×

সারাদেশ

সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের ঢল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ মে ২০২২, ০৪:০৯ পিএম

সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের ঢল

বুধবার সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে প্রকৃতির নির্মল ছোঁয়া পেতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয়। ছবি: ভোরের কাগজ

ঈদের ছুটি কাটাতে সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। স্বচ্ছ নীল জলরাশি, পাহাড়ে মেঘের লুকোচুরি, দিগন্ত বিস্তীর্ণ হাওরে শান্ত জল, পাল তোলা নৌকা, পাখির কলতান, পাহাড়ে জুম চাষ, হিজল করচের সারি, ভিন্ন ভাষার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বৈচিত্রময় সংস্কৃতি কি নেই সিলেটে! পর্যটনের অফুরন্ত সম্ভাবনাময় সিলেটে প্রকৃতির নির্মল ছোঁয়া পেতে প্রতিদিনই ছুটে আসছেন অসংখ্য পর্যটক।

তাইতো সিলেটের পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রগুলোয় ঈদের দ্বিতীয় দিন বুধবার সকাল থেকে ভিড় শুরু হয়। পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রতিদিন প্রায় দুই লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটছে সিলেটে। গত দুই বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার পর্যটকের ভাটা কাটিয়ে সর্বোচ্চ উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। তবে পর্যটন এলাকায় যাওয়া আসার কয়েকটি সড়ক ভাঙাচোরা আর খানাখন্দে ভরা। বিশেষ করে সড়কের বেহাল দশার কারণে বিছনা কান্দিতে বেড়াতে আসা পর্যটক-দর্শনার্থীরা পড়েন চরম বিপাকে। তবুও পর্যটকদের ভিড় কমেনি।

কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। পর্যটকদের পদচারণায় সরব হয়ে উঠেছে শহরের আবাসিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট সেন্টার এবং গেস্টহাউসগুলো। কেউ কেউ সিট খালি না পেয়ে বিকল্প হিসেবে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে উঠেছেন। অনেকে আবার ভ্রমণে এসে কোথাও থাকার ব্যবস্থা করতে না পেরে কিছু পর্যটন স্পট দেখে দিনের বেলাই ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

এ বিষয়ে ভোরের কাগজ গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম জানান, ঈদের দিন থেকে সিলেটের গোয়াইনঘাটের সবকটি পর্যটন স্পট লোকে লোকারণ্য। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পরিবার-পরিজন নিয়ে সমবেত হয়েছেন হাজার হাজার পর্যটক। ঈদের দ্বিতীয় দিন বুধবার সকাল থেকে গোয়াইনঘাটের জাফলং, মায়াবী ঝরনা, রাতারগুলে পর্যটকেরা ভিড় শুরু করেন। বুধবার সকাল থেকে বেশি ভিড় ছিল জাফলংয়ে। এ ছাড়া কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর ও কোম্পানীগঞ্জ সড়কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাইটেক পার্কে ভিড় ছিল পর্যটকদের। জৈন্তাপুর উপজেলার লালাখাল এবং সিলেট নগরের অভ্যন্তরের ধোপাদিঘীর পাড় এলাকার এম এ জি ওসমানী শিশু পার্ক ও শহরতলীর দক্ষিণ সুরমা এলাকায় শেখ হাসিনা শিশু পার্কে ছিল স্থানীয় পর্যটকদের ভিড়। ঈদের তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবারও পর্যটকদের ঢল অব্যাহত ছিলো।

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং পর্যটন কেন্দ্রের ব্যবসায়ী ইলিয়াস উদ্দিন লিপু বলেন, ঈদের দিন বিকেল থেকেই পর্যটকদের আনাগোনা বৃদ্ধি পায়। স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, জাফলংয়ের প্রায় সব হোটেলের কক্ষ বুকিং করে রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, বুধবার দুপুরের পর থেকে জাফলং বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। কেউ হারিয়ে গেলে ভিড়ের মধ্যে খুঁজে পাওয়া মুশকিল, এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়।

সিলেটের নয়নাভিরাম বিছনাকান্দি থেকে ঘুরে এসে ঢাকার পর্যটক হোসেন মিয়া জানান, ঈদের আনন্দ পরিবার-পরিজনদের নিয়ে ভাগাভাগি করতেই সিলেটে আসা। আর সিলেটে আসা মানেই জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুল ঘুরে বেড়ানো। সিলেটের এই পর্যটন স্পটগুলো রক্ষণাবেক্ষণ এবং পর্যটন খাতে বিনিয়োগ করলে সরকার প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা আয় করার পাশাপাশি স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার এবং কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।

সিলেটের ট্যুরিস্ট পুলিশ জাফলং জোনের পরিদর্শক মো. রতন শেখ বলেন, পর্যটকরা হচ্ছেন সিলেটের অতিথি। অতিথিদের নিরাপদ ভ্রমণে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশের আগাম প্রস্তুতি ছিল। ঈদে প্রচুরসংখ্যক পর্যটক জাফলংয়ে বেড়াতে আসবেন, সেটি আগেই অনুমান করা গিয়েছিল।

রতন শেখ আরও বলেন, পর্যটকদের জন্য নৌকা ভাড়া নির্দিষ্ট করা রয়েছে। সেখানে তাদের হয়রানি করার সুযোগ নেই। জাফলং জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে মায়াবী ঝরনায়ও পর্যটকদের ব্যাপক সমাগম হয়েছে।

এদিকে ভোরের কাগজ কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি সোহেল রানা জানান, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রেও পর্যটকদের বিপুল উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। সেখানে পর্যটকদের ভারতের পাহাড় বেয়ে নেমে আসা ঠান্ডা স্বচ্ছ পানিতে শরীর ডুবিয়ে গা ভাসিয়ে আনন্দ করতে দেখা গেছে। তবে বেড়াতে আসা পর্যটকের সংখ্যা বেশী হওয়ায় অনেকেই যাতায়তের জন্য প্রয়োজনীয় নৌকা না পেয়ে ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্টে পায়ে হেটেই যেতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকেই আবার নৌকা ঘাট থেকে ফেরত আসছেন।

পর্যটনকেন্দ্রটিতে বেড়াতে আসা নারায়নগঞ্জের ইকবার আহমদ বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে বন্ধুদের সঙ্গে সিলেটে বেড়াতে এসেছি। আজ প্রথম দিনে সাদাপাথর ঘুরে অনেক ভালো লেগেছে।’ শুক্রবার জাফলংসহ অন্যান্য জায়গায় ঘুরবেন তিনি এবং আগামী শনিবার ঢাকায় ফিরে যাবেন বলে জানান ইকবার আহমদ।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং বলেন, পর্যটন স্পটে ঘুরতে আসা পর্যটক দর্শনার্থীদের ভ্রমণ নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসনের তরফে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জাফলংসহ প্রায় সবকটি স্পটেই তথ্য কেন্দ্র স্থাপনসহ পর্যটকদের দিক নির্দেশনায় প্রশাসনিক ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া পর্যটন পুলিশও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App