×

জাতীয়

ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু, লোকে লোকারণ্য কমলাপুর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২২, ১১:১৬ এএম

ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু, লোকে লোকারণ্য কমলাপুর

টিকিট হাতে পেয়ে উচ্ছ্বসিত এক নারী

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষের ভিড়ে কমলাপুর লোকে লোকারণ্য।  একটা টিকেটের জন্য গতকাল রাত থেকে টিকিট যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ কমলাপুরসহ রাজধানীর পাঁচটি স্টেশনে।

আজ শনিবার (২৩ এপ্রিল) সকাল থেকে ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ঢাকার পাঁচটি স্টেশনসহ  সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলোতে বিভিন্ন গন্তব্যের ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে।

[caption id="attachment_346163" align="aligncenter" width="700"] টিকিট হাতে পেয়ে উচ্ছ্বসিত এক নারী[/caption]

শনিবার সকাল আটটায় ঢাকার কমলাপুর, বিমানবন্দর, তেজগাঁও ও ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়, চলবে বিকাল চারটা পর্যন্ত। এদিনে দেওয়া হচ্ছে ২৭ এপ্রিলের টিকিট।

সকালে কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা যায় টিকেটের জন্য যাত্রীর উপচেপড়া ভিড়। স্টেশনের ১৬টি কাউন্টারের সামনেই দীর্ঘ লাইন। বৃহস্পতিবার বিকেলে এসে লাইনে দাড়ান বেসরকারি কর্মী নাজমা, আজ সকাল ১০ টা নাগাদ টিকেট পেয়ে তিনি জানান, দীর্ঘ প্রতিক্ষার পরে টিকেট পেয়ে তিনি খুশি।

কমলাপুর স্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার জানান, তারা প্রতিদিন প্রায় ২৭ হাজার টিকেট বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। এ টিকিটের অর্ধেক স্টেশনের কাউন্টারে এবং বাকি অর্ধেক অনলাইনে বিক্রি হওয়ার কথা।

তিনি বলেন, আজকে থেকে অগ্রিম টিকিট কাটা শুরু হল একযোগে অনলাইন ও কাউন্টারে। পাঁচটি স্টেশনে এই অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। যতক্ষণ টিকেট থাকবে, ততক্ষণ যাত্রীরা টিকিট পাবেন। কাউন্টারের পাশাপাশি অনলাইনেও টিকিট দেয়া হচ্ছে।

সায়েম নামে এক যাত্রী জানান, শুক্রবার রাত থেকে তিনি অপেক্ষায় ছিলেন স্টেশনে, এখন রংপুর এক্সপ্রেসের চারটি টিকিট পেয়েছে। সেহেরি সেরেছেন স্টেশনে। তার মতো হাজারো মানুষ রাত জেগে স্টেশনগুলোতে অবস্থান করেছেন একটি টিকিটের জন্য। তবে যাত্রীরা টিকিট কাটার এ ভোগান্তি অবসানে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে  বলেন, ঈদে স্বচ্ছন্দ্যে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাড়ি যেতে ট্রেনই নিরাপদ বাহন। সেজন্য এত কষ্ট স্বীকার করেও অপেক্ষার পর অপেক্ষায় সময় গুনছি। ইফতারির পরেই অনেকেই স্টেশনে এসে লাইনে দাঁড়ান। সেহেরি খেয়েছেন স্টেশনে। সেখানে বিক্রি হয়েছে সেহেরি প্যাকেট।

এদিকে সারারাত সংবাদপত্র বিছিয়ে অনেকে বসেছিলেন স্টেশনে। সকালে কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা গেলো পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ওইসব পত্রিকার কাগজের স্তূপ একদিকে সরিয়ে নিচ্ছেন।

অগ্রিম টিকেট কাটার সময়ে যাত্রীদের এনআইডি বা জন্মসনদের ফটোকপি দেখাতে হচ্ছে। একজন যাত্রী সর্বোচ্চ চারজনের টিকেট কিনতে পারছেন। সেক্ষেত্রে তাকে অন্য তিনজনেরও এনআইডি বা জন্মসনদ দেখাতে হচ্ছে।

আজ শনিবার ২৭ এপ্রিলের টিকেট বিক্রি হচ্ছে। রবিবার ২৮ এপ্রিলের, সোমবার ২৯ এপ্রিলের, মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিলের এবং বুধবার ১ মে’র টিকেট বিক্রি হবে। অন্যদিকে, ঈদের পর ফিরতি যাত্রা শুরু হবে ৫ মে থেকে। সেই টিকেট বিক্রি হবে ১ মে। এরপর যথাক্রমে ৬ মের জন্য ২ মে, ৭ মে’র জন্য ৩ মে এবং ৮ মে’র জন্য ৪ মে টিকেট কেনা যাবে।

কমলাপুর স্টেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ৩৬টি আন্তঃনগরে আসন সংখ্যা ২৬ হাজার ৭৭২টি। আরও কিছু বগি যোগ করে আসন সংখ্যা বাড়ানো হবে। কমলাপুর স্টেশনে ১৬টি কাউন্টার থেকে বিক্রি করছে। নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা কাউন্টার খোলা হয়েছে।

অনলাইন টিকেটে সার্ভার ডাউন,অন লাইনে ঢোকা যাচ্ছে না এমনসব ক্রটি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা। সহজ ডটকম নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অনলাইন টিকেট বিক্রির দায়িত্ব পেয়েছে। এর আগে সিএনএস নামে আরেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেনের টিকেট বিক্রি করতো।

যাত্রীদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, টিকেট কাউন্টারে গিয়ে নিজের পছন্দের টিকেট পাওয়া যায় না। কেবিন চাইলে পাওয়া যায় এসি চেয়ার ও শোভন চেয়ার দিচ্ছে। টিকেট নিতে হাজার হাজার মানুষের ভিড়। অগ্রিম টিকেট কিনতে এসে ট্রেনের নিয়মিত যাত্রীরা পড়ছেন বিপাকে। তারা স্টেশনের প্রবেশ করতে বেগ পাচ্ছেন। নজরুল ইসলাম নামে একজন যাত্রী বলেন, ট্রেনে যাব। কিন্তু বাচ্চাদের নিয়ে স্টেশনেই প্রবেশ করতে পারছি না।

কমলাপুরের স্টেশন ব্যবস্থাপক মাসুদ বলেন, কালো বাজারে টিকেট বিক্রি রোধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখানে আরএমপি, র‌্যাব, পুলিশসহ সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছেন। রেলওয়ে বিভাগের কর্মকর্তারা সর্বক্ষণ মনিটরিং করছেন। যেন এটা নিশ্চিত হয় যে, টিকেট যাত্রীরা কাউন্টার থেকে পান। এই ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।

ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের জন্য নিয়মিত ১০২টি আন্তঃনগর ট্রেনের সঙ্গে ৬ জোড়া বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে চাঁদপুর স্পেশাল-১ ও চাঁদপুর স্পেশাল-২ ট্রেন চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে ১ মে এবং ঈদের পর ৪ মে থেকে ৮ মে পর্যন্ত চলাচল করবে। ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রুটেও দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল একই সময়ে চলাচল করবে।

ঢাকা-খুলনা রুটে খুলনা স্পেশাল ট্রেন বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চলাচলকারী মৈত্রী এক্সপ্রেসের অতিরিক্ত রেক দিয়ে চলাচল করবে আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত। এছাড়া ঈদের দিন ভৈরব বাজার ও কিশোরগঞ্জ রুটে শোলাকিয়ায় স্পেশাল-১ এবং ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রুটে শোলাকিয়া স্পেশাল-২ চলাচল করবে।

অঞ্চলভেদে যে ৫ স্টেশনে মিলবে অগ্রিম টিকিট

রাজধানীর কমলাপুর স্টেশন থেকে সমগ্র পশ্চিমাঞ্চলগামী ও খুলনাগামী স্পেশাল ট্রেনের টিকিট; বিমানবন্দর স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট; তেজগাঁও স্টেশন থেকে ময়মনসিংহ, জামালপুরগামী ও দেওয়ানগঞ্জ স্পেশালসহ সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট; ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে মোহনগঞ্জগামী মোহনগঞ্জ ও হাওড়া এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট এবং ফুলবাড়িয়া স্টেশন (পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন) থেকে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App