×

শিক্ষা

শাবিতে বিএনপি ও জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের অন্তর্কোন্দল চরমে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২২, ০৪:৩০ পিএম

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্কোন্দলে জড়িয়ে পড়েছে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকরা। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে প্রার্থীতা না দেয়া, গ্রুপের মিটিং আহ্বান জানানো স্বত্বেও বৈঠক না ডাকা, কিছু শিক্ষকের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও দলীয় স্বার্থের উর্ধ্বে ব্যাক্তি স্বার্থের প্রাধান্য দিয়ে স্বার্থ হাসিল করা হয়েছে- এমন অভিযোগ প্রেক্ষিতে নিজেদের মধ্যে অন্তর্কোন্দলে জড়িয়ে পড়ে এই প্যানেলটি। এ নিয়ে নিজেরা বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়ছেন বলেও জানা গেছে। এমনকি ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে এ প্যানেল থেকে প্রার্থীতা দেয়া হয়নি বলেও কিছু শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের আগে বৈঠকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু প্রার্থীতা নিয়ে একমত না হতে পারায় প্রার্থী দিতে পারেননি তারা। এ নিয়ে একাধিকবার বৈঠকের আহ্বান জানানো হলেও অপ্রাসঙ্গিক কারণে বৈঠক হয়নি। এর কারণ জানতে চাইলে গ্রুপের সদস্যদের সঙ্গে প্রকাশ্যে উচ্চবাচ্য হয় গ্রুপের কিছু সিনিয়র শিক্ষকের। এতে দিনদিন নিজেদের মধ্যে অন্তঃকোন্দল ও একে অপরের প্রতি ক্ষোভ বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ছে বিভক্তি।

নিজেদের মধ্যে অন্তর্কোন্দল ও নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কারণ এতোদিন ধামাচাপা থাকলেও এখন তা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। বিষয়টি নিয়ে ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম’-এর আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সাজেদুল করিমকে লিখিত চিঠি দিয়েছেন একই গ্রুপের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. মোজাম্মেল হক, অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. খালিদুর রহমান, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মোরাদ ও অধ্যাপক ড. শাহ মো. আতিকুল হক। চিঠিতে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত শিক্ষক সমিতি নির্বাচনে এ প্যানেল থেকে প্রার্থীতা না দেওয়া এবং কিছু শিক্ষকের প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষিতে প্যানেলের সদস্যদের নিয়ে মিটিং আহ্বানের জন্য বলার পরও আয়োজনে ব্যর্থতা ও অবস্থানের কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে।

ঘটনা নিয়ে অভিযোগকারী সদস্য অধ্যাপক ড. খালিদুর রহমান জানান, ঘটনার সূত্রপাত নির্বাচনে প্রার্থীতা দেয়া না দেয়া নিয়ে। শুরুতে ফোরামের একাংশ (জামায়াতপন্থীরা) নির্বাচনে অংশগ্রহণে অনীহা প্রকাশ করলে জাতীয়তাবাদী মতাদর্শের শিক্ষকরা নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে অধ্যাপক ড. সাজেদুল করিমসহ গ্রুপের নেতৃবৃন্দের মধ্যেও ধীরে ধীরে এ বিষয়ে অনীহা প্রকাশ পেতে থাকে। সিদ্ধান্ত হয়, এবছর নির্বাচনে অংশ নেয়া হবে না। তবে নির্বাচন বয়কট করছেন না তারা। শিক্ষকরা চাইলে ভোট দিতে যেতে পারবেন, এতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে কি কারণে নির্বাচনে প্রার্থীতা দেওয়া হয়নি তা এখনো স্পষ্ট করেননি নেতারা। বারবার সমস্যার সমাধানে মিটিং ডাকতে বলা হয়েছে নেতৃবৃন্দকে। তারা অপ্রাসঙ্গিক কারণে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি গ্রুপের সদস্যরা বিষয়ে কথা বলতে গেলে গ্রুপের কিছু প্রভাবশালী শিক্ষক উচ্চবাচ্য বাক্যে কথা বলে তাদেরকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন ।

বিএনপিপন্থী কিছুও শিক্ষকও ড. খালিদের বক্তব্যের সমর্থন জানিয়ে অভিযোগ তুলছেন, শিক্ষক সমিতির নির্বাচনকালীন প্রভাবশালী শিক্ষকরা নিজেদের স্বার্থে গ্রুপকে ব্যবহার করেছেন বলে প্রমাণ মিলেছে। বিভিন্ন ঘটনা ও নেতৃবৃন্দের প্রশ্নবিদ্ধ গড়িমসি আচরণ অধিকাংশ শিক্ষকের কাছে এখন স্পষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু দলীয় স্বার্থের কথা চিন্তা করে অনেকেই চুপ ছিলেন। এমনকি এ বিষয়ে গ্রুপের সদস্যরা প্রভাবশালী কিছু শিক্ষকের ভয়েও মুখোমুখী হতে পারছিলেন না। তাদের বক্তব্য, নির্বাচনে অনিবার্য পরাজয় জেনে ব্যাক্তিগত স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে ফোরামের বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন তারা। লিয়াজু করে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে প্রায় ৯০ জনের বেশিক শিক্ষক ভোট দিয়ে আওয়ামী বামপন্থী শিক্ষকদের ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তচিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ’ প্যানেলকে বিজয়ী করেছেন।

‘ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্য’ নিয়ে ভোরের কাগজের এক অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে অধ্যাপক ড. সাজেদুল করিমের স্ত্রী কর্মরত রয়েছেন। একাডেমিক কাগজপত্রগত জটিলতা থাকায় কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে বিষয়টি তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন বর্তমান শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলাম। দীর্ঘ সময় ধরে এ সমস্যা নিয়ে আলোচনা চলছিল। যার সমাধান এখনো হয়নি। তবে গত ১৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় তাকে সহকারী রেজিস্ট্রার থেকে উপ-রেজিস্ট্রার হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অথচ কোনো ব্যক্তির বিষয়ে তদন্তাধীন থাকা সত্ত্বেও এর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কাউকে পদোন্নতি দেওয়া আইনের ব্যত্যয় বলে অনেকে মনে করছেন।

এদিকে ‘সমঝোতা করে প্রার্থীতা না দিয়ে নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকরা আওয়ামী বামপন্থী শিক্ষকদেরকে বিজয়ী করেছেন’ এমন অভিযোগও তুলছেন মূলধারা আওয়ামীপন্থী শিক্ষক নেতারা। এ বিষয়ে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’র আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মস্তাবুর রহমান বলেন, শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে আমাদের যে ভোট পেয়েছি তাতে আমরা পূর্বের ন্যায় বিপুল ভোটে বিজয়ী। তবে এবছর বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকরা প্যানেল থেকে প্রার্থীতা না দিয়ে সমঝোতা করে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলকে বিজয়ী করেছে। বিএনপি-জামায়াতপন্থী কিছু শিক্ষক ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলে এ সমঝোতা করেছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে ফোরামের আহ্বয়ক অধ্যাপক ড. সাজেদুল করিম বলেন, নির্বাচনের পূর্বে গত ১৪ মার্চ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত মেয়ের বিবাহের কারণে শ্রান্তিবিনোদন ছুটিতে ছিলাম। এ কারণে গত ১১ মার্চ আসন্ন নির্বাচন পরিচালনার জন্য ইন্টেরিম টাস্ক কমিটি মিটিংয়ে অধ্যাপক ড. আশরাফ উদ্দিনের নেতৃত্বে বাকি সদস্যদেরকে দায়িত্ব দিয়ে যায়। তারা মূলত নির্বাচন সংক্রান্ত দায়িত্বে ছিলেন। দীর্ঘ সময়েও প্রার্থীতা নিয়ে একমত হতে না পারায় প্যানেল দিতে পারেনি তারা।

এ সংক্রান্ত বৈঠক ডাকতে ব্যর্থতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ড. সাজেদুল বলেন, নির্বাচন সংক্রান্ত সর্বশেষ ফোরামের মিটিং হয় ৩০ মার্চ। সেখানে সবার মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচনে ভোট দেয়া না দেয়া নিয়ে কোনো বিধি-নিষেধ না রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। তাছাড়া সবার মতামতের প্রেক্ষিতে ও ব্যস্ততার কারণে ঈদের পর ক্যাম্পাস খোলার পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যে বৈঠক হবে।

ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, আমি মেয়ের বিয়ের কারণে ছুটিতে ছিলাম। ফোরামের অন্যরা নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে ছিল। এখানে আমাকে জড়ানো একেবারে হীন উদ্দেশ্য প্রণোদিত, অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপপ্রয়াস। নির্বাচনে যেখানে আমার কোনো যোগসাজস নেই সেখানে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের কোনো প্রশ্নই উঠে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App