×

জাতীয়

অনেক প্রস্তুতির ঈদযাত্রায় শঙ্কা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২২, ০৮:২৮ এএম

অনেক প্রস্তুতির ঈদযাত্রায় শঙ্কা

প্রতীকী ছবি

শুরুতেই ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়, অতিরিক্ত দামে বাসের টিকিট বিক্রি

মহামারি করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে। নেই বিধিনিষেধ। ফলে এবারের ঈদযাত্রায় ঘরমুখী মানুষের ঢলের অনুমান আগে থেকেই। ঈদে বাড়ি যাওয়ার ঢল সামলাতে প্রস্তুতিরও শেষ নেই। সড়কে চাপ সামলাতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এরপরও পরিবহন মালিক ও যাত্রীদের শঙ্কা কাটছেই না। অনেক প্রস্তুতির পর গতকাল বুধবার শুরু হয়েছে ঈদযাত্রা। আজ বৃহস্পতিবার সড়ক মহাসড়কে নামবে যানবাহনের ঢল। রেল ও নৌপথেও ভিড় জমবে আজ। প্রতি বছরের মতো ঢাকা ও আশপাশের জেলা ছাড়বে প্রায় দেড় কোটি মানুষ। তবে এবার ঘরমুখী মানুষের চাপ অন্যান্যবারের তুলনায় একটু বেশিই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এক কথায় ঘরমুখো মানুষের ঢল নামবে এবার।

ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় যাওয়ার সড়কটি যেমন লম্বা, পথে পথে বাধাও অনেক। যমুনা সেতুর পশ্চিম পাড় থেকে রংপুর পর্যন্ত চলছে চার লেইন সড়ক তৈরির কাজ। এই কাজের জন্য অনেক জায়গায় রাস্তা সরু হয়ে গেছে, রাস্তার অবস্থাও তেমন ভালো না।

তবে জয়দেবপুর মোড় থেকে এলেঙ্গা মোড় পর্যন্ত নাওজোর, সফিপুর ও গোড়াই এলাকায় নির্মাণাধীন তিন ফ্লাইওভার যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে ঈদের আগেই। পাশাপাশি সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের নলকা সেতুর এক পাশও খুলে দেয়া হয়েছে। এর আগে হাটিকুমরুল-বগুড়া মহাসড়কের চান্দাইকোনায় আরো একটি নির্মাণাধীন সেতুর একপাশ খুলে দেয়া হয়।

ঈদযাত্রার শুরুতেই গতকাল বুধবার ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। একাধিক ট্রেন আধাঘণ্টা থেকে দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত দেরিতে ছেড়েছে। প্রথম দিনেই ট্রেনের এই অবস্থার কারণে যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। রাজশাহীগামী ধূমকেতু ট্রেনটির মাধ্যমে ঈদযাত্রা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে এই ট্রেনটি ছাড়েনি। এ কারণে সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেনের ঈদযাত্রা শুরু হয়। এর মধ্যেই গতকাল বুধবার ১ মের টিকেট বিক্রি হয়েছে।

এদিকে ট্রেনের মতো ফেরিতেও চরম বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। ফেরির স্বল্পতার কারণে শিমুলিয়া থেকে কাঁঠালবাড়ী এবং পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের উভয়দিকে যানজট সৃষ্টি হয়। সড়কপথে ঈদযাত্রা পুরোপুরি শুরু না হলেও মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বেড়েছে। রাজধানীর প্রধান বাস টার্মিনালগুলো এখনো ফাঁকা। তবে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অতিরিক্ত দামে বাসের টিকেট কিনতে হচ্ছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন।

কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, সকাল থেকে ১১টা পর্যন্ত ১১টি ট্রেন বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে তিনটি ট্রেন কিছুটা দেরিতে ছেড়েছে। পশ্চিমাঞ্চলে জয়দেবপুর থেকে পাবনার ঈশ্বরদী পর্যন্ত স্টেশনগুলোর একটি থেকে আরেকটির দূরত্ব অনেক বেশি। এ কারণে রেলক্রসিংয়ে বেশি সময় লাগে। শিডিউল বিপর্যয় এড়াতে চেষ্টা চলছে। এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশনের দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। ট্রেন ক্রসের জন্য অপারেটিং সিস্টেমের কারণে ট্রেন আসতে ও যেতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। পশ্চিমাঞ্চলের রেলে শিডিউল বিপর্যয় ঘটলেও তা মেনে নিয়ে চলতে হবে।

জানা গেছে, এবার ঈদযাত্রায় প্রতিদিন ৫৩ হাজার যাত্রী ট্রেনে রাজধানী ছাড়বে। শুধু আন্তঃনগর ট্রেনে আসন থাকছে ২৭ হাজারের বেশি। ধূমকেতু ট্রেনটি প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে সকাল ৬টা ৫০ মিনিটের দিকে রওয়ানা হয়। খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে কমলাপুর ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ৮টা ৪৭ মিনিটে ছেড়েছে। সকাল ৯টা ১০ মিনিটের রংপুর এক্সপ্রেস ১০টা ৩০ মিনিটে ছেড়েছে।

ঈদযাত্রার শুরুতেই ট্রেন বিলম্বে ছাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন যাত্রীরা। রংপুরের যাত্রী দেলোয়ার জানান, এক ঘণ্টা দেরিও সহ্য হচ্ছে না। ঈদের পর দিনই ঢাকায় ফিরতে হবে। তাই যত তাড়াতাড়ি যেতে পারব ততই ভালো।

শিডিউল বিপর্যয়ের মধ্যেই গতকাল বুধবার সকাল থেকেই কমলাপুর রেলস্টেশনে ১ মের অগ্রিম টিকেট বিক্রি হয়েছে। তবে অন্যান্য দিনের মতো টিকেট প্রত্যাশীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল না। টিকেট কাউন্টারের চেয়ে প্ল্যাটফর্মেই ঘরমুখো মানুষের বেশি ভিড় ছিল।

এদিকে ট্রেনের মতো শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও মাঝিরকান্দি এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটেও ফেরি বিপর্যয় প্রকট আকার ধারণ করছে। যাত্রীবাহী বাসের পাশাপাশি প্রাইভেটকারের সংখ্যা বেড়েছে মহাসড়কে। অনেকেই প্রাইভেটকার ভাড়া করে পরিবার-পরিজন গন্তব্যে পাঠিয়ে দিয়েছেন। শিমুলিয়া ফেরিঘাটে ৪ শতাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। এর মধ্যে পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যাই বেশি। ঈদের আগে ৫ দিন ও পরের ৫ দিন পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও ট্রাক চালকরা ফেরিতে উঠতে পারছেন না।

বিআইডব্লিউটিসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গতকাল সকাল থেকে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও মাঝিকান্দি নৌ-রুটে ২টি মিনি রোরো, ২টি কে টাইপ ও ২টি ডাম্পসহ মাত্র ৮টি ফেরি সচল ছিল। বেগম রোকেয়া নামের একটি ফেরি বিকল হয়েছে, সেটিকে মেরামতের জন্য পাঠানো হয়েছে। তবে আরো ১টি ফেরি এই বহরে যুক্ত হবে।

আজ বৃহস্পতিবার পোশাক কারখানাগুলোতে একযোগে ছুটি হবে বলে সড়কে বাড়তি চাপে অব্যবস্থাপনা এবং যাত্রীদের ভোগান্তির শঙ্কা করছেন পরিবহন মালিকরা। সাভার, জয়দেবপুর, আশুলিয়া, চন্দ্রা এলাকার পোশাক শ্রমিকরা উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যে ঈদের সময় যেতে দল বেঁধে বাস ভাড়া করেন। এসব বাসের অধিকাংশই রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় স্বল্প দূরত্বে চলাচলকারী।

গতকাল বুধবারও রাজধানীর কোনো বাস টার্মিনালে ভিড় দেখা যায়নি। গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল একেবারেই ফাঁকা ছিল। এখনো ঈদ উপলক্ষে সব রুটের বাসের কাউন্টারে অগ্রিম টিকেট পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলোতে যাত্রী কিছুটা বাড়লেও কোনো চাপ ছিল না। বাসের পেছন দিকে ২৯ ও ৩০ এপ্রিলের টিকেট পাওয়া যাচ্ছে। মহাসড়কগুলো যানবাহন চলাচল এখনো একেবারেই স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে, কোনো যানজট নেই। ঢাকা-আরিচা, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও বগুড়া-সিরাজগঞ্জ মহাসড়কে যানবাহনের চাপ আস্তে আস্তে বাড়ছে। মহাসড়কটিতে চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলমান থাকায় যানবাহন ধীরগতিতে চলছে।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহসভাপতি ও একতা পরিবহনের মালিক হাজি আবুল কালাম বলেন, বাসগুলো এখনো পূর্ণ আসনের যাত্রী পাচ্ছে না। ৫ থেকে ১০টি সিট খালি থাকচ্ছে। যাত্রীরা সড়কে দুর্ভোগের আশঙ্কা করছেন। তবে এবার উত্তরবঙ্গের সড়কের অবস্থা বেশ ভালো। নলকা সেতু ও তিনটি ফ্লাইওভার খুলে দেয়ায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহন চলাচল একেবারেই স্বাভাবিক রয়েছে।

এবার প্রায় ৩৭ লাখ ৫০ হাজার মানুষ লঞ্চসহ বিভিন্ন ধরনের নৌযানে বাড়ি যাবেন। এদিকে নৌপথে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের ঈদযাত্রা এখনো শুরু হয়নি। গতকালও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ফাঁকা ছিল। আজ বৃহস্পতিবার থেকে ঈদযাত্রা পুরোপুরি শুরু হবে বলে লঞ্চমালিকরা আশা করছেন। তবে নিয়মিত দুর্ঘটনা, দূরপাল্লার সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বেহাল দশা, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগের প্রধান দুটি মাধ্যম শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরিস্বল্পতা ও নানা অব্যবস্থাপনার কারণে অনেকেই সড়কপথ এড়ানোর চেষ্টা করবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App