×

জাতীয়

হত্যাচেষ্টা, সম্পত্তি আত্মসাৎ: প্রবাসীর স্ত্রীকে ঘরছাড়া করলেন পুত্রবধূ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২২, ০৪:৩০ পিএম

হত্যাচেষ্টা, সম্পত্তি আত্মসাৎ: প্রবাসীর স্ত্রীকে ঘরছাড়া করলেন পুত্রবধূ

শুক্রবার নোয়াখালী জেলা সদরের নোয়ান্নই ইউনিয়নের পশ্চিম দুর্গানগর গ্রামে দুই মেয়েসহ একজন প্রবাসীর স্ত্রীকে ঘরছাড়া করেন তারই পুত্রবধূ। ছবি: ভোরের কাগজ

হত্যাচেষ্টা, তারপর সম্পত্তি আত্মসাৎ। তারপরেই নোয়খালী জেলা সদরের নোয়ান্নই ইউনিয়নের পশ্চিম দুর্গানগর গ্রামের এক প্রবাসীর স্ত্রীকে ঘরছাড়া করেছেন তারই পুত্রবধূ সাজেদা আক্তার মুনমুন। ঘটনাটি ঘটেছে ওই গ্রামের কুয়েত প্রবাসী আজিজুর রহমান স্বপনের স্ত্রী নূর নাহার বেগমের সঙ্গে। একই সঙ্গে তার দুই মেয়ে আসমা আক্তার (১৭) ও আমেনা আক্তারকেও (১৭) ঘরছাড়া করা হয়েছে।

যার নির্দেশে তিনজনকে ঘরছাড়া করা হয়েছে, তিনি হলেন ওই প্রবাসীর স্ত্রীর একমাত্র ছেলে ওমর ফারুক।

এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) রাতে প্রবাসীর স্ত্রী নূর নাহার বেগম বাদী হয়ে সুধারামপুর মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে নূর নাহার বেগম উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালে আমার স্বামী আজিজুর রহমান স্বপন বিদেশ থেকে বাড়িতে আসেন। তিনি বাড়িতে আসার পর আমাদের একমাত্র ছেলে ফারুক ও তার স্ত্রী সাজেদা তার দুই ভাই হৃদয় ও রুবেলের সহযোগিতায় সম্পত্তির লোভে আমার স্বামীকে জিম্মি অবস্থায় মারধর করে হত্যা করার চেষ্টা করে। পরে অপরিচিত এক লোককে সাব রেজিস্ট্রার সাজিয়ে বাড়িতে এনে জোরপূর্বক আমার স্বামীর ৬২ দশমিক ৩৫ ডিং সম্পত্তির দলিলে সই নেয়। আমার স্বামীকে উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ঢাকায় নেয়া হয়। এসময় তিনি বিদেশে ছুটি শেষ হওয়ার আগেই ছেলে, পুত্রবধূ ও তাদের ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের ভয়ে কুয়েতে চলে যান। পরে স্বামীর অনুপস্থিতিতে নিজে এবং দুই মেয়েকে নিয়ে বাঁচার তাগিদে ছেলে এবং পুত্রবধূর সঙ্গে একই সঙ্গে থাকতে হয় আমাকে। এ সুযোগে ছেলে ফারুক বিদেশে যাওয়ার জন্য টাকা চায়। তখন সম্পত্তি বিক্রি করে তাকে টাকা দিলে সে বিদেশে চলে যায়। সেখান থেকেই আমাদের নিয়ে তাদের ষড়যন্ত্র শুরু হয়। পুত্রবধূকে দিয়ে আমাদের বাড়ি ছাড়া করার নানা পরিকল্পনা করতে থাকে ফারুক।

অভিযুক্ত পুত্রবধূ সাজেদা আক্তার মুনমুন বলেন, আমার শ্বশুর আজিজুর রহমান স্বপন কুয়েত থেকে দেশে ফিররে তিনি আরেকটি বিয়ে করেন। ওই বিয়েকে কেন্দ্র করে আমার শাশুড়ির সঙ্গে তার বিরোধ তৈরি হয়। ওই বিরোধের জের ধরে আমার শ্বশুরকে আটকে রেখে তার সন্তানদের নামে সব সম্পত্তি লিখে নেন তিনি।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, আমার ছেলে ফারুক বিদেশে যাওয়ার পর তার প্রকৃত রূপ দেখা যায়। আমাকে ও আমার দুই মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার জন্য সে বিদেশ থেকে তার স্ত্রীকে নির্দেশে দেয়। গত বুধবার (২০ এপ্রিল) সকালে ওমর ফারুকের স্ত্রী তার দুই ভাই হৃদয় ও রুবেলকে খবর দিয়ে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী এনে আমাকে ও আমার মেয়েদেরকে জোরপূর্বক হুমকি-ধমকি দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এরপরই অজ্ঞাত চার-পাঁচজন ব্যক্তি একটি ভাড়া ট্রাক নিয়ে আমার বাড়িতে এসে ঘরের যাবতীয় মালামাল তুলে নেয়ার চেষ্টা করে। এসময় স্থানীয় লোকজন বাঁধা দিলে ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে মালামাল বাড়ি থেকে বের করতে বাঁধা দেয়। এর আগেই সন্ত্রাসীদের সহযোগিতায় ঘরের আলমারিতে থাকা পাঁচ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, নগদ এক লাখ টাকাসহ মূল্যমান কাগজপত্র এবং পাটের বস্তায় ৫ বস্তা জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায় ফারুকের স্ত্রী-শ্যালকরা।

স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিরা জানান, এ কোন যুগে আছি আমরা- এ ধরনের ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়া দরকার।

অভিযুক্ত পুত্রবধূ সাজেদা আক্তার মুনমুন বলেন, আমার শ্বশুর আজিজুর রহমান স্বপন কুয়েত থেকে দেশে ফিররে তিনি আরেকটি বিয়ে করেন। ওই বিয়েকে কেন্দ্র করে আমার শাশুড়ির সঙ্গে তার বিরোধ তৈরি হয়। ওই বিরোধের জের ধরে আমার শ্বশুরকে আটকে রেখে তার সন্তানদের নামে সব সম্পত্তি লিখে নেন তিনি। সেসব ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই। এখন আমার শ্বশুরের সঙ্গে শাশুড়ির বিরোধ মিঠে যাওয়ায় শাশুড়ি আমার ওপর নির্যাতন শুরু করেছেন। তারপরও আমার শাশুড়ি ও ননদদের বাড়ি থেকে আমি বের করিনি। তাদের বলেছি, প্রয়োজনে সুখে-শান্তিতে অন্য জায়গায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকবো। তারপরেও আমারা একসঙ্গে থাকবো। এখন তারা আমার নামে মিথ্যা রটনা করছে।

স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিরা জানান, ২০১৮ সালে প্রবাসী আজিজুর রহমান স্বপন কুয়েত থেকে দেশে ফিরলে সম্পত্তির লোভে স্বপনকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন ছেলে ফারুক ও ফারুকের স্ত্রী। পরে বাড়িতে সাব রেজিস্টার এনে তার সব সম্পত্তি নিজেদের নামে লিখে নেয় ওমর ফারুক। এখন স্ত্রীকে ইন্ধন দিয়ে মা ও বোনদেরকেও বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু নাছের বলেন, বাবার সম্পত্তি লিখে নেয়ার পর মা-বোনদের নিয়ে সুন্দরভাবেই বসবাস করেছিল ছেলে ফারুক। পরবর্তীতে মায়ের সম্পত্তি বিক্রির টাকায় বিদেশে গিয়ে এবার মা ও বোনদের সঙ্গে মতবিরোধ সৃষ্টি হয় ফারুক ও তার স্ত্রীর। একে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন পরিষদে একটি অভিযোগ আনা হলে তা সমাধান করা হয়। শুক্রবার হঠাৎ এলাকার লোকজন জানায় ফারুকের স্ত্রী বাইরের লোকজন নিয়ে এসে তার শাশুড়ি ও ননদদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে ঘরের যাবতীয় মালামাল লুট করার চেষ্টা করছে। পরে স্থানীয় লোকজন, চৌকিদার ও থানার পুলিশ এসে মালামাল আটক করে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়ে বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দেয়।

এ বিষয়ে সুধারামপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রবাসীর স্ত্রী নূর নাহার বেগম থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। ঘটনাস্থলে ইতোমধ্যেই পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে ঘটনার চারদিনেও শনিবার সকাল পর্যন্ত নিজ বাড়িতে অবস্থান করতে পারেননি ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। তারা প্রশাসনের কাছে ন্যায়বিচার দাবি করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App