×

শিক্ষা

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বাতিল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২২, ০৬:১৫ পিএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করে দেয়া হচ্ছে। শ্রেণি কার্যক্রমের ভিত্তিতে এখন শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। সেই মূল্যায়নের ভিত্তিতে ‘বৃত্তি’ও দেয়া হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এমন খবর পাওয়া গেলেও প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এখনই সেই সিদ্ধান্তের কথা বলতে নারাজ। তার মতে, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বা পিইসি হবে কি হবে না, সে সিদ্ধান্ত জানাতে সরকার আরেকটু সময় নিতে চায়। তিনি বলেন, কোভিডের কারণে প্রায় দুই বছর স্কুল বন্ধ ছিল। আমরা শিখন ঘাটতি পূরণ করে তারপর সিদ্ধান্ত জানাব। প্রসঙ্গত, ২০১০ সাল থেকে দেশে সমাপনী পরীক্ষা শুরু হয়েছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, কোভিড পরবর্তী সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করার বিষয়ে গত সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষের বৈঠক হয়। সেই বৈঠকেই প্রধানমন্ত্রী সমাপনী পরীক্ষা না নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন। এতদিন ধরে বিষয়টি চেপে রেখেছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জেএসসি পরীক্ষা না হওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার বিষয়টিও সামনে আসে।

কোভিড মহামারীর কারণে ২০২০ সালে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা নেয়া যায়নি। মহামারীর প্রকোপ কিছুটা কমায় ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল-কলেজে সরাসরি ক্লাস শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেয়ার পরিকল্পনা হলেও পরবর্তীতে সেটি বাতিল হয়। সমাপনী পরীক্ষার পরিবর্তে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে পরবর্তী শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়। জাকির হোসেন বলেন, সমাপনী পরীক্ষা নভেম্বরের দিকে হয়, আমরা ২-৩ মাস আগে জানাব। এখনই জানালে কোচিং সেন্টার সব লাইন ধরবে। সমাপনী একবারেই বাতিল করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের নতুন যে কারিকুলাম আছে, সেখানে পরীক্ষাটা নাই। আমরা শিক্ষাবিদসহ অংশীজনের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব।

তাহলে যে পাঠপরিকল্পনা করা হয়েছে, সেখানে কি এ পরীক্ষা ধরেই পরিকল্পনা করা হয়েছে, নাকি কেবল ঘাটতি পূরণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে-এমন প্রশ্নের জবাবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, আমাদের লেখাপড়া পরীক্ষাকেন্দ্রিক নয়। শিক্ষাক্রমের শিখনযোগ্যতা অর্জনের জন্য শিশুরা পড়াশোনা করে। গত দুই বছরে বিভিন্নভাবে সেই যোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করা হয়েছে। তারপরও সশরীরে যেহেতু আসতে পারেনি, তাই শিখনঘাটতি রয়েই গেছে। এ কারণে যে সময়সূচি দেয়া হয়েছে, সেখানে শিখনঘাটতি পূরণে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা আপাতত শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার টেনশন আর দিতে চাই না। মহাপরিচালক আরো বলেন, এমনিতেই ভবিষ্যতে নতুন শিক্ষাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষাই থাকবে না। ধারাবাহিকভাবে মূল্যায়নে যাবে। এ জন্য শিক্ষার্থীদের বাড়তি টেনশন দিতে চাইছি না। আস্তে আস্তে তারা অভ্যস্ত হয়ে যাবে। তাহলে অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা হবে কি না- প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরীক্ষা না বলে মূল্যায়ন হচ্ছে। সেটি নিয়মিত মূল্যায়ন, সাপ্তাহিক মূল্যায়ন হবে, ত্রৈমাসিক, ষান্মসিক এবং বার্ষিক মূল্যায়ন হবে। এ মুহূর্তে ‘পরীক্ষা’ শব্দটি বলতে তারা রাজি নন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আমিনুল ইসলাম খান বলেন, আমরা চেষ্টা করছি, কারণ বড়দের ঘাটতি পূরণের প্রক্রিয়া ও ছোটদের ঘাটতি পূরণ এক প্রক্রিয়া নয়। তাই পরীক্ষাকেন্দ্রিক বিষয়কে সামনে এনে, বিতর্ক করে আমরা এই স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং শিক্ষার প্রতি আগ্রহটিকে ধরতে চাই না। তারা পড়াশোনা করবে। যদি পরীক্ষা দিতে হয় দেবে, আর যদি পরীক্ষা না নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে দেবে না। তাই এ নিয়ে এত আগে মন্তব্য করা উচিত নয়।

আরেক প্রশ্নের জবাবে সচিব আমিনুল ইসলাম খান বলেন, আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে অভিভাবকদের জানাতে চাই, এই পরীক্ষাকেন্দ্রিক চিন্তা করা এবং এ নিয়ে অস্থিরতা দেখানোর কোনো প্রয়োজন নেই। প্রধানমন্ত্রী যে আনন্দঘন পরিবেশে শিশুদের বিকাশের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছেন, সেই অনুযায়ীই আমরা নতুন শিক্ষাক্রমে যাচ্ছি। সবার পরামর্শ নিয়ে আগে যখন পরীক্ষা হতো (নভেম্বর), তার তিন মাস আগে বলতে পারব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App