×

জাতীয়

সোনামণিদের নজর কাড়ছে ‘পুষ্পা’ ‘সারারা’ ‘গারারা’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২২, ০৮:৫৪ এএম

সোনামণিদের নজর কাড়ছে ‘পুষ্পা’ ‘সারারা’ ‘গারারা’

ম্যানিকিনের গায়ে পরিয়ে রাখা জামা দেখছে দুই শিশু। শনিবার রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিংমল থেকে তোলা ছবি -ভোরের কাগজ

নেট চিকেন কাপড়ে সিকোয়েন্সের কাজ করা লম্বা ঘেরওয়ালা ফোলানো ফ্রক। পুরো জামার উপরের পার্টে আলাদা করে জরি সুঁতোর লেইস লাগানো। চকচকে লেইসের সঙ্গে মিলিয়ে পুরো জামায় থোকায় থোকায় বসানো পুঁতি এবং কাপড়ের ফুল। গলায় এঁটে দেয়া মাল্টি কালারের স্টোনের বোতাম। সঙ্গে চুড়িদার সেলোয়ার ও চিকন পাড়ের ওড়না। একটু ট্রেন্ডি ধাঁচের নজরকাড়া এই পোশাকটির নাম ‘পুষ্পা’।

দোকানিরা জানিয়েছেন, এবারের ঈদে ছোট্ট সোনামণিদের পছন্দের তালিকায় প্রথমেই রয়েছে ‘পুষ্পা’। এছাড়াও সারারা, গারারা, কাঁচাবাদাম, টিস্যু গাউনগুলো চলছে ধুমসে। সাইজ বুঝে ড্রেসগুলো দাম ১ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত।

৭ বছরের ছোট্ট ফুটফুটে মাইসা মা-বাবার হাত ধরে এসেছে ঈদের জামা কিনতে। গতকাল শনিবার রাজধানীর বসুন্ধারা সিটিতে ঘুরে ঘুরে জামা দেখছিল সে। হঠাৎ তার চোখ আটকে গেল দোকানের সামনে পুতুলের (ম্যানিকিন) গায়ে পরিয়ে রাখা গাঢ় গোলাপি রঙের জামায়। এরপরই বায়না ধরল ওই জামাটি তার চাই-ই চাই।

দোকানি জানালেন, নেটের ওপরে জরি সুতার গর্জিয়াস কাজের জামাটির নাম কাঁচাবাদাম। একদাম ৩ হাজার টাকা। দাম শুনেই মাইসার মা খানিকটা আপত্তি জানালেও মেয়ের আবদার মেটাতে জামাটি কিনে নিলেন বাবা সাইদ আনোয়ার। সোনামণিদের নতুন কাপড়ের খোঁজে বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা মিলল এমন অনেক দৃশ্যের।

এবারের ঈদ হবে বৈশাখের মাঝামাঝি। এসময় প্রচণ্ড গরম থাকায় ছোট্ট শিশুদের পোশাক যেন হয় স্বস্তিদায়ক, সেদিকে রাখা হয়েছে বাড়তি নজর। বিভিন্ন ডিজাইনের গর্জিয়াস পার্টি ড্রেসগুলো ছাড়াও ক্রেতারা নরম কাপড়ের ও নকশার ড্রেসগুলো কিনছেন। এরমধ্যে সুতি,

হ্যান্ডলুম, লিনেন, তাঁত বা পাতলা খাদির পোশাকগুলোর বেশ চাহিদা। এছাড়া সিল্ক, ভিসকস, সাটিন, অরগাঞ্জা, মসলিন, গিøটারি কাপড়ের পোশাকও চলছে বেশ। ডেনিম ও জর্জেটে কৃত্রিম তন্তু ব্যবহার করা হলেও তা যেন নরম ও আরামদায়ক হয় সেদিকে খেয়াল রেখেই ডিজাইনাররা পোশাক তৈরি করেছেন। নামকড়া শপিংমলগুলো ছাড়াও দেশীয় বুটিক হাউস- দেশিদশ, ক্লাব হাউস, শৈশব, লা রিভ, উজু উম্মু, সারা লাইফস্টাইল, সেইলরসহ প্রায় সব ফ্যাশন হাউসই সেজেছে শিশুদের ঈদের পোশাকে।

মেয়ে সোনামণিদের ড্রেস : ঈদে মেয়ে শিশুদের পোশাক মানেই বিশেষ কিছু। এবার তাদের জামার কাপড়, রং, নকশা, কাটিং সবই ভিন্ন। কাতান ও টিস্যু কাপড়ে তৈরি সারারা ও গারারা দেখতে অনেকটাই কাছাকাছি। নাম পুরনো হলেও ইন্ডিয়ান ঢংয়ের এ ড্রেসগুলোর ডিজাইনে থাকছে নতুনত্ব। জামাগুলোর ওপরের পার্ট কামিজ যা ঝুলে ছোট। সেলোয়ার ঢোলা যার হাঁটুর দিকে ঘোরানো জরি চুমকির কাজ করা। ওড়নায়ও ভারি কাজ। এই জামাগুলোর দাম ২ থেকে ৫ হাজারের মধ্যে। এছাড়াও বেশি ঘেরের ট্রেন্ডি টিউনিক কামিজ ও প্লাজো, পার্টি ফ্রক, ঘাগড়া চোলি ও লেগিংসের চাহিদা বেশি দেখা যাচ্ছে। ভারি সুতি কাপড়ের ফুলেল প্রিন্টের হাতাকাটা ফ্রকগুলোরও বিশেষ চাহিদা রয়েছে এবার।

অন্যদিকে টপ-বটম, টপ-স্কার্ট, শর্ট টপ, কাফতান, ওয়ান শোল্ডার ফ্রক, ফ্রিল ফ্রক, জাম্প স্যুট, ক্রপ টপ, কোল্ড শোল্ডার টপ, লেগিংস, পালাজ্জো, ধুতি স্টাইলের সেলোয়ারের ডিজাইনেও বেশ বৈচিত্র্য দেখা গেছে। সেলোয়ারগুলো রাখা হয়েছে ঢিলেঢালা, যাতে সহজেই গায়ে বাতাস লাগে। সুতি, ডেনিম বা লিনেনের স্কার্ট ছাড়াও মসলিন, জর্জেট বা অরগেঞ্জা কাপড়ের স্কার্টে বড় বড় ফুলের ছাপা প্রায় সব ফ্যাশন হাউসেই দেখা গেছে। এর সঙ্গে একরঙা টপ বা শার্ট এবার একেবারেই নতুন। কামিজের ঝুলে ও হাতায় উঁচুনিচু কাটিং, ফ্রিল, কুঁচির ব্যবহার হয়েছে নতুন আঙ্গিকে। মেয়েদের পোশাকে নীলের অনেক ধরন, লাল, ম্যাজেন্টা, সাদা, হলুদ, ফিরোজা, গোলাপি, বাদামি, হালকা সবুজ ইত্যাদি রঙের ব্যবহার হয়েছে বেশি।

বাচ্চা ছেলেদের ড্রেস : ঈদে ছেলেদের পোশাকের মধ্যে প্রধান আকর্ষণ থাকে পাঞ্জাবি। এবার বাচ্চা ছেলেদের একছাটের পুরো পাঞ্জাবিতেই প্রিন্ট বেশি দেখা গেছে। এছাড়া ফুল, প্রকৃতি, ময়ূর প্রিন্টের ট্রেন্ড চলছে। গরমে শিশুদের প্রশান্তির কথা ভেবে গেঞ্জি কাপড়ের টপ, টি-শার্ট, প্যান্ট এনেছে বিভিন্ন ব্যান্ড। ছোট হাতার শার্ট, গেঞ্জির সঙ্গে ম্যাচ করা এক রঙের প্যান্টের পাশাপাশি আছে ব্লিচ করা ডেনিমের প্যান্ট। উৎসব ও আরামের কথা ভেবে এবার উজ্জ্বল ও হালকা দুই ধরনের পোশাকই দেখা গেছে। রঙের ক্ষেত্রে পোশাকে সাদা, পেস্টাল ঘরানার রং, সাদার সঙ্গে হলুদ, নীলের ব্যবহার অনেক বেশি।

ছেলেদের পোশাকে সব থেকে বেশি ব্যবহার হয়েছে সুতি, লিনেন, পাতলা খাদি ও গেঞ্জি কাপড়। অধিকাংশ পোষাকে ছোট ছোট ব্লক, ফুলের প্রিন্ট, গাড়ি, ছোট ছোট কার্টুন থাকছে। একরঙা পাঞ্জাবি ছাড়াও পাতলা খাদি কাপড়ে চেকের ব্যবহার হয়েছে। পাঞ্জাবিজুড়ে এমব্রয়ডারি ছাড়াও নতুনত্ব আনতে বুকের এক পাশে অল্প করে কাজ করা হয়েছে। এছাড়া ছোট্ট ছেলে সোনামনিদের জন্য মাকের্টে এসেছে উরাধুরা ‘ডিজে সেট’। পোশাকটির প্যান্টের পকেট ও শার্টের পকেটে লাইট ও মিউজিক বসানো। সাইজের ওপর নির্ভর করে এর দাম ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। এ ছাড়াও মোদি সেট, বাবাসেট, পাঞ্জাবি-পায়জামা-কটি, শার্ট-প্যান্ট, কুরতা, ফতুয়া পাওয়া যাচ্ছে নানা রঙের। এসব পোশাকের ডিজাইন ও কাট-ছাঁটের পাশাপাশি নামেও রয়েছে ভিন্নতা।

শিশুদের আরাম ও স্বস্তির কথা চিন্তা করেই ঈদের পোশাক নকশা করেছে উজ্জু উম্মু। এই ফ্যাশন হাউসের সহকারী ম্যানেজার হুর এ জান্নাত বলেন, ঈদ হলেও শিশুদের পোশাকে এবার হালকা কাপড় বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। উৎসবের আমেজ রাখতে গিøটার কাপড়ের ফ্রক রাখা হয়েছে। গেঞ্জি বা নিট কাপড় রাখা হয়েছে ফ্রকের নিচের অংশে। এতে শিশুর অস্বস্তি বোধ হবে না। মেয়েদের পোশাকে লেস, টারসেল, এমব্রয়ডারি, কারচুপি, সিকোয়েন্স, বাটিক, ব্লক, টাইডাই, স্ক্রিন প্রিন্টের ব্যবহার বরাবরের মতোই বেশি।

রাজধানীর ফরচুন মার্কেটের তৃতীয় তলার চৈতী স্টাইলের কর্ণধার পরিমল দেবনাথ বলেন, এবারের ঈদে মেয়ে বাচ্চাদের পুস্পা, কাঁচাবাদাম নামের ড্রেসগুলোর চাহিদা বেশি। এছাড়া সারারা-গারারার ডিজাইানে এসেছে নতুনত্ব। বেচাবিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত ২ বছর বেচা বিক্রি না থাকায় যে সংকটে পড়তে হয়েছে সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার মতো বিক্রি নেই। তাছাড়া কাপড়ের পাইকারি দামই অনেক বেশি। করোনার কারণে বেচা বিক্রি কম হওয়ার শংকা থেকে আমদানিকারকরা তুলনামূলক কম আমদানি করেছেন; এতে কাপড়ের সংকট দেখা দিয়েছে এবং দাম বেড়ে গেছে।

নিউ মার্কেটে ছেলেমেয়েকে নিয়ে ঈদের পোশাক কিনতে এসেছেন শিমু-আসাদ দম্পতি। কাপড়ের দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় দাম অনেক বেশি। এমনকি মনমতো ডিজাইনও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ২ দিন ঘুরে মেয়ের জন্য গারারা আর ছেলের জন্য শার্ট-প্যান্ট ও পাঞ্জাবি কিনছেন তারা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App