×

মুক্তচিন্তা

নারীদের জনপ্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাউবি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২২, ১২:৪৪ এএম

নারীদের জনপ্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাউবি

নাসিমা জাহান শিখার বয়স ৫৫ বছর। তিনি জন্মগতভাবেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। শারীরিক অসুস্থতা এবং দৃষ্টি অস্পষ্টতা থাকলেও লেখাপড়ার প্রতি তার অদম্য ইচ্ছা। তিনি এ বছরে খুলনার দৌলতপুর কলেজ খেকে বাউবি পরিচালিত বিএসএস পরীক্ষা দিয়েছেন। এক চোখের দৃষ্টি নেই অন্য চোখের দৃষ্টির অস্পষ্টতা নিয়েই পরীক্ষার খাতায় লিখছিলেন। হাতের লেখা ও বর্ণবিন্যাসে নৈপুণ্যের ছাপ। তিন বোন, এক ভাই। তার অন্য তিন ভাইবোনই এমবিবিএস ডাক্তার। বাবাও ডাক্তার ছিলেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে নিয়মিত লেখাপড়া করতে পারেননি, বিয়েও করা হয়নি। অন্য ভাইবোনদের মতো ডাক্তার হতে না পারলেও উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে চান। আমৃত্যু লেখাপড়াকে সঙ্গী করে বাঁচতে চান, তাই তিনি বেছে নিয়েছেন বাউবি। হজ করেছেন, ভাইয়ের কর্মস্থল আমেরিকায়ও গিয়েছেন, দেখেছেন উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে জ্ঞানার্জন করলে বিশ্বের অনেক কিছু উপভোগ করা যায়। তাই তিনি বিএসএস পাস করে আবার ভর্তি হবেন বাউবির মাস্টার্স প্রোগ্রামে। পর্যায়ক্রমে পিএইচডি অর্জন করার ইচ্ছা তার। দুই সন্তানের জননী রুবিনা আক্তার (৪৩) একটি মিশনারি স্কুলে চাকরি করেন। ২১ বছর আগে তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়, ২০১৯ সালে ভর্তি হন বাউবিতে। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া দেখে আগ্রহ জাগে আবার লেখাপড়া করার, তাই ভর্তি হয়েছেন বাউবিতে। ডিগ্রি পাস করলে চাকরিতে পদোন্নতি পাবেন। তার বাড়ি খুলনার একটি গ্রামে, ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে স্টাডি সেন্টারে এসে নিয়মিত ক্লাস করেছেন। পরীক্ষার হলে কলম চলছিল দ্রুত গতিতেই, জানালেন ছেলেমেয়েদের সঙ্গে শেয়ার করে নিয়মিত লেখাপড়া করেছি, ভালো ফলাফলের আশা করি। পাপিয়া খাতুনের বয়স ৩৫ বছর। দুই সন্তানের জননী। জীবনযোদ্ধা, কবি এবং নারী অধিকারে সোচ্চার একজন কর্মী। খুলনার দিঘুলিয়া থেকে অনেকটা পথ হেঁটে নদী পার হয়ে এসেছেন খুলনা শহরের দৌলতপুর কলেজে পরীক্ষা দিতে। নিজের একটি হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে। বাউবি থেকে ডিগ্রি নিয়ে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজেকে স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি সমাজের নিগৃহীত নারীদের পাশে দাঁড়াতে চান। সায়মা বিলকিসের বয়স ৩৫ বছর। অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণে এসএসসি পাস করার পূর্বেই লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। স্বামীর সঙ্গে কমিটমেন্ট ছিল বিয়ের পর লেখাপড়া করতে দেয়ার; কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকের আপত্তির কারণে দীর্ঘ ১৫ বছর পর লেখাপড়া শুরু করে বর্তমানে বাউবি থেকে বিএ পরীক্ষা দিচ্ছেন। পাশাপাশি কুটির শিল্পেও কাজ করছেন। তিনি উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে স্থানীয় সরকারে গিয়ে কাজ করতে চান। মেরিনা আক্তারের বয়স ৪৪ বছর। বড় ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। আজ থেকে ২৪ বছর আগে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। ছেলে মাকে বাউবিতে ভর্তি করে দেয়, তবে স্বামী লেখাপড়া করতে দিতে নারাজ এবং তালাক দেয়ার হুমকি দিয়েছে। মেরিনা লেখাপড়া করার বিষয়ে অনড় থাকায় বিষয়টি গ্রাম্য সালিশিতে চেয়ারম্যান পর্যন্ত গড়ায়। তবে যত বাধাই আসুক না কেন লেখাপড়া চালিয়ে যাবেন এবং তিনি একজন সমাজকর্মী। সমাজের অসহায় মেয়েদের স্বাবলম্বী করতে চান। ফাতেমা আক্তারের বয়স ৩৭ বছর। বিয়ে হওয়ার কারণে ২০ বছর আগে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। শ্বশুরবাড়ির সম্মতি না থাকায় এতদিন লেখাপড়া করতে পারেননি। স্বামী গোপনে বাউবিতে ভর্তি করে দিয়েছেন। আইসক্রিমের কাঠি বিক্রি করে এবং স্বামী শ্রমিকের কাজ করে লেখাপড়ার খরচ জোগান। তিনি বাউবি থেকে ডিগ্রি পাস করে এলএলবি করে সমাজের অসহায় নারীদের আইনি সহায়তা দিতে চান। কেয়া আক্তারের বয়স ২১ বছর। বাবা প্যারালাইসিস রোগী, মা অসুস্থ। টিউশনি এবং হস্তশিল্পের কাজ করে বাবা-মাকে সাহায্য করে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালান। বাউবি থেকে এসএসসি, এইচএসসি করেছেন। এ বছরে বিএসএস পরীক্ষা দিচ্ছেন। তিনি বাউবিতেই চাকরি করতে চান। খুলনায় বাউবির বিএ/বিএসএস পরীক্ষা পরিদর্শনে গিয়ে কথা হয় জীবনযুদ্ধে লড়াই করা এসব নারীর সঙ্গে। বাউবির মাধ্যমে তারা প্রত্যেকেই স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। তাদের মতে বাউবি জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান, এখানে রয়েছে পিএইচডি পর্যন্ত লেখাপড়া করার সুযোগ।

ড. মেজবাহ উদ্দিন তুহিন : গবেষক ও লেখক; পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত), তথ্য ও গণসংযোগ বিভাগ; বাউবি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App