×

জাতীয়

সাতশ কিলোমিটার নিয়ে শঙ্কা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২২, ০৮:৪১ এএম

সাতশ কিলোমিটার নিয়ে শঙ্কা

উন্নয়নমূলক কাজের ধীরগতির কারণে ঈদযাত্রায় ভোগান্তির শঙ্কা। টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকার ছবি -ভোরের কাগজ

 বেহাল সড়ক, ঈদ যাত্রায় ভোগান্তি বাড়বে, ২৫ এপ্রিলের মধ্যে মেরামত শেষ হবে না

পুরোদমে ঈদযাত্রা শুরু হতে আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি। কিন্তু এখনো সড়ক-মহাসড়কে চলছে মেরামত ও উন্নয়নের কাজ। দেশের ২২টি মহাসড়কের অনেক স্থানই খানাখন্দে ভরা। ঢাকা-গাজীপুর, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-আরিচা, ঢাকা-টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ-বগুড়াসহ প্রায় সাড়ে ৭০০ কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়কের বেহাল দশার কারণে দীর্ঘ ভোগান্তিতে পড়ে ঘরমুখো অনেক মানুষকেই রাস্তায় ঈদ করতে হতে পারে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঈদযাত্রা শুরু হওয়ার আগেই দেশের সব সড়কের মেরামত কাজ শেষ করার নির্দেশ দিলেও এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ২৫ এপ্রিলের মধ্যেই সব সড়ক মেরামতের কাজ শেষ হবে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে ২২ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়ক আছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৯৮৯ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক, ৪ হাজার ৮৯৭ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং ১৩ হাজার ৫৪১ কিলোমিটার জেলা সড়ক রয়েছে। এসব সড়কের ১৬ শতাংশের বেশি বেহাল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে দেশের মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ অংশের ৬৯১ কিলোমিটার রাস্তা স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চলাচলের অবস্থায় নেই। গত বছর এ ধরনের রাস্তার দৈর্ঘ্য ছিল ৯৪৩ কিলোমিটার। বর্তমানে মেরামত কাজ চলমান থাকায় সড়কের অবস্থার কিছু উন্নতি হয়েছে।

সওজ কর্মকর্তারা জানান, পুরোদমে ঈদযাত্রা শুরুর আগেই সড়ক চলাচলের জন্য প্রস্তুত হবে। তবে যেসব সড়কের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে, সেগুলো যাতায়াতের জন্য সহনীয় করার চেষ্টা চলছে। উন্নয়ন কাজ চলছে এমন কিছু সড়ক অন্য সংস্থার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেগুলোর বর্তমান অবস্থার জন্য সওজ কর্তৃপক্ষের কোনো কিছু করার নেই।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কাজের কারণে আশুলিয়া থেকে বাইপাইল পর্যন্ত সড়কের অংশ সেতু কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারাই এ সড়কটি দেখভাল

করছে। এছাড়া এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এই সড়কটিও বিআরটির হাতে রয়েছে। এই সড়কটি তাদেরই সংস্কার করার দায়িত্ব। এখন এখানে সওজের কিছুই করার নেই। দেশের অন্যসব মহাসড়কের ভাঙা অংশ মেরামতের কাজ ঈদযাত্রার আগেই শেষ করার চেষ্টা চলছে।

বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রায় রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, দেশের সব দিকের সড়কেই যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। উত্তরবঙ্গের সিরাজগঞ্জ, শেরপুর, বগুড়াসহ কয়েকটি জেলায় সড়কে উন্নয়নকাজ, ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ চলায় গাড়ি থেমে থেমে চলে, যানজটও হয়। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি সমস্যার কারণে দুই ঘাটেই যানজট হচ্ছে। ঈদযাত্রায় গাড়ির চাপ বাড়লে অবস্থা আরো কঠিন হবে।

তবে সওজের তথ্যের সঙ্গে বাস্তবের সড়ক-মহাসড়কের বেশ অমিল রয়েছে বলে পরিবহন চালক-মালিকরা অভিযোগ করেছেন। শ্যামলী পরিবহনের কর্মী কামাল হোসেন জানান, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বেহাল দশার কারণে এই রুটের যাত্রীদের এবার চরম ভোগান্তি পোহাতে হবে। এই রুটের যাত্রীদের ঢাকা থেকে বের হতেই বিড়ম্বনার শুরু হবে। আমিনবাজার থেকে ধামরাই পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ এবং রোড ডিভাইডার স্থাপনের কাজ চলছে। এই সড়কের যানবাহনকে প্রায়ই এক লেনে যাতায়াত করতে হয়। আবার কখনো কখনো সার্ভিস লেন ব্যবহার করতে হয়। নবীনগর থেকে ধামরাই পর্যন্ত দীর্ঘ সড়ক প্রশস্তকরণ কাজের জন্য দুই লেনে গাড়ি চালাতে হয়। সার্ভিস লেনটিও ভরাটের কাজ চলায় পাশে প্রায় ৩ ফুটের গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে সব গাড়িকে ধীরে চলতে হচ্ছে। এখনই গাবতলী থেকে জিরাবো আসতে আড়াই থেকে ৩ ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে।

বাসচালক মাইনুল ইসলাম জানান, ঈদযাত্রা শুরু হলে গাড়ির চাপ কয়েকগুণ বাড়বে। তখন যানজটে নাকাল হবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলা এবং উত্তরবঙ্গের ঘরমুখো মানুষ। ঘুরপথে আশুলিয়া-বাইপাইল সড়কেও স্বস্তি নেই। স্বাভাবিক সময়েই আশুলিয়া সেতুর উভয় দিকেই ৫/৬ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট হয়। ঈদযাত্রা শুরু হলে উত্তরা ও টঙ্গী এলাকার শত শত পোশাক কারখানার হাজার হাজার কর্মী ঘরমুখী যাত্রা শুরু করলে যানবাহনের চাপ কয়েকগুণ বাড়বে এবং ভোগান্তি চরমে পৌঁছবে। মূল সড়কের চেয়ে সেতুটি সরু হওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হয়। আব্দুল্লাহপুর থেকে বাইপাইল পর্যন্ত সড়কটি ভাঙা ও খানাখন্দে ভরপুর। কিন্তু গত বুধবার পর্যন্ত এ সড়কের মেরামতের কাজ শুরু হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চার লেনে উন্নীত হলেও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক যানজটমুক্ত হয়নি। কুমিল্লা এলাকার দাউদকান্দি উপজেলার শহিদনগর ও হাসানপুর এলাকায় চার লেনের সংস্কার কাজ চলছে। ফলে চার লেনের যানবাহনগুলো দুই লেনে চলাচল করায় প্রতিদিন দীর্ঘ যানজট হচ্ছে। ঈদযাত্রায় এখানে ভোগান্তির আশঙ্কা অনেক বেশি। বৃহস্পতি ও শুক্রবার রাতে নিয়মিত যানজট হচ্ছে।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুই পাশে সার্ভিস লেনসহ চার লেনের কাজ চলায় ঈদে ঘরে ফেরা মানুষ ভোগান্তি এড়াতে পারবে না। এছাড়া বিভিন্ন পরিষেবার লাইন স্থানান্তরের কাজ চলছে।

উত্তরবঙ্গের যাত্রীদের ভোগান্তি অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে এবার বেশি হবে। সিরাজগঞ্জের কড্ডার মোড়, কোনাগাতি ও পাঁচিলায় ফ্লাইওভার নির্মাণ ও নলকা সেতু এলাকায় যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। ‘নলকা’ ও ‘চান্দাইকোনা’ সেতু পুরোপুরি চালু না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেবে।

বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের সড়ক নির্মাণ কাজ চলতে থাকায় টঙ্গী হয়ে গাজীপুর পর্যন্ত রাস্তা ভাঙাচোরা। টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তায় পৌঁছাতে ৩ ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App