×

জাতীয়

দুই রাত রেল স্টেশনে কাটিয়ে টিকিট পেলেন সবুজ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২২, ১২:১৩ পিএম

দুই রাত রেল স্টেশনে কাটিয়ে টিকিট পেলেন সবুজ

কমলাপুর রেলস্টেশনে টিকিট প্রত্যাশীদের ভিড়। ছবি: ভোরের কাগজ

ঈদে রেল টিকিট মানে হয়রানি দুর্ভোগের এক শেষ। শনিবারের খুলনা যাবার যে কোনো ট্রেনের টিকেটের জন্য শুক্রবার রাতে স্টেশনে লাইনে দাঁড়ান সবুজ মিয়া। কিন্তু সার্ভার জটিলতা, প্রচণ্ড ভিড়, অনলাইনে বা অ্যাপে ঢুকতে না পেরে স্টেশনে ভিড় করা হাজারো মানুষের ভিড়ে তিনি শনিবার টিকেট পাননি। দীর্ঘ লাইনের মাঝ বরাবর আসতেই সব টিকিট শেষ হয়ে যায়।

আবারও টিকিটের জন্য সেই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। তার মত শত  শত যাত্রীও শনিবারের লাইন না ছেড়ে দাড়িয়ে বসে সময় কাটান। ইফতারিও করেছেন স্টেশনে। বাথরুম টয়লেট সবই স্টেশন চত্বরে। খবরের কাগজ বিছিয়ে কাটিয়েছেন সারা রাত। স্টেশনেই সেহেরি করেছেন। অগত্যা আজ রবিবার সকালে কাউন্টার খোলা হলে সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন। এরপর  ধীরগতিতে চলে টিকেট বিক্রি, সকাল ১১টা নাগাদ সবুজ মিয়া যখন কাউন্টারে হাত ঢোকান তখন তার চোখে জল। কার্ড দেখিয়ে তিনটি এসি চেয়ার চাইলেও পেয়েছেন সুন্দরবন এক্সপ্রেসের শোভন চেয়ারের তিনটি টিকিট। তাতেই সন্তুষ্ট তিনি। তার মতো শত শত যাত্রী দুই রাত স্টেশনে অপেক্ষার পর আজ ২৮ এপ্রিলের টিকেট হাতে পেয়ে যেন সোনার হরিণ পেয়েছেন। তারা বলেন, ঈদে বাড়িতে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ না করতে পারলে আনন্দই হয় না। সারা বছর এ দিনের জন্য অপেক্ষা করে থাকি। তবে রেলের টিকিট ব্যবস্থাপনার এ অমানবিকতা, টিকেট কাটার ভোগান্তি কবে দূর হবে সে আশা প্রকাশ করছেন যাত্রীরা।

আবার রাজশাহী যাবেন তিন্নী। শনিবার রাত আটটার দিকে বোনকে নিয়ে স্টেশনে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। সকাল ১১টার দিকে হাতে দুটো শোভন চেয়ারের টিকেট পেয়েছেন। তাতেই খুশি, বলেন, এবারে মনে হচ্ছে বাড়ি গিয়ে সবার সঙ্গে ঈদ কাটাতে পারবো।

এমনি ২৪-৩২ ঘণ্টা স্টেশনে রোজার মধ্য অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্যে অপেক্ষার পরে অনেকেই রবিবার টিকিট পেয়ে খুশি প্রকাশ করেছেন। তবে অনেকেই অনলাইনে প্রবেশ না করতে পেরে সার্ভার ডাউন হয়ে যাচ্ছে এমন অভিযোগ করেছেন। আবার অনেকে রেলের অনলাইন টিকেট ব্যবস্থাপনা একেবারে ভেঙে পড়েছে বলেও অভিযোগ করেন।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার জানান,  টিকিটের চাহিদা দিনে এক লাখ, কিন্তু সক্ষমতা মাত্র ২৮ হাজারের মতো। তার অর্ধেক অনলাইনে দেয়া হচ্ছে। তাই সবাই চাহিদা অনুযায়ী টিকিট পাবেন না এটার জন্য রেলওয়ের পক্ষ থেকে দুঃখ জানান ছাড়া কিছু করার নেই।

তবে অনলাইনে সকাল আটটায় ওপেন করার আধা ঘণ্টা এক ঘণ্টার মধ্যে সব টিকেট বিক্রি হয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি। মাঝেমধ্যে দুই-একবার সার্ভারের সমস্যার কথাও স্বীকার করেন তিনি।

রাজধানীর কমলাপুরে দেয়া হচ্ছে পূর্বাঞ্চল-পশ্চিমাঞ্চলের সব ট্রেনের টিকিট।  এছাড়া বিমানবন্দর, তেজগাঁও, ক্যান্টনমেন্ট ও পুরাতন রেল স্টেশন থেকেও বিভিন্ন গন্তব্যের টিকিট বিক্রি হচ্ছে।  যদিও সেকানে এতটা ভিড় লক্ষ্য করা যায়নি।

যাত্রীরা বলছেন, দিন যত এগোচ্ছে টিকেটের চাহিদা ততই বাড়ছে।

রশিদ মিয়া দুপুরের দিকে এসেছেন সোমবারের (২৯ এপ্রিলের) টিকেটের জন্য। তিনি বলেন, আমি আর ছেলে পালা করে দিন রাতটা স্টেশনের লাইনে কাটিয়ে দিয়ে সোমবারের টিকিট কাটবো। যার জন্য এখন থেকেই স্টেশনে অপেক্ষায় তার মত শত শত যাত্রী। তারা রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধে না নামলেও ট্রেনের ঈদ টিকেট কাটার যুদ্ধে নেমেছেন তারা বাপ-বেটা এমন মন্তব্য করেন বেসরকারি চাকুরে রশিদ মিয়া।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App