের পরই গ্রীষ্ম হাজির হয়েছে তার নিজস্ব সৌন্দর্য নিয়ে। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। কোথাও মিলছে না স্বস্তির নিশ্বাস। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো কষ্টে দিন অতিবাহিত করছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। লবণাক্ত আবহাওয়ার কারণে মাঝারি মাত্রার তাপে ও জনজীবনে বাড়ছে ভোগান্তি। দুর্ভোগ বেড়েছে নানা পেশার কর্মজীবী মানুষদের। অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষই কৃষিনির্ভর। সকালের মিষ্টি রোদ ও ঠাণ্ডা হাওয়ায় ঘরের বাইরে কাজ করা সম্ভব হলেও দুপুরের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে রোদের প্রখরতা। তখন ঘরের বাইরে যাওয়ার কোনো উপায় থাকছে না। দক্ষিণাঞ্চলে নদীর সংখ্যা বেশি হলেও প্রচণ্ড রোদে শুকিয়ে যাচ্ছে নদী, নালা, খাল, বিল। এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির সংকট। অগভীর নলকূপগুলো অধিকাংশই পড়ে আছে অকেজো হয়ে। যে কয়েকটি সচল রয়েছে সেগুলোর পানিও পানের উপযোগী নয়। লবণাক্ত ও আর্সেনিকে ভরা। এলাকার অধিকাংশ মানুষ পুকুরের পানি ফিল্টার করে পান করে। কিন্তু পুকুরগুলোও মৃত প্রায়। কয়রা উপজেলায় খাবার পানির সংকট এতটাই প্রকট আকার ধারণ করে যে, খাবার পানি আনতে দেড় থেকে দুই কিলোমিটার দূরে যেতে হয় পানি আনতে। এলাকার স্থানীয় নারীদের মতে, মূলত লবণ পানিতে ভরা এ অঞ্চল, টিউবওয়েলের পানিও পান করা যায় না। সেজন্য দূর থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়। তাছাড়া পুকুরগুলোতে পানিস্বল্পতার কারণে প্রায় ফিল্টার বা পিএসএফগুলোও অকেজো হয়ে পড়েছে। যেহেতু খাবার পানির উৎস পুকুর, তাই এগুলো শুকিয়ে যাওয়ার কারণে পানির খোঁজে নারীরা পাড়ি দেয় মাইলের পর মাইল। শুধু নারীরা নয়, অনেক পুরুষও শামিল হয় এ সংগ্রামে। এদিকে জীবন বাঁচাতে অনেকে পান করে পুকুরের অস্বাস্থ্যকর পানি। অনেক চায়ের দোকান, মিষ্টির দোকানে অস্বাস্থ্যকর পানি ব্যবহারের ফলে এসব খাবার গ্রহণে অসুস্থ হয়ে পড়ে জনগণ। আক্রান্ত হচ্ছে নানারকম পানিবাহিত রোগ দ্বারা। শুধু পানির সংকটই হয়, এলাকার জনজীবনে অভিশাপের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে লোডশেডিং। প্রচণ্ড তাপে মানুষ যখন ঘরের ভেতরে অবস্থান নিলেও দেখা মেলে না বিদ্যুতের। অব্যাহত লোডশেডিংয়ের কারণে তাদের পড়াশোনায় চরমভাবে বিঘœ ঘটছে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিদ্যুৎনির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অবস্থা আরো করুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই ব্যাটারিচালিত ভ্যান বা ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। অনবরত লোডশেডিংয়ের কারণে চার্জের অভাবে ভ্যান, ইজিবাইকগুলো অচল হয়ে পড়ে আছে। ফলে থমকে যাচ্ছে অনেকের জীবন ও জীবিকা। শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রতি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার মতো যুগান্তকারী কাজ সম্ভব করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বিদ্যুতায়নের ফলে মানুষের জীবন মানে পরিবর্তনের আশা ব্যক্ত করেন তিনি। কিন্তু কিছু দুর্নীতিপরায়ণ মানুষের জন্য স্বপ্ন হয়তো স্বপ্নই থেকে যাবে। গ্রীষ্মের দাবদাহে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন দক্ষিণবঙ্গবাসী। সুপেয় পানির অপর্যাপ্ততা, ঘন ঘন লোডশেডিং সবমিলিয়ে হিমশিম খাচ্ছে এলাকার জনগণ। দক্ষিণবঙ্গে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন পানির সংকট নিরসন। এ লক্ষ্যে বেশি বেশি পুকুর খনন ও পিএসএফ নির্মাণ করতে হবে। এবং বিদ্যুতের অপর্যাপ্ততা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সেই সঙ্গে প্রচণ্ড গরমে শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে জনসাধারণের সচেতনতা কাম্য। চামেলী বৈরাগী শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App