×

জাতীয়

অস্ত্র হাতে সামনে ছিলেন ঢাকা কলেজের ৫ শিক্ষার্থী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২২, ০১:৫৮ পিএম

অস্ত্র হাতে সামনে ছিলেন ঢাকা কলেজের ৫ শিক্ষার্থী

বৃহস্পতিবার নিউমার্কেট সংঘর্ষে সরাসরি জড়িত পাঁচজন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় ডিবি পুলিশ। ছবি: ভোরের কাগজ

অস্ত্র হাতে সামনে ছিলেন ঢাকা কলেজের ৫ শিক্ষার্থী

নিউমর্কেটে সংঘর্ষ চলাকালে নাহিদকে কোপাতে থাকে গ্রেপ্তারকৃতরা

নিউমার্কেটের সংঘর্ষের ঘটনায় কুরিয়ারকর্মী নাহিদ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ঢাকা কলেজের ৫ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ঢাকা কলেজ হিসাববিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের আব্দুল কাইয়ূম (২৪), সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের পলাশ মিয়া (২৪) ও মাহমুদ ইরফান (২৪), বাংলা বিভাগের ফয়সাল (২৪) এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রথম বর্ষের মো. জুনায়েদ বুগদাদী (১৯)।

[caption id="attachment_346933" align="aligncenter" width="700"] বৃহস্পতিবার নিউমার্কেট সংঘর্ষে সরাসরি জড়িত পাঁচজন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় ডিবি পুলিশ। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

ডিএমপি গোয়েন্দা শাখা জানায়, বিভিন্ন ভিডিও ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তাদেরকে শনাক্ত করে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা সংঘর্ষের সময় অস্ত্রহাতে হেলমেট পরে ফ্রন্টলাইনে ছিলেন। নাহিদকে ঘিরে ধরে হামলায় সরাসরি অংশ নেয় গ্রেপ্তারকৃত এ পাঁচ শিক্ষার্থী।

তবে ভাইরাল হওয়া আরেকটি ফুটেজে নিস্তেজ নাহিদকে কুপাতে থাকা ওই শিক্ষার্থীর নাম ইমন বলে প্রচার করা হলেও তার পরিচয় নিশ্চিত হতে পারেনি ডিবি পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ডিবি প্রধান এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, প্রাথমিকভাবে এই হত্যাকাণ্ডকে পূর্ব পরিকল্পিত মনে হয়নি। সংঘর্ষে তাৎক্ষনিক উত্তেজনায় এমনটি ঘটেছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। তবে গ্রেপ্তারদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

নিউমার্কেট সংঘর্ষে ঘটে যাওয়া দুইটি হত্যা মামলার তদন্ত ডিবি করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঘটনাটি তদন্তের ধারাবাহিকতায় এই হত্যাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পাঁচ জনকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি।

ঘটনার বিবরণে তিনি বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১৮-১৯ এপ্রিল নিউমার্কেট এলাকায় ব্যপক ধ্বংসজজ্ঞ চালানো হয়। এতে নাহিদ ও মোরসালিন নামে দুইজন নিহত হয়। নিউমার্কেটের দুই দোকানকর্মী বাপ্পী ও কাউসারের মধ্যে ঝগড়ার সূত্রপাত ১৮ এপ্রিল বিকেলে। একপর্যায়ে বাপ্পী তার তিন বন্ধু ঢাকা কলেজের তিন শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে আসে। ওই শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছে এমন গুজব ছড়িয়ে উস্কানি দিয়ে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা রাতভর হামলা চালায়। পরদিন ১১ টার দিকে আবার সংঘর্ষ শুরু হলে দুপুর ১ টার দিকে নূরজাহান মার্কেটের সামনে নাহিদ ও চন্দ্রিমা মার্কেটের সামনে মোরসালিন আহত হয়। পরে চিকিৎসাধীস অবস্থায় তারা মারা যান।

ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, নাহিদের মাথার বাম পাশে, পিঠে ও পায়ে কাটা জখম ছাড়াও বিভিন্নস্থানে থেতলানো পাওয়া যায়। মোরসালিনের মাথায় ইট বা ভারি বস্তু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে, তার মাথা থেতলানো ছিলো।

এই দুই হত্যা মামলা ডিবিতে স্থানান্তরের পরপরই ফুটেজ বিশ্লেষণ ও প্রত্যক্ষ স্বাক্ষীদের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, হামলার অগ্রভাবে ছাত্রদের হাতে ধারালো অস্ত্র, স্ট্যাম্প, লাঠি নিয়ে অবস্থান নেয়। পেছন থেকে ইট-পাটকেল ছাত্ররা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করছিলো।

এদিকে নূরজাহান আর হকার্স মার্কেটের কর্মচারী ও হকাররা বিপরীত দিক থেকে ইটপাটকেল মারছিল। নিহত নাহিদ সরাসরি সামনে থেকে মারামারিতে অংশ নেয়। তার হাতে বড় একটি ছাতা ছিলো, যা দিয়ে ইট-পাটকেল ঠেকাচ্ছিলো সে। ছাত্ররা ধাওয়া দিলে পেছন থেকে ব্যবসায়ীরা সরে গেলেও ছাতার কারণে সে দেখতে পায়নি। ছাত্ররা ঘিরে ধরে তার উপর হামলালে একপর্যায়ে সে অচেতন হয়ে পড়ে, পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

ওই হত্যাযজ্ঞে যারা ধারালো অস্ত্র নিয়ে অংশ নেয়, তাদের মধ্যে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা অস্ত্র হাতে হেলমেট পরে হামলার ফ্রন্টলাইনে ছিলেন। এখন তাদেরকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হামলায় কার কি অংশগ্রহন বা কার কি দায় আমরা দেখবো।

মুরসালিন হত্যার বিষয়ে আমরা এখনো কোন ফুটেজ বা প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী পাইনি। যেহেতু মামলা চলছে, হয়তো এটি উদঘাটন হতে আরেকটু সময় লাগবে' উল্লেখ করেন তিনি।

ভাইরাল হওয়া একটি ফুটেজে নিস্তেজ পড়ে থাকা নাহিদকে একজন কোপাতে দেখা যায়, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি। বিভিন্ন মাধ্যমে তার নাম ইমন বলে প্রচার করা হচ্ছে। তবে আমরা এখনও তার পরিচয় নিশ্চিত নই। আগে তাকে গ্রেপ্তার করা হোক, তারপর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। আমরা একদিন অভিযান চালিয়ে হলের রুম থেকে দুটি মোবাইল ফোন নিয়ে আসি, ইমনকে আমরা খুঁজছি।

হামলায় কোনো উদ্দেশ্য ছিল কিনা জানতে চাইলে এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, এখন পর্যন্ত এ ঘটনাকে তাৎক্ষণিক ঘটে যাওয়া বলে মনে হয়েছে। তবে তাদের উদ্দেশ্য ছিল কিনা সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App