×

জাতীয়

খুঁড়িয়ে চলছে রেলের ওয়ার্কশপ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২২, ০৮:৪৬ এএম

খুঁড়িয়ে চলছে রেলের ওয়ার্কশপ

কোচ মেরামতের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়েকে নির্ভর করতে হয় পাহাড়তলী ও সৈয়দপুর ওয়ার্কশপের ওপর। কিন্তু বেহাল এ দুটি ওয়ার্কশপের আধুনিকায়নে কোনো কাজই হয়নি। পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রাংশ, চালানোর লোকবলের অভাব। দীর্ঘদিন কর্মী নিয়োগ না হওয়ায় বর্তমানে ২৫-৩০ শতাংশ কর্মী দিয়ে কোনোমতে কাজ চালানো হচ্ছে রেলের এ দুটি কারখানায়। তাছাড়া অর্থের জোগানও অপ্রতুল। এ যেন ‘ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার’ এর মতো অবস্থা।

ওয়ার্কশপগুলোর তরফে জানা যায়, মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় বড় বড় যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়ে আছে। বিভিন্ন বিভাগে কর্মীর অভাবে যন্ত্রপাতির ব্যবহার না হতে হতে এখন বেহাল দশা। কিন্তু এ দুটি ওয়ার্কশপের ওপরই রেলকে সম্পূর্ণ নির্ভর করতে হয়। ৪০-৫০ বছরের পুরনো বগি থেকে দুর্ঘটনাকবলিতসহ বিভিন্ন কারণে কোচ মেরামতের জন্য প্রতিনিয়ত চাপ রয়েছে এ দুটি ওয়ার্কশপের ওপর। এবার ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৫০টি করে মোট ১০০টি কোচ মেরামতের নির্দেশনা রয়েছে এ দুটি ওয়ার্কশপের ওপর। কিন্তু স্বল্প লোকবল ও অপ্রতুল অর্থ দিয়ে ১০০টি কোচ মেরামত করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে, যা এক চ্যালেঞ্জ। এমনটাই জানা গেছে দুই ওয়ার্কশপ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।

এ বিষয়ে রেলের পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়তলী ওয়ার্কশপের বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক তাপস কুমার দাশ ভোরের কাগজকে বলেন, প্রতি মাসে আমাদের ওপর কোচ মেরামতের টার্গেট থাকে। এ মাসে ঈদের জন্য আমাদের ৫০টি পুরাতন ও অকেজো কোচ চলার উপযোগী করে ডেলিভারি দেয়ার নির্দেশনা আছে। কিন্তু লোকবলের অভাবে দ্রুত কাজ করা যাচ্ছে না। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি কোটা পূরণ করতে। ইতোমধ্যে আমরা ৩৫টি কোচ সরবরাহ করেছি। বাকিগুলো আরো খারাপ অবস্থায় রয়েছে। সেগুলো চলাচল উপযোগী করা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার।

তিনি জানান, এখানে লোকবল থাকার কথা ২ হাজার ২৫০ জন, আছে মাত্র ১ হাজার ৭ জন। এর মধ্যে সরাসরি কাজে সম্পৃক্ত (চতুর্থ শ্রেণি) ২৮১ জন, বাকিরা ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল বিভাগের। অর্থাৎ ৪৬ শতাংশ লোকবল নিয়ে কোনোমতে কাজ করে যাচ্ছে রেলের সর্ববৃহৎ এ ওয়ার্কশপটি। আর্থিক বরাদ্দের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা বছরে ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাই, কিন্তু পাই মাত্র ১৪ কোটি টাকার মতো। তাই কোচ মেরামতের জন্য যে যন্ত্রপাতি লাগে, মালামাল লাগে, তা মেরামত করে কাজের উপযোগী করতে আর্থিক সংকট তো রয়েছেই। তবে আমরা বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য বলেছি। দেখা যাক মন্ত্রণালয় কী করে। তবে বাকি ১৫টি কোচ যেভাবেই হোক মেরামত করে আমরা ঈদের জন্য রেল বহরে যোগ করব।

এদিকে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের ওয়ার্কশপ সৈয়দপুরের অবস্থা আরো খারাপ। এ দুটি ওয়ার্কশপ আধুনিকায়নের কথা থাকলেও দীর্ঘদিন কোনো উন্নয়ন হয়নি। তার ওপর বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে কোনো কর্মী নিয়োগ তো হয়নি, বরং অবসরে বা অন্য কারণে লোকবল কমেছে। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) সাদেকুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, এবার আমাদের ৫০টি কোচ মেরামতের টার্গেট দেয়া হয়েছে। ৪২টি ব্রডগেজ, আটটি এমজি কোচ। তবে লোকবল একেবারেই কম। এখানে ২ হাজার ৮৫৯ জনের মধ্যে ৭৩২ জন কর্মরত আছে। মাত্র ২৫ ভাগ জনবল নিয়ে চলছে বিশাল ওই কারখানাটি।

অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে তিনি জানান, ওভার টাইম ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা মঞ্জুর হয়েছে। তবে এত কম অর্থে সারা বছর কোচ মেরামত, এ মাসে ৫০টি কোচ মেরামত এবং মেরামতের জন্য পুরাতন যন্ত্রপাতি উপযোগী করতে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ কেনা, বিভিন্ন টুলস মেরামত ইত্যাদি করা অসম্ভব। তবুও প্রতিদিন একটি কোচ ও একটি ওয়াগন মেরামতের টার্গেট থাকে এখানে। এছাড়া রেলের হাজার হাজার ধরনের যন্ত্রাংশ তৈরি হয় এ ওয়ার্কশপে।

তিনি জানান, অতিদ্রুত আরো দেড় কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দের চিঠি দিয়েছি। এটা না হলে কাজ করা দুরূহ হয়ে পড়বে। রোজায় ৫০টি কোচ মেরামত করার জন্য ২০০ জন ওভারটাইম কাজ করছে। অতিরিক্ত কোচ মেরামত কাজে শ্রমিকদের অতিরিক্ত মজুরি (ওভারটাইম) দেয়া হচ্ছে। সারা বছর ওভারটাইম ব্যবস্থা চালু থাকলে উৎপাদন কার্যক্রম আরো গতিশীল হতো। সাদেকুর রহমান বলেন, এরই মধ্যে মেরামত হওয়া ৩৫টি কোচ রেলওয়ে পরিবহন বিভাগকে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ১৫টি রেলকোচ ২৫ এপ্রিলের মধ্যে রেলওয়েতে যোগ হবে বলে জানান তিনি।

রেলের ওয়ার্কশপগুলোর এমন দুর্দশার বিষয়ে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন জানান, দীর্ঘদিন ধরে ওয়ার্কশপগুলোতে কর্মী নিয়োগ হয়নি এটা সত্য। তবে আমরা নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছি। তাছাড়া ওয়ার্কশপগুলোর আধুনিকায়নে ভারত অর্থায়ন করবে বলে কথা হয়েছে। আশা করি দ্রুত কর্মী ও যন্ত্রপাতি সংকট কেটে যাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App