×

রাজধানী

বাড়তি দামেও মিলছে না পছন্দসই পোশাক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২২, ০৮:৫০ এএম

বাড়তি দামেও মিলছে না পছন্দসই পোশাক

সোমবার রাজধানীর একটি মার্কেটে ঈদকে ঘিরে ক্রেতাদের এমন আনাগোনা পরিলক্ষিত হয়। ছবি: ভোরের কাগজ

রঙের ভ্যারিয়েশন নেই, নেই ডিজাইনে নতুনত্ব। গত বছরের পুরনো ডিজাইনের পোশাক দিয়ে ঠাসা দেশীয় শো-রুমগুলো। সঙ্গে চড়া দাম তো রয়েছেই। ফলে এবারের ঈদে দাম ও পছন্দের সমন্বয়ে মনমতো পোশাক খুঁজে পেতে বেশ বেগ পোহাতে হচ্ছে ক্রেতাদের। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের ক্রেতারা একটু কম দামের আশায় এক মার্কেট থেকে অন্য মার্কেটে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হচ্ছেন। তাদের অভিযোগ, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার পোশাকের দাম কয়েকগুণ বেশি। সেই তুলনায় মানসম্মত পোশাক নেই।

অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, মহামারির দুই বছরে তেমন ব্যবসা হয়নি। এখন মানুষের মধ্যে স্বস্তি রয়েছে, করোনা ভাইরাসও কমে গেছে। তবুও গত ২ বছর করোনার কারণে বেচাবিক্রি না থাকায় যে সংকটে পড়তে হয়েছিল তা এখানো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া কাপড়ের পাইকারি দামই অনেক বেশি। মানুষের হাতে টাকা কম, তাই বেচাবিক্রি কম হওয়ার শঙ্কা থেকে আমদানিকারকরা তুলনামূলক কম আমদানি করেছেন; এতে কাপড়ের সংকট বেড়েছে। বাধ্য হয়ে কাপড়ের দামও বাড়িয়ে দিতে হয়েছে। সব সংকট কাটিয়ে আশানুরূপ বিক্রি না বাড়লে এবারো লোকসান গুনতে হবে বলে শঙ্কা তাদের।

ঈদ কেনাকাটায় মার্কেট ঘুরে ঘুরে দুহাত ভরে শপিং ব্যাগ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন ক্রেতারা; এখন এমন দৃশ্যের দেখা মেলা ভার। কারণ, এ বছর সাধারণ সুতি কাপড়ের যে কোনো ড্রেসের দামই পরছে ২ থেকে ৪ হাজার টাকা। লিনেন, জর্জেট, মটকা, মসলিন, হাফসিল্ক, এন্ডি সিল্ক, তসর সিল্কের শাড়ি, সেলোয়ার কামিজ ও পাঞ্জাবির দামও দুই থেকে তিন গুণ বেড়েছে। ফলে দামের সঙ্গে বাজেট মেলাতে গিয়ে কিনতে পারছেন খুব কম সংখ্যক ক্রেতা। যাদের হাতে টাকা আছে তাদের অভিযোগ, বেশিরভাগ ডিজাইনই পুরনো; ভালো ও নতুন কিছু নেই। যারা হিসাব করে টাকা নিয়ে এসেছেন, তারা চড়া দামের কারণে এক মার্কেট থেকে অন্য মার্কেটে কেবল ঘুরছেন একটু কম দামের আশায়।

মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, এবার দেশি পোশাকের চেয়ে ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানি ও চাইনিজ পোশাকের সমাহার বেশি। বসুন্ধরা সিটি, বনানী সুপার মার্কেট, পিংক সিটিসহ অনেক মার্কেটের বহু দোকান এখন এসব পোশাকে সয়লাব। ক্রেতাদের ভাষায়, দেশীয় বুটিকের কাপড় তুলনামূলক ‘সিম্পল’ বলে মনে হয়, যা তাদের মতে ততটা ‘গর্জিয়াস’ নয়। কিন্তু একই দাম দিয়ে পাশ্চাত্য ঢংয়ের পোশাক কিনলে মনে হয় দামে-মানে পুষিয়ে গেছে। ফলে শুল্কের অজুহাতে তিন থেকে চার গুণ দাম হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা।

বেইলি রোডে ছোটদের বিভিন্ন মানের দেশি-বিদেশি পোশাকের ভালোই কালেকশন রয়েছে। বিভিন্ন বয়সি ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে অভিভাবকরা পছন্দের পোশাক খুঁজে ফিরছেন দোকানে দোকানে। তবে পোশাক পছন্দ হলেও তাদের অভিযোগ, আগে যে পোশাক ৫ থেকে ৭শ টাকায় পাওয়া যেত, তা এখন ২ থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেইলি স্টারের মানহা শো-রুমের কর্ণধার ফয়েজ বলেন, এবার দামটা বেশি সত্যি, কারণ আমাদেরই কিনতে হচ্ছে চড়া দামে।

গতকাল সোমবার রাজধানীর আসাদ গেইটের আড়ংয়ে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন যুঁথি-রাহাত দম্পতি। বেশ খানিকক্ষণ ধরেই পাঞ্জাবি দেখছিলেন তারা; এটা না ওটা, কোনোটাই মনে ধরছিল না। চোখে মুখে কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বের হয়ে যাবেন- এমন সময়ই জানতে চাওয়া, না কিনেই চলে যাচ্ছেন কোনো? উত্তরে যুঁথি বলেন, কী কিনব! সব কিছুরই গলাকাটা দাম এবার। এসেছিলাম পাঞ্জাবি কিনতে, কিন্তু পছন্দই হলো না। বেশিরভাগ জিনিসই দেখলাম গত বছরের; নতুন তেমন কালেকশন নেই। যে দুএকটা নতুন এসেছে সেগুলোর দাম ৪ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা। অথচ আগে এগুলো ২ থেকে সাড়ে ৩ হাজারে পাওয়া যেত। দেখি অন্য কোথাও মনমতো পাই কিনা।

বসুন্ধরা সিটিতে ঈদের পোশাক কিনতে এসেছিলেন, কলেজ পড়ুয়া অরিনা। ঈদের জন্য তার প্রথম পছন্দ ভারতীয় কিংবা পাকিস্তানি কাপড়। বললেন, আমি যেহেতু কটন নেব, ভারতীয় থ্রি-পিসই খুঁজছি। কারণ একটু দাম নিলেও এগুলোর কোয়ালিটি ভালো। পিস কিনে নিজের পছন্দমতো বানিয়ে নেব। দেশীয় ফ্যাশন হাউসের মধ্যে আড়ং বা ক্রে-ক্রাফটে আগে ভালোমানের কাপড় পাওয়া যেত, এখন আমি খুব একটা ভালো কিছু পাই না। কাপড়গুলো কেমন নরম টাইপ, ডিজাইনেও আর নতুনত্ব নেই। ভারতীয় বা পাকিস্তানি কাপড়ের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ।

দেশের বুটিকশিল্পকে হুমকির মুখে ফেলছে বলে মনে করেন বুটিক হাউস বিবিয়ানার সত্ত্বাধিকারী ও ডিজাইনার লিপি খন্দকার। তিনি বলেন, আমরা যেভাবে ডিজাইন করি সেগুলো দিয়েই কিন্তু তিন বছর আগে ভালো ব্যবসা করে গেছি। এখন পারছি না। ক্রেতারা আমাদের পোশাক তো পছন্দ করেছেনই না বরং বেশি দামের অভিযোগ তুলছেন। তিনি বলেন, ইন্ডিয়া থেকে লোকজন এসে হোটেল ভাড়া নিয়ে পুরোদমে ব্যবসা করে চলে যাচ্ছে। কিন্তু কাপড়সহ অন্যান্য ম্যাটেরিয়ালসের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা কাজ করতে পারছি না। ফলে ঈদের মৌসুমেও তেমন ব্যবসা হচ্ছে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App