×

জাতীয়

রানা প্লাজা ধস ‘১ যুগেও মামলা নিষ্পত্তি হবে না’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২২, ১০:৪১ পিএম

রানা প্লাজা ধস ‘১ যুগেও মামলা নিষ্পত্তি হবে না’

রানা প্লাজা ট্রাজেডি

৯ বছর আগে আজকের দিনে ধসে পড়েছিল সাভারের রানা প্লাজা। বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানা নিয়ে গড়ে ওঠা ভবনটিতে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনায় হারিয়ে যায় এক হাজার ১৩৬টি তাজা প্রাণ। আহত হন আরো প্রায় দেড় হাজার মানুষ। বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই ঘটনায় দায়ের করা ‘অবহেলা ও অবহেলাজনিত হত্যা’ মামলার অভিযোগ গঠনের সাড়ে পাঁচ বছর পর আইনি অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে গত ৩১ জানুয়ারি সাক্ষ্য নেয়া শুরু হলেও ৫৯৪ সাক্ষীর মধ্যে গত আড়াই মাসে মাত্র একজন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। মামলা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে এক যুগেও এ মামলা নিষ্পত্তির সম্ভাবনা নেই।

জানা যায়, ভবন ধসে বিপুলসংখ্যক মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনায় ওই সময় মোট চারটি মামলা করা হয়। এর মধ্যে অবহেলার কারণে মৃত্যু উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ, ইমারত নির্মাণ আইন না মেনে ভবন নির্মাণ করায় একটি মামলা করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং ভবন নির্মাণে দুর্নীতি ও সম্পদের তথ্য গোপন সংক্রান্ত দুটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে কেবল দুদকের দায়ের করা সম্পদের তথ্য গোপনের মামলাটি নিষ্পত্তি হয়েছে। সম্পদের হিসাব দাখিল না করায় দুদকের দায়ের করা মামলায় ২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট রানাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। এছাড়া রানার মা মর্জিনা বেগমকে ছয় বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি তার সম্পদের ৬ কোটি ৬৭ লাখ ৬৬ হাজার ৯৯০ টাকা বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দেন বিচারক।

এর বাইরে ভবন নির্মাণে দুদকের দায়ের করা দুর্নীতির মামলাটির বিচার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া রানার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনের মামলা দুটিও বিচারাধীন রয়েছে। মামলার আসামি ভবন মালিক সোহেল রানা কারাগারে থাকলেও অধিকাংশ আসামি জামিনে এবং পলাতক রয়েছেন। জানা গেছে, মামলার অভিযোগ গঠনের সাড়ে পাঁচ বছর পর গত ৩১ জানুয়ারি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়ার আদালতে সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী সাভার থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) ওয়ালী আশরাফ। আসামিদের পক্ষে জেরাসহ এই সাক্ষীর সাক্ষ্য নেয়া শেষ হতে সময় লেগেছে আড়াই মাস। গত ১৬ এপ্রিল প্রথম সাক্ষীর সাক্ষ্য নেয়া শেষ হয়।

মামলাটির রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর বিমল সমাদ্দার ভোরের কাগজকে বলেন, ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর আদালতের এই আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অধিকাংশ আসামি উচ্চ আদালতে আপিল করেন। আপিল নিষ্পত্তি হতে পাঁচ বছর সময় লেগে যায়। গত ৩১ জানুয়ারি তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য নেয়ার মধ্য দিয়ে সাক্ষ্য নেয়া শুরু হয়। পরবর্তী সাক্ষ্য নেয়ার দিন ধার্য রয়েছে আগামী ২৯ মে। ৫৯৪ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র একজনের সাক্ষ্য শেষ হলো। সাক্ষ্য নিতে এত সময় লাগার কারণ জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ৩৯ আসামির প্রত্যেকের পক্ষে জেরা করতে সময় লাগছে। শুনানির দিনে অনেক মামলায় সাক্ষ্য নেয়া হয়। এছাড়া আসামিরা আদালতে হাজির না হওয়ায় দুইবার সাক্ষ্য নেয়া পেছানো হয়। এই মামলায় আসামি ও সাক্ষীর সংখ্যা অনেক। তাই বিচারকাজ সম্পন্ন হতে সময় লাগবে।

চাঞ্চল্যকর মামলাটির বিচারকাজ এখনো শেষ না হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করেছেন শ্রমিকনেত্রী, বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার। তিনি বলেন, কবে বিচার শেষ হবে? বিচার পাওয়ার জন্য শ্রমিকদের আর কত বছর অপেক্ষা করতে হবে? আমরা বিচারটা দেখতে চাই।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে ধসে পড়ে সাভারের রানা প্লাজা। ভবনের নিচে চাপা পড়েন সাড়ে পাঁচ হাজার পোশাক শ্রমিক। ওই ঘটনায় ১১৩৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আহত ও পঙ্গুত্ববরণ করেন প্রায় দুই হাজার শ্রমিক। ধ্বংসস্ত‚পের নিচ থেকে ২৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App