×

জাতীয়

জেলা পরিষদে দলের নেতারাই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২২, ০৮:২৮ এএম

জেলা পরিষদে দলের নেতারাই

জেলা পরিষদ

জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে আমলা নয়; দায়িত্ব পাচ্ছেন রাজনীতিকরাই। সদ্য সাবেক হয়ে যাওয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অথবা জেলা আওয়ামী লীগের যোগ্যতাসম্পন্ন নেতাদের এ পদে নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ জন্য আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের গ্রহণযোগ্য নেতাদের নামের তালিকা ঢাকায় পাঠানোর পর তা যাচাইবাছাই চলছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন শুধু ঘোষণার অপেক্ষা। যে কোনো সময় জারি হতে পারে প্রজ্ঞাপন।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য আওয়ামী লীগের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা প্রতি জেলায় তিনজন করে যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীর নাম প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেন। সেই তালিকা থেকে কাকে কোন জেলায় প্রশাসক পদে নিয়োগ দেয়া হবে সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের পর ঈদের আগে বা পরে যে কোনো সময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। এর আগে জেলা আওয়ামী লীগ এ বিষয়ে প্রতিটি জেলায় সভা করে এবং সভা থেকেই নামের তালিকা চূড়ান্ত করে ঢাকায় পাঠায়। সেই তালিকায় স্থান পেয়েছেন জেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগের প্রবীণ ও সব মহলে গ্রহণযোগ্য নেতারা। এর মাধ্যমে দেশের ৬১টি জেলা পরিষদে প্রশাসক হিসেবে আমলাদের জায়গা হচ্ছে না, রাজনৈতিক নেতারাই বসছেন।

প্রসঙ্গত, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় সরকার গত ১৭ এপ্রিল সারাদেশে তিন পার্বত্য জেলা বাদে বাকি ৬১টি জেলা পরিষদ ভেঙে দেয় সরকার। অর্থাৎ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ শূন্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। রুটিন মতো কাজ পরিচালনার জন্য জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের জারি করা ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জেলা পরিষদ গঠনের প্রথম সভার তারিখ থেকে মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ায় স্থানীয় সরকার আইন (জেলা পরিষদ আইন ২০০০) (সংশোধিত) ২০২২-এর ধারা ৫ অনুযায়ী দেশের ৬১টি জেলা পরিষদ বিলুপ্ত করা হয়েছে। একই আদেশে বলা হয়, আইনের ধারা ৮২ অনুযায়ী সরকার কর্তৃক প্রশাসক নিয়োগের পূর্ব পর্যন্ত ওই আইনের ধারা ৭৫-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে প্রত্যেক জেলা পরিষদের প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা পরিচালনার জন্য পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অর্পণ করা হলো। আইন অনুযায়ী জেলা পরিষদের পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগ পর্যন্ত জেলা পরিষদে কার্যক্রম পরিচালনায় সরকার একজন প্রশাসক নিয়োগ দেবে। তিনি রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক বা সরকারি আমলা যে কেউ হতে পারেন।

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. হেলালুদ্দিন আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, সদ্য সাবেক হওয়া চেয়ারম্যান কিংবা দলীয় কোনো ব্যক্তি জেলা পরিষদের প্রশাসক হবেন কিনা সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। তিনি অনুমোদন দিলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করবে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী দলীয় লোকদের প্রশাসক পদে দায়িত্ব নিতে আইনি বাধা নেই। আগামী ৭/১০ দিনের মধ্যে বিষয়টির সমাধান হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ বিলুপ্ত হওয়ার পর প্রশাসক পদে নিয়োগ পেতে বিভিন্ন জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ে জরুরি এক সভা করে। ওই সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং জেলা পরিষদের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান রকেট সভাপতিত্ব করেন। সভা সংশ্লিষ্ট একাধিক নেতা সূত্রে জানা গেছে, সভায় আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে সর্বসম্মতিক্রমে তিন শীর্ষ নেতার নাম জেলা কমিটি থেকে

প্রস্তাব আকারে সিদ্ধান্ত নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। জানতে চাইলে জয়পুরহাট জেলা পরিষদের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান রকেট গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, জেলা পরিষদের প্রশাসক পদে দলীয় লোকরাই দায়িত্ব পাচ্ছেন বলে তিনি শুনেছেন। এজন্য গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকে চিঠি দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের কাছে গ্রহণযোগ্য তিনজন নেতার নাম চাওয়া হয়েছে। তারপরই গত শুক্রবার সভা করে তিনিসহ আরো দুজনের নাম ঢাকায় পাঠিয়েছেন। জেলা পরিষদের প্রশাসক হচ্ছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সে বিষয়ে আমি জানি না, নেত্রী বলতে পারবেন’।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, জেলা পরিষদে প্রশাসক হিসেবে রাজনৈতিক ব্যক্তিদেরই নিয়োগ দেয়া হচ্ছে এটা প্রায় চূড়ান্ত। যদিও গত জাতীয় সংসদে পাস হওয়া জেলা পরিষদ আইনের ৮২ নম্বর ধারায় বলা আছে, আগামী নির্বাচন হওয়ার আগ পর্যন্ত সরকার নির্বাহী আদেশে যোগ্য কোনো ব্যক্তি বা প্রজাতন্ত্রে নিযুক্ত সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে থেকে যে কোনো ব্যক্তিকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দান করতে পারবে। এই আইন পাস করার পর অনেকেই মনে করেছিলেন, সরকার যুগ্ম সচিব বা অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার আমলাদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেবেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রশাসক পদে নিয়োগের ব্যাপারে অনড় থাকায় আমলাদের মধ্যে যারা এ পদে যাওয়ার আগ্রহী ছিলেন তারা পিছু হঠেন।

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আইন অনুযায়ী রাজনৈতিক ব্যক্তি, বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে যে কাউকে সরকার প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে সরকার। তবে প্রশাসক নিয়োগ দেয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন লাগে। সেটা পাওয়া মাত্রই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

প্রসঙ্গত, সরকার ২০১১ সালের ডিসেম্বরে জেলা পরিষদকে সচল করে এবং ওই বছরের ডিসেম্বর মাসেই জেলা পর্যায়ে এমপি-মন্ত্রী হতে পারেননি দলীয় এমন নেতাদের জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়। যাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন সাবেক মন্ত্রী, এমপি এবং হুইপ ও প্রবীণ নেতা। তারা প্রায় পাঁচ বছর প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর জেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচিত চেয়ারম্যান পায়। তাদের মেয়াদ পূর্ণ হলেও নির্বাচন কমিশন জেলা পরিষদের পরবর্তী নির্বাচন আর করতে পারেনি। যার ফলে সরকার স্থানীয় সরকার আইন (জেলা পরিষদ) (সংশোধন) আইন ২০২২ গত ১৩ এপ্রিল জাতীয় সংসদে পাস করে। এর চার দিন পর ১৭ এপ্রিল নির্বাচিত জেলা পরিষদ ভেঙে দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এখন রুটিন কাজ চালাচ্ছেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App