×

সম্পাদকীয়

এ মৃত্যুর দায় কে নেবে?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২২, ০১:২৬ এএম

নাহিদ-ডালিয়া ছয় মাস আগে সংসার শুরু করেন। প্রেম করে বিয়ে করেন। ডালিয়ার হাতে মেহেদি রং এখনো লেগে আছে। সুখের সংসারে আচমকাই নেমে এলো ঘোর অন্ধকার। কাজের জন্য বেরিয়ে বাসায় ফিরলেন কফিনবন্দি হয়ে। নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের ছোড়া ইটপাটকেলের মাঝে পড়ে মঙ্গলবার দুপুরে গুরুতর আহত হন নাহিদ। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতেই মারা যান। খবরের কাগজে মৃত্যুটি গুরুত্ব সহকারে উঠে আসছে। সত্যিই খবরটি বেদনাদায়ক। আমরাও মর্মাহত। এই ঘটনায় আরেকজনের মৃত্যু হয়েছে। তার নাম মোরসালিন (২৬)। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের আইসিইউতে তার মৃত্যু হয়। নিহত মোরসালিন রেডিমেড কাপড়ের দোকানের কর্মচারী ছিলেন। রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের রসুলপুর এলাকায় থাকতেন তিনি। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দিতে। নাহিদ হোসেন (২০) পেশায় কুরিয়ার সার্ভিসের ডেলিভারিম্যান। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে নাহিদ সবার বড়। ১০ বছর বয়স থেকেই উপার্জনের সংগ্রাম শুরু তার। দোকানে কাজ করে বাবার হাতে তুলে দিতেন টাকা। টানাটানির সংসারে সচ্ছলতা আনতে নাহিদ একটি কুরিয়ার সার্ভিসে ‘ডেলিভারিম্যান’ হিসেবে কাজ করছিলেন। কত স্বপ্ন ও কত আশা ছিল। তার এই পথচলা দীর্ঘ হয়নি। নাহিদ ও ডালিয়া ছয় মাস আগে বিয়ে করে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের রনি মার্কেটের পাশে দেওয়ানবাড়িতে ছোট্ট একটি ঘর নিয়ে সংসার পেতেছিলেন। সুখেই কাটছিল তাদের দিন। প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবারও কুরিয়ারের কাজে বের হয়েছিলেন নাহিদ। কে জানত, ওই যাওয়াই তার শেষ যাওয়া হবে! মাত্র ছয় মাসের মাথায় বিধবা হলেন ডালিয়া। সন্তান হারিয়ে বাবা নাদিম হোসেন শোকে বাকরুদ্ধ। তিনি আর্তনাদ করে বলছেন, ছেলে হত্যার বিচারই বা আমি কার কাছে চাইব? ওরে কেন মারল? এখন আমি কার নামে মামলা করুম, কার কাছে বিচার চামু, এই দুঃখ-কষ্ট কারে বলুম আমি, কী বলব, আর কিছু বলার নাই। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা ব্যবসায়ী-দোকান কর্মচারী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে রীতিমতো রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল মঙ্গলবার। ২ জন প্রাণ হারানোর পাশাপাশি আহত হয়েছেন অনেক। নিউমার্কেট এলাকায় মার্কেট ও ফুটপাতকেন্দ্রিক চাঁদাবাজি ও আধিপত্য নিয়ন্ত্রণ নিয়েই বিভিন্ন সময় বারবার এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। পাশাপাশি বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দাম চাওয়া নিয়েও ক্রেতাদের সঙ্গে প্রায়ই বাকবিতণ্ডার অভিযোগ রয়েছে। মঙ্গলবারের ঘটনাটিও আলাদা কিছু নয়। তদন্তে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসুক। অপরাধীরা চিহ্নিত হোক। একই সঙ্গে নাহিদ ও মোরসালিনের খুনের প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসুক। মানবিকভাবে বিবেচনায় এনে দুটি পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়ও গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App